বাঙালি জাতি ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, তাদের আত্মত্যাগের অতুলনীয় উদাহরণ সৃষ্টি করে একাত্তরের ২৬ মার্চ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। দীর্ঘ ২৩ বছর রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি এবং স্বপ্নদ্রষ্টা।
স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের সময়টায় অসংখ্যবার কারাবরণ করেছেন। অনবরত শত নির্যাতন, জেল-জুলুম সয়েছেন। তিনি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনেন। তাইতো বাংলাদেশের জন্মকথায় জড়িয়ে আছে সর্র্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও নেতৃত্ব। পাশাপাশি বাঙালি জাতির শৃঙ্খলা মোচনের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামোর অধীনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অভ্যুত্থান ঘটান বঙ্গবন্ধু। পরিণতিতে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। আমাদের মনে রাখা উচিত বাঙালি জাতীয়তাবাদ এক মহাকাব্য; আর সেই মহাকাব্যের নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতীয়তাবাদের অভ্যুত্থান ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর মতো সাহস আর কারোর মধ্যে দেখা দেখা যায়নি। ফাঁসির মঞ্চ থেকে তিনি একাধিকবার ফিরে এসেছেন, আপোস করেননি। সেই স্বাধীনতার শক্তি আর বাঙালি জাতীয়তাবোধের চেতনাকে লালন করে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি।
স্বদেশবিরোধী কুচক্রী মহলের কর্মকান্ড, দলতন্ত্র, সামরিকতন্ত্র ও সুশাসনের অভাব আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ও সোনার বাংলা গড়ায় বড় ধরনের বাধা। ৪৮ বছরে আমাদের যতটুকু এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে যে বৈরী অবস্থার সৃষ্টি হয় তা আমাদের উন্নয়নের পথকে বাধাগ্রস্থ করেছে। দূরে সরে গেছে অনেকখানি স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য থেকে। আর বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে। শেষ পর্যন্ত তা পারেনি। কখনো আবার সামরিক শাসন, কখনো স্বৈর শাসনে ভুগতে হয়েছে বাঙালিকে। এ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসেন তিনি। পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন দেখা গেছে আজকের প্রজন্মের মাঝেও। আজকের প্রজন্মকে বুঝতে হবে, ইতিহাসবিদরা দেশের জন্য স্বপ্ন দেখেন না। দেশের জন্য স্বপ্ন দেখেন রাজনীতিবিদগণ। এ স্বপ্নে আদর্শ থাকে, দর্শন থাকে। এ রকম স্বপ্ন যাঁরা দেখেন তাঁরাই স্বাপ্নিক। সেই স্বাপ্নিক রাজনীতিবিদগণই ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ইতিহাসবিদরা ইতিহাস সৃষ্টি করেন না, তারা কেবল ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন ও বিশ্লেষণ করেন। আজকের প্রজন্মকে আরও বুঝতে হবে, অবিসংবাদিত রাজনীতিবিদ হিসেবে বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশের জন্মকথায় যে কয়টি তারিখ উজ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে, একাত্তরের ২৬ মার্চ তার অন্যতম। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য বাঙালি জাতির গভীর আবেগজড়িত বিজয়গাথার নাম একাত্তর। একাত্তরে নয়মাস মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এবং এই একাত্তরে (১৯৭১) বাংলাদেশ পরাধীন থেকে স্বাধীন হয়েছে। একাত্তর হঠাৎ করে আসেনি। সুদীর্ঘ সময়ের আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বেয়ে এমন এক পর্যায়ে আসে একাত্তর, আর সেটাই হয় বাঙালির স্বপ্ন- স্বাধীনতার আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্ব। একাত্তরের ইতিহাস লিখতে গেলে যে পরিসরেই হোক না কেন, তার সঙ্গে লিখতে হবে তার পূর্ববর্তী ইতিহাসও। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির সাত মাসের মধ্যেই বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাঙালি সোচ্চার হয়েছে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার দাবির জন্য প্রথম যেসব ছাত্রনেতা গ্রেফতার হন, বঙ্গবন্ধু তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে এমনভাবে একাট্টা করেছিল যে, তার দু’বছরের মাথায় নির্বাচনে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুসলিম লীগকে রাজনীতিকভাবে এদেশ থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে পূর্ব বাংলার (পূর্ব পাকিস্তান) উন্নয়নে কাজ করার গণরায় পেলো। বাঙালিরা প্রাদেশিক সরকার গঠন করে। মাত্র ৫৬ দিনের মাথায় নির্বাচিত প্রাদেশিক সরকারকে অন্যায়ভাবে বাতিল করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। যুক্তফ্রন্ট সরকারকে কাজ করতে দেয়া হলো না।
সেই সাথে বাধাগ্রস্ত হয়েছে বাঙালির গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষা। ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণ-পরিষদে খসড়া শাসনতন্ত্র বিল পাস করা হয়। এ শাসনতস্ত্রে বাংলার (এ দেশের) দাবি উপেক্ষিত হওয়ার প্রতিবাদে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সদস্যগণ পরিষদ কক্ষ ত্যাগ করেন। এভাবে বাঙালির দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদে শেখ মুজিব তাঁর দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে নিজেকে একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সেনাপতি ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নেয়। এই সামরিক জান্তা গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। গায়ের জোরে দেশ চালাতে থাকেন। রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে আইয়ুব খান একরকম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বার্থান্বেষী রাজনীতিকদের নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করে। আইয়ুব খান প্রবর্তন করে এক নতুন পদ্ধতি ‘মৌলিক গণতন্ত্র’। অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃাষ্ট করা হলো।
এর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে ফুঁসে উঠতে থাকে। ১৯৬১ সালের শেষ দিকে সামরিক জান্তা আইয়ুব খান ও সামরিক আইনের বিরুদ্ধে বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রাম তীব্রতর হতে শুরু করে। বাঙালির ঐতিহ্য পরিপন্থী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান শিক্ষানীতি বাতিল করতে বাধ্য হয়। বাঙালির বিজয় হয় এই আন্দোলনে। গত শতকের যাট দশকের প্রথম পর্বে বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মূল সংগঠকরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৩ সালে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবনে তিনিই মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বাঙালি এ ক’বছর রাজনৈতিক ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে ওঠে।
বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের উৎসাহে তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় সশস্ত্র সংগ্রামের একটি বিপ্লবী প্রক্রিয়া, সেটি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা নিউক্লিয়াস বলে খ্যাত। এ নিউক্লিয়াসের দায়িত্বে ছিলেন সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ। এ সংগঠনের পরবর্তী নেতৃত্বে যুক্ত হন শেখ ফজলুল হক মনি ও তোফায়েল আহমদ। এ নিউক্লিয়াসের লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা। সারাদেশব্যাপী শিক্ষা আন্দোলনসহ সকল রাজনৈতিক আন্দোলনে নিউক্লিয়াসের ভূমিকা স্মরণযোগ্য। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বাঙালির নিরাপত্তা বিধানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।
স্বৈরাশাসক সামরিক জান্তা আইয়ূব খান এ দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে বাঙালিকে শৃঙ্খলিত করার ষড়যন্ত্রে যখন লিপ্ত তখন ১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্র“য়ারি লাহোরে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সম্মিলিত বিরোধী দলগুলোর এক কনভেনশনে স্বাধিকারের দাবি সংবলিত বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপন করেন। এদিকে ছয় দফা কর্মসূচি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ছয় দফা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ। এ জন্য বঙ্গবন্ধু ছয় দফা সম্পর্কে বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, “সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।”
ছয় দফার পক্ষে জনমত সংগঠিত করার লক্ষ্যে সারাদেশে পঁয়ত্রিশ দিনে বত্রিশটি জনসভায় বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেন। জনমত প্রবল হয়ে ওঠায় বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর নেমে আসে গ্রেফতার ও নির্মম নির্যাতন। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পরও ৬ দফার আন্দোলন চলতে থাকে। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন সারা বাংলায় সাধারণ ধর্মঘট (হরতাল) পালিত হয়। ৭ জুনের সাধারণ ধর্মঘটের সময় পুলিশের গুলিতে সরকারি হিসেব মতে ১০ জন বাঙালি নিহত হন। এরপর পাকিস্তান সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, তৎকালীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদ সর্বদাই বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ছায়াতলে নীরবে কাজ করেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিবেদিতপ্রাণ।
দলের সংগ্রামে ও সংকটে তাজউদ্দীন আহমদ হাল ধরেন। রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং (আগরতলা ষড়যন্ত্র বলে খ্যাত) মামলায় অভিযুক্তদের সাক্ষাৎকার ও প্রবন্ধ-নিবন্ধে লেখনীর মাধ্যমে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে স্বাধীনতাকামী ও মুক্তিকামী সেনা নেতৃত্ব তাদের সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা সশস্ত্র সংগ্রামের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবকে অনুরোধ করেন। এ ঘটনাটি পাকিস্তানি গোয়েন্দার কাছে ফাঁস হয়ে যায়। এর পরিণতিতে বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে কঠিন শাস্তি দেয়ার জন্য দায়ের করা হল আগরতলা মামলা ( পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দৃষ্টিতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা আর বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিতে ইসলামাবাদ ষড়যন্ত্র মামলা )।
আসামী করা হল বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ ও বাঙালি জাতীয়তাবোদের চেতনায় বিশ্বাসী অনেক দেশপ্রেমিককে। এই মামলাকে কেন্দ্র করে বাংলার জনমনে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। বাঙালি বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দেশের সর্বত্র শ্লোগান ওঠে ‘জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো।’ ১৯৬৯ সালে আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য দেশের ছাত্র সমাজ এগারো দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। শুরু হল ছয় দফার আন্দোলনের সঙ্গে এগারো দফার আন্দোলন। পাকিস্তান সরকার শেষ পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল নেতাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২২ ফেব্র“য়ারি বাঙালি জাতি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালির নয়নমণি শেখ মুজিবকে মুক্ত করে আনে। ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদের সভাপতিত্বে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক বিরাট সংবর্ধনা সভায় বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হলেন। বঙ্গবন্ধুর মুক্তিলাভের পর আন্দোলন-সংগ্রাম বেড়ে যায়। অন্যদিকে ১৯৬৯ সালে ২৫ মার্চ আইয়ুব খান পাকিস্তানের সেনাবহিনীর প্রধান জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নিল।
১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু এ দেশের নাম রাখেন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে পূর্ব বাংলার (পূর্ব পাকিস্তান) নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ। এদিকে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালির রাজনৈতিক আন্দোলন উত্তাল হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হল সাধারণ নির্বাচন। সে নির্বাচনে বাঙালির বিপুল ভোটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন হয়। এ বিজয় ছিল ছয় দফার রাজনৈতিক বিজয়। একদিকে বাঙালির বিজয় অন্যদিকে বাঙালির বিজয়কে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ও পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো চক্রান্ত করতে থাকে।
বাঙালির বিজয়কে তারা মেনে নিতে পারেনি। একাত্তরের ১ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে বাঙালি বিক্ষব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে এসে এর প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। উচ্চারিত হতে থাকে স্বাধীনতার শ্লোগান : ‘জয় বাংলা, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’
এলো ৭ মার্চ। এই দিনটি ছিল স্বাধীনতার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। একাত্তরের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো বাঙালির সামনে স্বাধীনতার ডাক দেন। বাঙালি সেদিন মন্ত্রমুগ্ধের মতো আবিষ্ট হয়েছিল রাজনৈতিক কবি বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রকণ্ঠে। আর তাঁর এই ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতিকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে। তাঁর ভাষণে যুদ্ধের প্রস্তুতির কথাও ছিল: “প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে...।” সেদিনের ভাষণে সুস্পষ্ট ঘোষণা ছিল : “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে যে দেশটি আজ প্রতিষ্ঠিত তার অবয়ব তৈরির কাজটি করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে।
১৯ মার্চ ১৯৭১। এটি বাঙালির জাতীয় চেতনার একটি অবিস্মরণীয় দিন। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাতদিন আগেই বীরপ্রসবিনী জয়দেবপুরের মাটিতে শুরু হয় সংগ্রামী শ্রমিক-ছাত্র-জনতার প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ। আর পাকিস্তানি হানাদারের বিরুদ্ধে এই জয়দেবপুরেই (বর্তমান গাজীপুর) প্রথমে গর্জে ওঠে বাঙালির অস্ত্র। জয়দেবপুরের সর্বদলীয় মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাহসী ভূমিকার কারণে সেদিন জয়দেবপুরের সর্বস্তরের জনতা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। ১৯ মার্চের পর থেকে সারাদেশে শ্লোগান ওঠে ‘জয়দেবপুরের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’
২৩ মার্চ ১৯৭১। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ এদিন পালন করেছে বাংলাদেশ দিবস হিসেবে। সেদিন পাকিস্তান দিবস হিসেবে পালনের কথা থাকলেও তা হয়নি। বরং সেদিন বাংলার ঘরে ঘরে বাংলাদেশের নতুন পতাকা উড়েছে। দু-একটি জায়গা ছাড়া কোথাও পাকিস্তানের পতাকা উড়তে দেখা যায়নি। আর এই দিনেই বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সূর্যোদয়ের পর তাঁর বাসভবনে (ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডস্থ) স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
এলো ২৫ মার্চ। বাঙালির ইতিহাসে কালরাত্রি। বাংলাদেশের জন্মকথা বলতে গেলে স্মরণ পড়ে যায় সেই ভয়াল কালরাত্রির পোড়া কাঠ, লাশ আর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্যের কথা; যে সূর্য উঠেছিল একাত্তরের ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে পাকিস্তানি সামরিক শাসক তার বর্বর বাহিনী নিয়ে অপারেশন সার্চ লাইট নামে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী রাতের আঁধারে প্রথমে ঢাকায় গণহত্যা শুরু করে। পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে একাত্তরের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার গোষণাটি দ্রুত তৎকালীন ইপিআর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়।
স্বাধীনতা ঘোষণা হওয়ার পরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি কমান্ডো দল বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার কারণেই আমাদের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষিতে লাখ লাখ বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। সে সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার প্রচেষ্টা চালায়। এ ঘোষণা বাঙালিকে নতুন করে বাঁচার মানসে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উসাহিত করে। গোটা দেশ রণাঙ্গনে পরিণত হয়। এদিকে ২৬ মার্চের দুপুর ২:৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র (আগ্রাবাদ) সর্বপ্রথম চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার বা মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণাটি সাংবিধানিক ভিত্তি লাভ করে।
একাত্তরের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বাঙালি মানসিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। মার্চের শেষের দিকে সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাঙালিদের সংগঠিত করার চেষ্টা করে। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। কৃষক-শ্রমিক ও ছাত্ররা এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের নিমিত্তে মুক্তিবাহিনীতে স্বতঃর্স্ফুতভাবে অংশগ্রহণ করতে থাকে। একদিকে বাঙালিরা প্রতিশোধ-স্পৃহায় উন্মত্ত, অন্যদিকে দেশকে শত্রুমুক্ত করার কামনায় উত্তপ্ত, ক্ষোভ-ক্রোধ ও আবেগে উত্তেজিত। দেশকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল মুক্তিকামী বাঙালি।
একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের আকাঙ্খা এই দেশের মানুষের মধ্যে জাগ্রত করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যে মানুষটি এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন, তিনি হলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ৩ এপ্রিল দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। বৈঠককালে তাজউদ্দীন মনস্থির করেন, যুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে সরকার গঠনের বিকল্প নেই, আর তা না হলে বহির্বিশ্বে সাহায্য-সহযোহিতা পাওয়া যাবে না। একাত্তরের ১০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলেন উপরাষ্ট্রপতি (বঙ্গবন্ধরু অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি) এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৭ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বাঙালিদের অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য মে মাসের মধ্যে তাদের নিজস্ব শক্তি বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশে তাদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা চালায়। মুক্তিযুদ্ধকে ব্যাপক ও জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এগারোটি সেক্টরে বিভক্ত করে। বাংলাদেশে গণহত্যা শুরুর পর ভারত ও রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেও য়ুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে উল্লেখ করে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পৃথিবীর প্রায় মুসলিম দেশ পাকিস্তানের পক্ষে থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানকে সহযোগিতা করে। কিন্তু ঐ দেশের জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বিভিন্ন উপায়ে সহযোগিতা করেছে।
একাত্তরের ১১ আগস্ট পাকিস্তানের কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে সামরিক আদালতে গোপনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শুরু হয়। বিচারের নামে চলে প্রহসন। এদিকে দেশে চলতে থাকে ছোট ছোট যুদ্ধ। আমাদের স্মরণে রাখতে হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাঙালিরাই প্রথম জাতি. যারা সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছে।
২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন। বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন। ইতিহাসের অন্যতম এ দিনটি না এলে জন্ম হতো না বাংলাদেশের। পৃথিবীর মানচিত্রে আলাদা করে জায়গা পেত না এ দেশটি। আজ বিনম্র শ্রদ্ধায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতাদের স্মরণের দিন। স্মৃতিচারণের দিন। স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান জানানোর দিন। আজকের প্রজন্মকে জানতে হবে বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে।
তাঁর আদর্শ ও চেতনাকে বুকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর ন্যায় স্বদেশকে ভালবাসতে হবে। আর দুই বছর অতিক্রান্ত হলেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে। আবার এর মধ্যে আমরা ক্রমশঃ হারাতে থাকবো একাত্তরের আগের বীর সংগ্রামী সন্তান ও একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। ইতোমধ্যে অনেক বীর সেনানীদের হারাতে হয়েছে। এখন বাংলাদেশে একাত্তরের পরে জন্ম নেওয়া নাগরিকই বেশি, যাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের অভিজ্ঞতা নেই। ধীরে ধীরে এ জাতিকে আন্দোলন-সংগ্রামের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা থেকে দূরে সরে যেতে হবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা আন্দোলনে-সংগ্রামের অকুতোভয় বীর সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাঁরা জীবিত রয়েছেন, তাঁদের সান্নিধ্যে বেশি বেশি করে আসতে হবে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বহুবছর নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার ভুলপাঠ হয়েছে। সে দিকে নজর রেখে বাংলাদেশের শেকড়ের সন্ধান করে জানতে হবে স্বাধীনতার ইতিহাসের ইতিকথা ও বিস্তারিত পটভূমি। জানতে হবে তাঁদের কথা, যাঁদের আন্দোলন-সংগ্রামের ফল হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে একদিন লাল-সবুজের পতাকা জয়যুক্ত হয়েছিল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে সকল অনাচার, সকল অপকর্ম ও সকল দুরাচারের বিরুদ্ধে। মেধা-মনন, সাহস ও সত্যনিষ্ঠায় নিজেকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
সেই সাথে সার্থক হবে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মদান আর অগণিত মানুষের অবর্ণনীয় ত্যাগ-তিতিক্ষা। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্মকথা ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই সার্থক হবে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সব আনুষ্ঠানিকতা।
লেখক: সংগঠক, মুজিব আদর্শ কেন্দ্র ও প্রতিষ্ঠাতা-আর্কাইভস ৭১, গাজীপুর।
ই-মেইল: [email protected]
বহুমাত্রিক.কম