Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

ফিরে এলেন এস.এম. সুলতান

অপূর্ব ধ্রুবচারী ও সূচি অপরাজিতা

প্রকাশিত: ০০:০৮, ২৪ মে ২০১৪

আপডেট: ১৯:৩০, ২৮ মে ২০১৪

প্রিন্ট:

ফিরে এলেন এস.এম. সুলতান

 

ঢাকা: বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশের শিল্পভূবন যাঁদের দানে ঋদ্ধ ও বিকশিত হয়েছে এস. এম. সুলতান তাদের মধ্যে অত্যন্ত উজ্জ্বল এক নাম। ভারতীয় উপমহাদেশ তো বটেই বিশ্বের শিল্প মানচিত্রেও তাঁর অবস্থান জোতিষ্কের মতোই। নিজেকে অন্তরালে রাখার অভিপ্রায় কালজয়ী এই চিত্রশিল্পীকে আরো অনেক বেশি মর্যাদার আসনে আসীন করে। যার ধারাবাহিকতা এখনো দৃশ্যমান।

এস. এম. সুলতানের শিল্পভাবনা ও সৌন্দর্যচেতনা এখনো কতখানি মোহিত করে সমকালীন শিল্পবোদ্ধা এবং শিল্পসমালোচকদের তা দেখা গেছে ‘দ্য ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কট’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে যাত্রা শুরু করে বিশেষায়িত এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

এই কেন্দ্রের উদ্যোক্তা-আয়োজকেরা যাত্রা শুরুর পর্যায়েই দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরেন এস. এম. সুলতানের বিরল সব চিত্রকর্ম। শিল্পসংগ্রাহক ও বেঙ্গল ফাউণ্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়েরের ব্যক্তিগত সংগ্রহে সযত্নে সংরক্ষিত ছিলো এসব অমূল্য চিত্রকর্ম।

DailyStar-Bengযৌথ ভাবে ‘পরাদৃষ্টি’ শিরোনামে এই প্রদর্শনী ও ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কট-এর উদ্বোধন করেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ এবং শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক এমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান, পদ্মভূষণ। এতে বক্তব্য রাখেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়ের। আরও বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী ও ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কট এর উপপরিচালক সাদিয়া রহমান।

উদ্বোধনী পর্বে অংশ নেন দেশের শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত সব মুখ, অংশ নেন নানা শ্রেণীপেশার শিল্পমোদী মানুষেরা। আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রদর্শনী প্রাঙ্গনজুড়ে আড্ডা জমান শিল্পপ্রেমীরা। তাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে জাতশিল্পী এস. এম. সুলতানের বিস্ময়কর সব চিত্রকর্ম ও সেসবের নান্দনিকতা। DailyStar-Bengl

পৃথক গ্যালারিতে বিস্তৃত এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে এস. এম. সুলতানের নির্বাচিত পেইন্টিং ও ড্রইং। প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মুদ্রিত হয়েছে বিশেষ ক্যটালগ । শুক্রবার শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর চলার সময়ে শিল্পীর শিল্পকর্মের নানা দিক বিশ্লেষণ করে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এত অংশ নেবেন দেশের পুরোধা শিল্পবোদ্ধারা। 

ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কট সম্পের্কে

দেশের শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সুপরিসর ভবনে প্রতিষ্ঠিত ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কট। ভবনের নিচতলার একাংশ ও দোতলায় অবস্থিত দুটো গ্যালারি স্পেসে বিস্তৃত এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি। সবমিলিয়ে প্রায় ২৫০০ বর্গফুট প্রদর্শনী এলাকার সামনে রয়েছে সুপ্রশস্ত লবি ও ক্যাফে। অত্যাধুনিক আলোক প্রক্ষেনের মাধ্যমে গ্যালারির দেয়াল ও অভ্যন্তর সুশোভিত করা হয়েছে, যাতে শিল্পকর্ম অবিকৃত রঙে ও গুণে দর্শকের সামনে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত চতুর্থ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এটি । 

আর্টস প্রিসিঙ্কট শিল্পাঙ্গনে নিয়মিত চিত্র-প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন চিত্রশিল্পী, শিল্পবোদ্ধা এবং সংস্কৃতি-অনুরাগীদের সঙ্গে সেতুবন্ধ সৃষ্টিতে আগ্রহী। শিল্প নিয়ে নিত্য-নতুন ধারণা এবং নতুন ধরনের কাজ অনুসন্ধান করাও হবে এ কেন্দ্রের বড় প্রচেষ্টা। সকল দর্সশনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে এই কেন্দ্র।

আর্টস প্রিসিঙ্কট বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সামগ্রিক লক্ষ্যকে প্রসারিত করবে এবং ফাউন্ডেশনের অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে। নবীন ও প্রতিভাধর শিল্পীদের নিরীক্ষাধর্মী কাজ প্রদর্শন ও কাজের বিষয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলাপ-আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে এর অন্যতম উদ্দেশ্য। সমাজের সঙ্গে নবীন শিল্পীদের কাজ ও তাঁদের চিন্তা-চেতনা সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্যে আর্টস প্রিসিঙ্কট বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেবে। ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কটের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন শিল্প ও সংস্কৃতির পরিচর্যা অব্যাহত রাখবে। Beng

আবারও জানি এস. এম. সুলতান সম্পর্কে

১৯২৩ সালের ১০ই আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ার এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন লাল মিয়া। তাঁর ইচ্ছে ছিল কলকাতা গিয়ে ছবি আঁকা শিখবেন। লাল মিয়ার প্রতিভায় চমৎকৃত হয়ে এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন। ১৯৩৮ সালে কলকাতায় চলে আসেন এবং ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের বাড়িতেই ওঠেন।

এ সময় তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য প্রখ্যাত শিল্পী ও সমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন। তাঁর নামান্তর ঘটে যায়। সোহরাওয়ার্দী লাল মিয়ার নতুন নামকরণ করেন শেখ মুহম্মদ সুলতান। সুলতানের শিক্ষার জন্য তিনি তাঁর গ্রন্থাগার উন্মুক্ত করে দেন এবং বিভিন্নভাবে তাঁকে সাহায্য করেন। ১৯৪১ সালে শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সহযোগিতায় তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। তিন বছর আর্ট স্কুলে পড়ার পর তিনি ফ্রিল্যান্স শিল্পীর জীবন বেছে নেন।

১৯৪৩ সালে সুলতান খাকসার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় বেরিয়ে পড়েন উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে। শিল্পী হিসেবে ততদিনে তিনি কিছুটা পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তখনকার আঁকা তাঁর ছবির নমুনা, এমনকি ফটোগ্রাফও এখন আর নেই। তবে সে সময় তিনি নৈসর্গিক দৃশ্য ও প্রতিকৃতির ছবি বেশি আঁকতেন। কাশ্মিরে কিছুদিন থেকে প্রচুর ছবি এঁকেছিলেন। সিমলায় ১৯৪৬ সালে তাঁর আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়।

দেশ বিভাগের পর কিছুদিনের জন্য সুলতান দেশে ফেরেন। ১৯৫০ সালে তিনি আমেরিকায় চিত্রশিল্পীদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন এবং নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো, বস্টন ও পরে লন্ডনে ভিক্টোরিয়া এমব্যাঙ্কমেন্ট গার্ডেনে পিকাসো, দালি, ব্রাক, ক্লি-র সঙ্গে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়। ১৯৫১ সালে করাচি চলে যান। সেখানে পারসি স্কুলে দু’বছর শিক্ষকতা করেন। সে সময় চুঘতাই ও শাকের আলীসহ অন্য শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।

সাধারণ মানুষের কাছে লাল মিয়া হিসেবে পরিচিত সুলতান ১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন এবং ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত শিল্পরসিকদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যান। মধ্য সত্তরে তাঁর কিছু ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ী তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় আঁকা তাঁর কিছু ছবি দিয়ে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। মূলত এ-প্রদর্শনীটিই তাঁকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়। এ ছবিগুলোই তাকে নিন্মবর্গীয় মানুষের প্রতিনিধি ও তাদের নন্দনচিন্তার রূপকার হিসেবে পরিচিত করে।

অবয়ব বা আকৃতিধর্মিতাই তাঁর কাজের প্রধান দিক। তিনি আধুনিক ও নিরাবয়ব শিল্পের চর্চা করেননি। তাঁর আধুনিকতা ছিল জীবনের অবিনাশীবোধ ও শিকড়ের শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করা। সুলতান কাঠকয়লা, কালি ও তুলি, তেলরং ও জলরঙে ছবি এঁকেছেন। ব্যবহার করেছেন সাধারণ কাগজ, সাধারণ রং ও চটের ক্যানভাস। এজন্যে তাঁর অনেক ছবিই নষ্ট হয়ে যায়। সেদিকেও তাঁর কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না।

১৯৮২ সালে একুশে পদক ও ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। সুলতান ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর রেসিডেন্ট আর্টিস্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা পান ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৭ সালে ঢাকার জার্মান কালচারাল ইনস্টিটিউটে সুলতানের একটি প্রদর্শনী হয়। ১৯৮৯ সালে বিশিষ্ট চিত্রনির্মাতা তারেক মাসুদ তাঁকে নিয়ে আদম সুরত শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। আশির দশকের শেষ দিকে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। ১৯৯৪ সালে ঢাকার গ্যালারি টোন-এ তাঁর শেষ প্রদর্শনীটি হয়। সে বছর আগস্টে ব্যাপক আয়োজন করে গ্রামের বাড়িতে তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়। এর পরপরই ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
(সূত্র : সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বাংলাপিডিয়া)

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সম্পর্কে

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন গত ২৪ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে শিল্প ও সংস্কৃতির পরিচর্যা করে আসছে। ফাউন্ডেশনের কাজ বহুমাত্রিক এবং কর্মপরিধি শিল্পের প্রায় সকল শাখায় ব্যাপ্ত। সংগীত, চিত্রকলা, থিয়েটার ও বই প্রকাশনা ছাড়াও কারুশিল্প সংরক্ষণ ও চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহিত করায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন ধারাবাহিক কার্যক্রম রয়েছে। DailyStar

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, এস. এম. সুলতান ও সংগ্রাহক আবুল খায়ের

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে শিল্পী সুলতানের অন্তরঙ্গ পরিচয় ছিল। ১৯৮৭ সালে জার্মান কালচারাল ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এস. এম. সুলতানের প্রদর্শনীর ক্যাটালগে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক লিখেছিলেন :

‘জসীমউদ্দীন, জয়নুল আবেদিন, এস. এম. সুলতান এদের শিল্পকর্ম একান্তই বাংলাদেশের। একান্তই বাংলাদেশের জলহাওয়াতেই এদের শিল্পকর্মের পরিপুষ্টি। ... অন্য কোনো জমিনে চাষ করে কেউ ফসলের এই রং, এই রস ফুটিয়ে তুলতে পারতো কিনা সন্দেহ। তার একটা কারণ এই হতে পারে যে, এদের মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি সবই বাঙালির-অবশ্যই বলতে হবে অসাধারণ বাঙালির।... সুলতানের ক্ষেত্রে বিষয় এবং বিষয়ী, এ দুয়ের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। সুলতানের সংজ্ঞাবহির্ভূত জীবনপ্রণালি থেকেই এই সব অপূর্ব চিত্রমালা সৃজিত হয়েছে।’

বিশিষ্ট চিন্তাবিদ আহমদ ছফা তাঁর বিভিন্ন লেখায় গুরু অধ্যাপক রাজ্জাক এবং সুলতানকে একই সূত্রে গেঁথেছেন এবং এই দুই জ্ঞানসাধক যে কতভাবে তাঁর মননকে প্রভাবিত করেছেন তা বহুবার ব্যাখ্যা করেছেন।

সুলতানকে নিয়ে আদম সুরত চলচ্চিত্র নির্মাণের সময়, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ভ্রাতুষ্পুত্র আবুল খায়েরের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। সেখানে আবুল খায়ের বলেন : ‘...[সুলতান] কিন্তু খুব বড়মাপের মানুষ ছিলেন। তিনি কেবল একজন মহান শিল্পীই নন, একজন মহান মানুষও। ছফাভাই, আমি এবং সুলতান বহু বছর একসঙ্গে আড্ডা মেরেছি। সেই বাহাত্তর থেকে ঊনসত্তর পর্যন্ত। আমাদের ইউনিভার্সিটির [ফুলার রোডের] বাসায়, পরে ধানমন্ডির [যেখানে এখন] বেঙ্গল গ্যালারি, সেই বাসায়। ...তখন সুলতানভাই প্রায়ই আসতেন। ছফাভাই আসতেন। ...দুজনই খুব উঁচুস্বরে কথা বলতেন। [ছফাভাই] তো রসিক। ...মাঝেমধ্যে খুব মূল্যবান কথা বলতেন। ওনার কাজকর্মও ছিল সুলতানভাইয়ের আঙ্গিকের...। তিনি সাধারণ মানুষকে নিয়ে ভাবতেন। ...রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মেলামেশা করেছেন সুলতান সাহেব। ...তাঁর সঙ্গে শত শত ঘণ্টা কাটিয়েছেন। ওই প্রজন্মের তিনিই নাকি একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সুলতান সাহেবকে বুঝতে পেরেছিলেন। আহমদ ছফার ক্ষেত্রেও তাই। এই দুজনের জন্য তার কাছে ছিল আলাদা একটা জায়গা। মিশুক [মুনির] আর তারেক [মাসুদ] বহুবার আমাদের বাসায় এসেছে... কথা হয়েছে আদম সুরত ছবি নিয়ে। ... একটা ইন্টারভিউ ওরা নিয়েছিল সুলতান ভাইয়ের আমাদের বারান্দায়। রাজ্জাক সাহেব যে-কামরায় থাকতেন, ঠিক তার ওপরতলায়।’

এভাবেই এস. এম. সুলতানের সঙ্গে আবুল খায়েরের সখ্য গড়ে ওঠে এবং একজন ভক্ত হিসেবে তিনি ১৯৭৫ সাল থেকে সুলতানের ছবি সংগ্রহ করা আরম্ভ করেন। তাঁকে মাঝেমধ্যেই সুলতানের পাশে দাঁড়াতে হয়েছে। প্রথমবার রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে আর পরের বার নিজেই সুলতানকে নিয়ে তাঁর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। শেষ জীবনে সুলতান নানাভাবে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েন কিন্তু শিশুস্বর্গ ও আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। একপর্যায়ে আবুল খায়েরের কাছ থেকে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে তিনি আর্ট কলেজের জন্য মাছিমদিয়ায় জমি ক্রয় করেন।

এস. এম. সুলতান-বেঙ্গল আর্ট কলেজ, মাছিমদিয়া, নড়াইল

সুলতান তাঁর জীবদ্দশায় যে জমি কিনেছিলেন তার সঙ্গে আরো কিছু জমি সংযোজন করে, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও নড়াইল জনপ্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এস. এম. সুলতান-বেঙ্গল আর্ট কলেজ। কলেজ পরিচালনার দায়ভার বেঙ্গল ফাউন্ডেশন গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো কলেজে ছাত্র ভর্তি চলছে। এছাড়া বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এস. এম. সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশনকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিয়মিত সহায়তা প্রদান করা হয়।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer