
ছবি: বহুমাত্রিক.কম
কোটা সংস্কারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন ও সরকারি কবি নজরুল কলেজের ১ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটা হাতে নিয়ে রায় সাহেব বাজার অতিক্রম করার সময় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীরা জানান, পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা এ গুলি বর্ষণ করেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়া ৪ জন হলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ ব্যচের মার্কেটিং বিভাগের এর শিক্ষার্থী অনিক, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস জামান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৬ ব্যাচের এইচ এম নাসিম ও কবি নজরুল কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী হাসিব। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ছুরিকাঘাতে তায়াফ নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী আহত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন।
গুলিবিদ্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ বলেন, চারজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ও ১ জনকে ছুরিকাঘাতে আহত অবস্থায় পেয়েছি। গুলিবিদ্ধ চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর ছুরিকাঘাতের একজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে কোতয়ালী জোনের এএসপি নজরুল বলেন, গুলির খবর শুনেছি। তবে আমরা এক গ্রুপই মিছিল করতে দেখেছি। অন্য গ্রুপ দেখিনি।
এর আগে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩ টা ১০ মিনিটের দিকে স্ট্যাম্প, লাঠি নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা মহানগর সূত্রাপুর ও বংশাল থানার ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। আগে থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা জাতীয় কবি নজরুল কলেজের সামনে অবস্থান নিয়ে ছিলো। এসময় সেখানে শতাধিক চেয়ার ভাংচুর করেন আন্দোলনকারীরা।
পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিকাল ৪ টা ৪৫ মিনিটে তাঁতিবাজার মোড়ে অবস্থান নেয়। পরে ৫ টা ২৫ এর দিকে তাঁতিবাজার মোড় ত্যাগ করে জবি ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যা ৭ টায় শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি শেষ করে চলে যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছি। তবে আমাদের প্রথমে তেড়ে মারতে আসে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আমাদেরকে গুলি করা হয়েছে। চারজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, একের পর এক শিক্ষার্থীদের উপর গুলি করা হচ্ছে। আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যাবে না। এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। প্রয়োজনে আরো রক্ত দিব।
এসময় শিক্ষার্থীরা- 'আন্দোলনে হামলা কেনো? প্রশাসন জবাব চাই', 'কোটা না মেধা, মেধা, মেধা', 'দালালী না রাজপথ, রাজপথ, রাজপথ’ ‘হই-হই রই-রই, ছাত্রলীগ গেলি কই,’ সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির উদ্দেশ্যে দুপুর ২ টা ৪৫ মিনিটের দিকে বাসে করে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়।