Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

নতুন স্থানে চা বাগানের সম্ভবনা

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ২১:০০, ২ মার্চ ২০১৯

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

নতুন স্থানে চা বাগানের সম্ভবনা

ঢাকা : চা একটি আন্তর্জাতিক পণ্য। চা গাছের বৈজ্ঞানিক Camellia sinensis। চায়ের বেশ কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। কালো চা, সাদা চা, সবুজ চা, ওলং চা- ইত্যাদি বেশ কিছু নামে পরিচিত চা পাতা।

এটি বাগান আকারে আবাদ হয়ে থাকে। একটি বাগানে চা উৎপাদনের সবধরনের কাজই সম্পন্ন করা হয়ে থাকে বিধায় তাকে ‘টি এস্টেট’ নামে ডাকা হয়। তবে এখন বাগানের বাইরে এককভাবে কৃষক পর্যায়েও কোন কোন স্থানে চায়ের আবাদ হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের পঞ্চগড় এলাকায় শুধু নতুন সৃজন করা চা বাগান নয় বরং ছোট ছোট অসংখ্য খামারিগণ চা আবাদে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন। সেসব এলকায় অন্য ফসলের চেয়ে চা চাষ করেই কৃষক বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

চা বাঙালির জন্য একটি বিশেষায়িত সামাজিক পানীয়। এক অর্থে এটি একটি নেশাজাতীয় পানীয়। কারণ চা পানে শরীরে তেমন কোন পুষ্টি সংযোজিত না হলেও এর সামাজিক গুরুত্ব অনেক বেশি। জনশ্রুতি থেকে জানা যায় ব্রিটিশ শাসনামলে এক সময় চা বাঙালিকে ফ্রি খাওয়ানো হতো। ফ্রি খাওয়ানোর পেছনে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যক উদ্দেশ্য ছিল যা পরবর্তীতে বাঙালিকে আর কেউ বুঝিয়ে দিতে হয়নি। তবে এখন চা বাঙালির নিত্য-নৈমিত্তিক কালচারে ও অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কী অফিসে, কী অতিথি আপ্যায়নে কমপক্ষে এক পেয়ালা চায়ের বিকল্প কিংবা জুড়ি নেই। পুষ্টি থাকুক বা না থাকুক, ক্ষুধা নিবারণ হোক বা না হোক এক কাপ চায়ে শরীর-মনের ক্লান্তি দূর হয়ে তা চাঙ্গা করে তোলে। তবে চায়ের মধ্যে ক্যাফেইন নামের একপ্রকার নেশাজাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় তার দ্বারাই এমনটি হয়ে থাকে। তাছাড়া কিছু মাইনর পুষ্টি উপাদানও থাকে যা শরীরে কিছু কাজ করে থাকে।

অথচ একসময় বাংলাদেশে কোন চা বাগান ছিলনা। ব্রিটিশ বেনিয়ারা প্রথমে বাংলাদেশে কিছু কিছু এলাকায় চা বাগান সৃজন শুরু করেন। ইতিহাস বলে ব্রিটিশ শাসনের সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক ১৮৫৬ সালের দিকে তৎকালীন সিলেটের মালনীছড়ায় প্রথম চা বাগান সৃজন করে। এরপর চট্টগ্রাম এবং সিলেটের অন্যান্য স্থানে একে একে চা বাগান স্থাপন করতে থাকে। এখন দেশে ছোট বড় মিলিয়ে ১৬৬টি বাণিজ্যিক চা বাগান রয়েছে। আগেই উল্লেখ করেছি, একটি বড় চা বাগানে বাগান সৃজনের জন্য চারা উৎপাদনের নার্সারি থেকে শুরু করে বাগান স্থাপন এবং সেই বাগান থেকে কাঁচা চা পাতা উত্তোলন করে সেখান থেকে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদনের সকল ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে।
সেসব বাগানে অনেক প্রযুক্তিবিদ, ব্যবস্থাপনা কর্মী ও চা শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পায়।

চা শ্রমিকদের বেশিরভাগই নারী (৭৫%)। অর্থাৎ নারী পুরুষের অনুপাত ৪:১। তাতে একদিকে যেমন নারী পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় অপরদিকে তেমনি রপ্তাানিমুখী শিল্পের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের্ প্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। ব্রিটিশরা এক সময় এ শিল্পের গোড়াপত্তন করলেও এখন তা অনেকটাই দেশীয় ব্যবসায়ীদের দখলে। কাজেই এটি এখন একটি লাভজনক শিল্প হওয়ায় দিনে দিনে নতুন নতুন সম্ভাব্য স্থানে তার চাষের আওতা বৃদ্ধির উপর জোড় দেওয়া হচ্ছে। এম এম ইস্পাহানী লিমিটেড, কাজী এন্ড কাজী, দ্য ট্রান্সকম গ্রুপ, জেমস ফিনলে বাংলাদেশ, দ্য ওরিয়ন গ্রুপ, দ্য আবুল খায়ের গ্রুপ, ডানকানস ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেড ইত্যাদি দেশি বিদেশি কোম্পানি এখন বাংলাদেশে চা উৎপাদনের সাথে জড়িত।

বর্তমানে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলেই এর ব্যাপ্তি বেশি। কারণ দেখা গেছে বৃহত্তর সিলেটের সিলেট জেলা, হবিগঞ্জ জেলা, মৌলভীবাজার জেলা, অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলা, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলাতে অল্প কয়েকটি করে চা বাগান রয়েছে। সাম্প্রতিককালে অল্প পরিমাণে চা চাষ শুরু হয়েছে পঞ্চগড় জেলায়। পাশাপাশি আরো কয়েকটি জেলায় একই আবহাওয়া বিরাজ করায় ভারতের সীমান্তবর্তী ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী অঞ্চলে চা বাগান স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে দেশের মধ্যাঞ্চলে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় অর্থাৎ শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণায় গাড়ো পাহারের পাদদেশে চা আবাদ সম্প্রসারণ সম্ভব। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের দ্বারা পরীক্ষামূলকভাবে এসব এলাকায় চা আবাদের সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

আমরা জানি চা আবাদের জন্য উঁচু ও বেলেদোঁয়াশ প্রকৃতির জমি প্রয়োজন। আবার সেখানে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হওয়া প্রয়োজন। তবে শর্ত থাকে যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও সেখানে পানি আটকাতে পারবেনা। ছোট ছোট পাহাড় ও টিলা আছে এমন স্থানই তার জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠে। কাজেই এসব বিবেচনাতেই উপরে উল্লেখিত স্থানসমূহে চা আবাদ করা হয়ে থাকে। দেখা যাচ্ছে এমন আবহাওয়া বিরাজ করে দেশে আরো অনেক স্থান রয়েছে যেখানে চা বাগান স্থাপন করা যেতে পারে। কারণ চা বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য। চা চাষ ও উৎপাদনে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম।

এ খাতে দেশে বর্তমানে ৪ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। দেশের যেসব স্থানে অন্য কোন ফসল ফলানো সম্ভব নয়। প্রকারান্তরে পাহাড়ি এসব স্থান অনাবাদি থাকে এবং যেখানে অন্য কোন ফসল ফলানো সম্ভব নয়, সেখানেই চায়ের আবাদ হয়। তাই নতুন নতুন স্থানে এর আবাদ বাড়াতে পারলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। কাজেই আগামীতে সম্ভাব্য আরো নতুন নতুন স্থানে চায়ের আবাদ বাড়াতে হবে। তবে সেক্ষত্রে সরকারের চা বোর্ড, চা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি বিভাগের যৌথ সহযোগিতা প্রয়োজন। আর দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকার তা করছে এবং করবে।

লেখক: কৃষিবিদ ও রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer