Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পূর্বের মজুরি ও করোনা ঝুঁকিতে চা শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবন

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৪২, ১৩ জুন ২০২০

আপডেট: ১৬:৩৭, ১৩ জুন ২০২০

প্রিন্ট:

পূর্বের মজুরি ও করোনা ঝুঁকিতে চা শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবন

ছবি- বহুমাত্রিক.কম

চা শ্রমিকদের দৈনিক সর্ব্বোচ্চ মজুরি ১০২ টাকা। প্রতি দু’বছর অন্তর শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তির মেয়াদ আঠারো মাস উত্তীর্ণ হয়েছে। এরমধ্যে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়েও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়া পূর্বের মজুরিতে কাজকর্মে তাদের জীবন ধারণ দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে।

জীবন ও জীবিকার তাগিদে দু:খ-কষ্টে পাঁচ, সাত সদস্যের শ্রমিক পরিবারের সংসার চালিয়ে যেতে হচ্ছে। আঠারো মাস সময় অতিবাহিত হলেও মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে বলে চা শ্রমিকরা অভিযোগ তুলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ এর সাথে সর্বশেষ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৮ সনের ২০ আগষ্ট। ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় পূর্বের চুক্তি স্বাক্ষরেরও দীর্ঘ ২০ মাস মেয়াদ উত্তীর্ণের পর। বর্তমান চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় ২০১৯ সনের জানুয়ারীতে। দু’পক্ষের মধ্যকার এ চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৮৫ টাকা থেকে ১৭ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০২ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়। এরপূর্বে ২০১৫ সনের ৬ অক্টোবর চা শ্রমিকদের মুজরি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে ৬৯ টাকা থেকে বেড়ে ৮৫ টাকায় উন্নীত হয়। সম্পাদিত ঐ চুক্তি মোতাবেক ২০১৫ সালে পহেলা জানুয়ারী থেকে কার্যকর করা হয়। এরপূর্বে চা বাগানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি কার্যকর ছিল না।

শ্রম আইন অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি প্রদানের দাবিতে ২০১৫ সনের ১০ জুন মৌলভীবাজার চা শ্রমিক সংঘের উদ্যোগে আলীনগর চা বাগানের রূপ নারায়ন কৈরীসহ পনের জন চা শ্রমিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরির বিষয়টি ফায়সালা হয়। ২০১৫ সনের ৬ অক্টোবর চা শ্রমিকদের মুজরি চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরির বিষয়টিও প্রদান করা হয়।
চা শ্রমিকরা জানান, বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও চা বাগানে শ্রমিকরা আতঙ্কিত। প্রতিটি বাগানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই তারা দলবদ্ধভাবে কাজ করছেন। দেশের বিভিন্ন চা বাগানে করোনা সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়ছে। কমলগঞ্জের সুনছড়া ও হবিগঞ্জের চন্ডি চা বাগানে করোনা আক্রান্ত হয়ে ২ জনের মৃত্যু এবং কমলগঞ্জের পাত্রখোলাসহ দেশের বিভিন্ন চা বাগানে এ পর্যন্ত ৫ জন আক্রান্ত রয়েছেন। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও মজুরি বৃদ্ধির চুক্তির আঠার মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে।

মৌলভীবাজার চা শ্রমিক সংঘের আহ্বায়ক রাজদেও কৈরী বলেন, একদিকে করোনা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করানো হলেও শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার বিষয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই। আঠার মাস সময় চলে গেল, এখনও আমরা চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেই। চা শ্রমিক রাম নারায়ন গৌঢ়, সুনীল কর, গীতা রবিদাস, পুলিন্তি রবিদাস সহ শ্রমিকরা বলেন, ‘চা বাগানে আমরা মাত্র ১০২ টাকা দৈনিক মজুরিতে পাঁচ, সাত জন সদস্য নিয়ে সংসার চালাই। সপ্তাহে এই মজুরি পাওয়ার পর কারেন্ট বিল, অনুষ্ঠান চাঁদা, ইউনিয়ন চাঁদা এসব কর্তনের পর পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচশ’ টাকা থাকে। এই টাকায় মাছ, শাকসবজি কিনে ঠিকমতো আমাদের একবেলাই খাবার চালানো যায় না। অথচ করোনা ভাইরাসের সময়েও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক রামভজন কৈরী দু:খ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই চা বাগানে শ্রমিকরা কাজ করছেন। কোন বাগানেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অথচ করোনাকালীন সময়ে সীমিত পরিসরে কাজ করানোর জন্যে আমরা দাবি জানালেও মালিক পক্ষ তা মানতে রাজি হননি। মজুরি চুক্তির বিষয়ে বিষয়ে আমরা লিখিতভাবে চিটি দিয়েছি। বাগানে কাজ চলছে ঠিকই, তবে করোনার অজুহাত দেখিয়ে মালিক পক্ষ চুক্তির বিষয়টি পিছিয়ে দিচ্ছেন। প্রয়োজনে ভার্চুয়াল মিটিং করেও চুক্তি স্বাক্ষর করা যেতে পারে। চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির চুক্তির দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে মালিক পক্ষের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট এর চেয়ারম্যান জি.এম. শিবলী মোবাইল ফোনে ইত্তেফাককে বলেন, বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer