ছবি : রিভারাইন পিপল
ঢাকা: নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদ-নদীর সংকট মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে সমাধান খুঁজতে আরও বেশি করে তৃণমূলের মতামত এবং অভিজ্ঞতা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার ‘বাংলাদেশ রিভার ফোরাম-২০১৮’: ‘লিসেনিং টু দ্য গ্রাসরুটস’ শীর্ষক আয়োজনে এই তাগিদ আসে।
রাজধানীর পল্লী-কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে দিনব্যাপি এই আয়োজনে অংশ নেন দেশজুড়ে নদ-নদীর সুরক্ষায় কাজ করা ৮০টির বেশি সংগঠনের প্রতিনিধিরা। দেশের ৬৩টি নদী অববাহিকায় গড়ে উঠা এসব নাগরিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা সংকটাপন্ন নদ-নদীর সুরক্ষায় তাদের দীর্ঘ দিনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এই আয়োজনে।
নদী আন্দোলনকর্মীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা গ্রহণ করে বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে নদ-নদীর সীমাহীন সংকটের সমাধানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে নয়, কার্যকর কৌশল প্রণয়নে যেতে হবে তৃণমূলেই।
নদীবিষয়ক নাগরিক সংগঠন রিভারাইন পিপল এর আয়োজনে ‘বাংলাদেশ রিভার ফোরাম-২০১৮’র সহ-আয়োজক ছিল জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, পিকেএসএফ এবং সুইডিশ সরকারের অর্থায়নে দক্ষিণ এশীয় আন্তঃসীমান্ত নদীবিষয়ক প্রকল্প ট্রোসার সহযোগী সংস্থা অক্সফাম ইন বাংলাদেশ, সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্সেস স্টাডিজ (সিএনআরএস) ও গণউন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে)।
উদ্বোধনী পর্বে সভাপতির বক্তব্যে পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, ‘নদী দখল হচ্ছে, জলাশয় দখল হচ্ছে ও ব্যাংক দখল হচ্ছে। আমাদের এসমস্ত দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হতে হবে। দূষণ সাধারণ মানুষ করে না। তাই নদী রক্ষার্থে জনআন্দোলন জোরদার করা জরুরি।’
‘মনে রাখতে হবে, পানি বলতে শুধু নদী বোঝায় না। হাওর-বাওড়-সমুদ্র নিয়েও ভাবতে হবে। চর, হাওর ও নদী আন্দোলনকে একসঙ্গে করতে পারি কিনা ভাবতে হবে। তাহলেই সার্বিক সমস্যা উঠে আসবে,’-যোগ করেন বরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন-এর চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের নদী আজ সমস্যা সংকুল, তাই আমাদের জীবনও আজ সমস্যা সংকূল। নদীর সাথে আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা জড়িত।বুড়িগঙ্গা দখল হয়ে গেছে। ধলেশ্বরী দখল হচ্ছে। তুরাগের উপর তৈরী হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল সেন্টার। এটা কিভাবে হয়? আপনারা স্থানীয় প্রশাসনকে চাপ দিন”
তিনি বলেন, ‘আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি পরিকল্পনা-প্রতিবেদন প্রণয়নে এসি রুমে নয়, তৃণমূলে যেতে হবে। নদী নিয়ে পরিকল্পনা-গবেষণ না করে প্রকল্প নেওয়া যাবে না। ’
রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন স্থানীয় পর্যায়ে নদী আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কেকে বলেন, ‘নদী সুরক্ষার ক্ষেত্রে ধারণা ও সমাধান সব সময় ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়। মাঠ পর্যায়ের নদী কর্মীদের কথা শোনা হয় না। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে যারা নদির রক্ষায় প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে। যারা সমস্ত চাপ-তাপ সহ্য করছে তাদের আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাই। আমরা এই পার্থক্য দূর করতে চাই। আমাদের এই মিছিল বড় করতে চাই।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অক্সফামের কর্মসূচি পরিচালক এমবি আখতার বলেন, ‘আমাদের নদীর জীববৈচিত্র বাঁচাতে হবে। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার দিকে জোর দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নারী অধিকার নেত্রী খুশি কবীর, ধরলা নদী সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক এস এম আব্রাহাম লিঙ্কন ও পিকেএসএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. জসিমউদ্দিন।
দিনব্যাপী এই আয়োজনে তিনটি কারিগরি অধিবেশনে আলোচনা হয়। সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল করিম। রিভারাইন পিপলের সভাপতি ড. মাসুদ পারভেজ রানার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল মতিন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ।
বহুমাত্রিক.কম