Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

অবশেষে মঞ্চস্থ হলো ‘বাড়িয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০২১

আপডেট: ০০:৫৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০২১

প্রিন্ট:

অবশেষে মঞ্চস্থ হলো ‘বাড়িয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’

ছবি- বহুমাত্রিক.কম

গাজীপুরের বাড়ীয়ায় ১৯৭১ সালের ১৪ মে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত গণহত্যার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত পরিবেশ থিয়েটার ‘বাড়িয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’ মঞ্চায়িত হয়ে গেল।

গেল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ঘটনাস্থল ভাওয়াল বাড়ীয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আলো-আধাঁরের মোহজালে আবিষ্ট কয়েক হাজার দর্শক নাটকটি উপভোগ করেন। নির্মম গণহত্যার এক ভয়বহ আবহ ও পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় এ নাটক মঞ্চায়িত হবার সময় পিনপতন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল।

জানা যায়, গত ২৬ নভেম্বর নাটকটি পরিবেশনের নির্ধারিত তারিখ অনিবার্য কারণে পরিবর্তন করা হয়। এর আগেও ১২ নভেম্বর ঘটনাস্থল বাড়িয়ায় নাটকটি পরিবেশনার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘বাড়িয়া গণহত্যা’ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সৈয়দ মোকছেদুল আলম (লিটন)-এর একটি গবেষণামূলক সরেজমিন প্রতিবেদন অবলম্বনে ‘বাড়িয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’ এর পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন মিজানুর রহমান। নাট্যনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন জুনায়েদ ইউসুফ।

একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানান, প্রস্তুতি পর্বে গত ২ অক্টোবর থেকে গাজীপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হওয়া মাসব্যাপী কর্মশালায় স্থানীয় নাট্যকর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা অংশ নিয়েছেন। নাটক নির্মাণে নেপথ্য কলাকুশলী হিসেবে কাজ করেছেন দেশের খ্যাতিমান কিছু নাট্যব্যক্তিত্ব।

অন্যান্য নেপথ্য কলাকুশলীরা হলেন- সহকারি নির্দেশক: শাহজাহান শোভন, পোশাক পরিকল্পনা: শ্রেয়শ্রী সরকার, মঞ্চ পরিকল্পনা ও মঞ্চ ব্যবস্থাপনা: খন্দকার রফিক, আলোক পরিকল্পনা: সাইফ মন্ডল, আবহ সংগীত পরিকল্পপনা ও নির্মাণ: মো. আহসান হাবীব (বিপু), নাট্যদ্রব্য সামগ্রী পরিকল্পনা ও নির্মাণ: মামুন।

মঞ্চশিল্পীবৃন্দ: মোঃ কাওছার আলম, মাকসুদা আক্তার শান্তা, মোঃ মাহমুদ হাসান শুভ, সুজয় বিশ্বাস, মহিমা আক্তার তমা, এবিএম সাইদুল হক, সৈয়দা নাজমা বেগম, অমল কৃষ্ণ রায়, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন শুভ, মোঃ আইয়ুব সরকার, ইমন সাহা, দৃষ্টি রানী, মোঃ আমিন মোল্লা, আসাদুল্লাহ, সাজেদা রোজী, মোঃ রবিউল আউয়াল (জিম), মোঃ সিফাতুল আউয়াল (হৃয়াদ), আশরাফুল আলম, মোঃ আজমির খাজা, মোঃ তাজওয়ার হোসাইন, শাকিলুর রহমান (সানি), মোসাঃ আনিকা আক্তার, আশরাফী ফরিদ, মোসাঃ রুবিনা আক্তার রুমি, মোঃ রাকিবুল ইসলাম, আবির, বদ্বীপ সরকার, এঞ্জেলীনা পিয়ানা রোজারিও (সংগীতা), তাহমিনা হক অন্তরা, হাসিমুন, শাহেদুল আলম, আহনাফ, শ্রাবণ, মোঃ ফরিদ, আরিফুল ইসলাম আরিফ, শাপলা আক্তার ও সৈয়দ মোকছেদুল আলম (লিটন)।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি, গাজীপুর এর পরিবেশনা ও জেলা প্রশাসন, গাজীপুর এর ব্যবস্থাপনায় পরিবেশিত নাটকটির পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সার্বিক সমন্বয় করেন জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত উম্মে হাবিবা ফারজানা ও বর্তমানে ছুটিতে থাকা জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকতা শারমীন জাহান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রযোজনা নির্মাণ ও মঞ্চায়ন নির্বাহী আলি আহমেদ মুকুল স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এরপর মুঠোফোনে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী তাঁর বক্তব্য দেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ নাটকের কোরিওগ্রাফার মাসরুর রহমার (ম্যাস) শেষ পর্যন্ত অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি আমেরিকায় অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে ফিরে আসার পর গত নভেম্বরের ২২ তারিখ থেকে মহড়ায় যোগ দেবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু অনাকাঙ্খিতভাবে এক দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় তিনি আর যোগ দিতে পারেননি।

বিভিন্ন হাত ঘুরে পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত হতেও সময় ক্ষেপণ হয়েছে এ নাটকের জন্য। ফলে চরিত্র ঘষামাজা ও পরিস্ফূটনের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় সময় পাওয়া গেছে কম। ভয়েস রেকর্ডিং, মিউজিক, পোশাক ও মঞ্চ নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতেও শেষ সময়ে প্রস্তুতির চাপ ছিল। নানা জটিলতায় বিশেষ করে পাপেট ব্যবহারের পরিকল্পনাও শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েছে।

নাট্যনির্দেশক জুনায়েদ ইউসুফ ও পাণ্ডুলিপিকার মিজানুর রহমান এর সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘বাড়ীয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’ আধুনিক থিয়েটারের আঙ্গিকে পরিবেশিত হয়েছে। গ্রিক থিয়েটারের আদল ও আবহ ছিল পরিবেশনায়। শেক্সপিয়ার দ্বারা প্রভাবিত ‘বাড়ীয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’ এর পাণ্ডুলিপিতে রাক্ষস, প্রেতাত্মা ইত্যাদি রূপক চরিত্রগুলো গ্রীক থিয়েটারের আবহ তৈরি করেছে।

জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা শারমীন জাহান জানান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে সারাদেশের ৬৪ জেলায় গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার নির্মাণ কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে গাজীপুরে নাটকটি মঞ্চায়ন হয়।

গবেষক ও প্রতিবেদক সৈয়দ মোকছেদুল আলম (লিটন) বলেন, এ নাটকের মূল বার্তা হচ্ছে ‘বাড়ীয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’ যেন আগামীর পথ চলায় আমাদের জন্য আলোর নিশানা হয়ে চিরভাস্বর থাকে। গাজীপুরের মিইয়ে পড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নাটকটি বিশেষ সাড়া ও প্রভাব ফেলতে পেরেছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

বাড়িয়া গণহত্যা: চাপা পড়া বর্বরতার শিউরে উঠা কাহিনী

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer