Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

প্রকাশিত: ০২:২৬, ১৭ জুন ২০১৬

আপডেট: ০২:২৭, ১৭ জুন ২০১৬

প্রিন্ট:

ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এই নামে একটি বই লিখেছিলেন। আজকের লেখাটির জন্য আমি তার বইয়ের নামটি ব্যবহার করছি, আমার মনে হয় আমি যে কথাগুলো বলতে চাইছি তার জন্য এর থেকে বেশি উপযুক্ত আর কোন নাম হতে পারে না। দেশের পাবলিক পরীক্ষার সময় আমি কিছু বাড়তি ই-মেইল পাই। ছেলেমেয়েরা তখন পরীক্ষার ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নগুলো আমার কাছে পাঠায়। আমি তখন তাদের লিখি পরীক্ষা হওয়ার পর যদি দেখা যায় আসলেই প্রশ্নগুলো মিলে গেছে, তাহলে তারা যেন সত্যিকারের প্রশ্নগুলোও স্ক্যান করে আমাকে পাঠায়। আমি নিয়মিতভাবে তাদের উত্তর পাই- গত দুটো পরীক্ষায় ১০০ ভাগ মিল।

পরীক্ষার ঘণ্টাখানেক আগে সব প্রশ্নই ফাঁস হয়ে যায় তখন ছেলেমেয়েরা তার উত্তর রেডি করে পরীক্ষা দিতে যায়। কোন্ কোন্ কলেজে এই ঘটনাগুলো ঘটে আমি সেটা জানি, চেষ্টা করলে সেই কলেজের কোন্ শিক্ষক এটা করেন মনে হয় সেটাও আমি বের করে ফেলতে পারব কিন্তু এখন পর্যন্ত এর জন্য কোন শিক্ষক, ছাত্র বা অভিভাবককে গ্রেফতার করেছে বলে আমি শুনিনি!

কেন কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? উত্তরটি আমার জানা নেই, অনুমান করতে পারি যে ধরে নেয়া হচ্ছে এটা এখন এই দেশে আর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। যে কাজটি অপরাধ নয় তার জন্য কেন একজন ‘সম্মানিত’ শিক্ষককে গ্রেফতার করা হবে?

সত্যি কথা বলতে কী শুধু পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁস করা যে অপরাধ নয় তা নয়, কয়েকদিন আগে প্রশ্ন ফাঁস করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে সেটা প্রকাশ করে দেয়াও কিন্তু অপরাধ নয়। পরীক্ষার কয়েকদিন আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে সবার কাছে সেটা চলে যাচ্ছে কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চোখে সেটি কখনও ধরা পড়ছে না। আমার এক ছাত্র সেটা নিয়ে দীর্ঘদিন ঘ্যান ঘ্যান করার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে ‘বিভ্রান্তি’ না ছড়ানোর জন্য উপদেশ দেয়া হয়েছে। সত্য কথা যদি বিভ্রান্তি হয় তাহলে আমরা এখন কি করব?

কেউ যেন মনে না করে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন পরীক্ষা দেয়ার কারণে ছেলেমেয়েরা ঠিকভাবে লেখাপড়া শিখছে না সেটাই আমার দুশ্চিন্তার কারণ। সেটি মোটেই আমার দুশ্চিন্তার কারণ নয়, আগ্রহ থাকলে একজন কত দ্রুত কত কিছু শিখে নিতে পারে সেটি আমার থেকে কেউ ভাল করে জানে না।

আমার কাজই হচ্ছে ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দেয়া, আর কিছু দিতে পারি না বলে আমি আমার কাছাকাছি ছেলেমেয়েদের শুধু উৎসাহ দিয়ে দেখেছি তারা ম্যাজিক করে ফেলতে পারে। কাজেই কে কতটুকু শিখছে সেটা নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা নেই, যখন যেটা প্রয়োজন তখন তারা সেটা শিখে নেবে। আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে ছেলেমেয়েদের নৈতিকতা নিয়ে- সেটা হচ্ছে আসল ক্যান্সার।

যদি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ব্যাপারটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকার করে নিত, তাহলে এটা বন্ধ করা তাদের জন্য একটা বাধ্যতামূলক কাজ হতো। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় কখনও এটি স্বীকার করেনি, কাজেই তাদের চোখে এই ধরনের কোন ঘটনা দেশে ঘটেনি। যে ঘটনা ঘটেনি সেটা তো আর অপরাধ হতে পারে না, তাই বাংলাদেশে প্রশ্ন ফাঁস কোন অপরাধ নয়। যারা প্রশ্ন ফাঁস করছে তারা নিশ্চিন্ত নিরাপদ ‘ইনডেমনিটি’ ভোগ করছে- তাদের ধরবে কে?

কিন্তু যে সর্বনাশ হওয়ার কথা সেটা কিন্তু হয়ে যাচ্ছে- ক্যান্সার ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। যে ছেলে বা মেয়েটির অন্যায় করার কথা নয় তাদের অন্যায় করার জন্য প্ররোচনা দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা অন্যায় করতে শিখছে। একবার অন্যায় করা শিখে যাওয়ার পর তারা নিশ্চয়ই এক ধরনের অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করে, সেটা ঢাকার জন্য তখন তারা অন্যায়ের সপক্ষে জোর গলায় কথা বলতে শুরু করে। এ রকম একজনের আমার কাছে পাঠানো ই-মেইলের একটা উদাহরণ দেই: ‘স্যার আমার নাম ‘অমুক’ (ছেলেটি নিজের নাম লিখেছে- আজকাল গোপনে অন্যায় করতে হয় না। নিজের নাম ঘোষণা করে অন্যায়ের বর্ণনা দেয়া যায়। আমি নামটি প্রকাশ করলাম না।) ‘আমি স্যার বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজের একজন ছাত্র।’ (ছেলেটি নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামটি লিখতেও সঙ্কোচ বোধ করেনি, তাই আমিও সেটি প্রকাশ করতে সঙ্কোচ বোধ করছি না।) ... ‘স্যার আমি আপনাকে এখন বিষয়টা ভাল করে আপনার কাছে বিশ্লেষণ করছি। স্যার আমরা প্রশ্ন আউট করে পরীক্ষা দেই না। প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দেই।’ (প্রশ্ন ফাঁসের অভিশাপের এর থেকে সুন্দর বিশ্লেষণ মনে হয় আর কেউ দিতে পারবে না। ছেলেটি পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছে সে প্রশ্ন ফাঁসের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নয় কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের বেনিফিসিয়ারি। বিষয়টি বেআইনী কিংবা অনৈতিক কী না সেটি নিয়ে কারও কোন দুশ্চিন্তা নেই। প্রশ্নটা কোথায় পায় সেটিও লেখা নেই- থাকলে বিশ্লেষণটি আরও পূর্ণাঙ্গ হতো। কিংবা কে জানে প্রশ্নগুলো হয়ত এত ব্যাপকভাবে পাওয়া যায় এই প্রশ্নটা হয়ত অবান্তর।)... ‘কারণটা স্যার স্বাভাবিক ভাল প্রতিষ্ঠানে ধঢ়ঢ়ষু করতে হলে ভাল গ্রেড লাগে’ (কেন ফাঁস করা প্রশ্ন দেখে পরীক্ষা দেয় তার উত্তরটি খুব সহজ সরল।) ... ‘তাই পরীক্ষার ১ ঘণ্টা আগে বের হওয়া প্রশ্ন আমরা সলভ করে যেতাম হলে।’ (পরীক্ষার ১ ঘণ্টা আগে প্রশ্ন বের হওয়া এখন অতি নিয়মিত একটা ঘটনা। সূর্য ওঠার মতো একটা ব্যাপার। এটি ঘটবেই।) ‘আমরা রসায়ন প্রথম পত্র পরীক্ষার সময় একটা রেস্টুরেন্টে বসে প্রশ্ন সমাধান করছিলাম। স্যার সত্যি কথা বলতে আমি সলভ করছিলাম...’ (ছাত্রটি সত্যবাদী, অকপটে স্বীকার করছে! পরীক্ষার আগে নিশ্চিন্তে নিরাপদে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত করার জন্য রেস্টুরেন্টও আছে, সেখানে সবার সামনেই অপকর্মগুলো করা যায়। এর মাঝে কোন লজ্জা নেই, কোন অপমান নেই।) আমার কাছে পাঠানো ই-মেইলের পরবর্তী অংশে তার কিছু ব্যক্তিগত বিপদের বর্ণনা আছে, ফেসবুকে খবর প্রচারের তথ্য আছে, তাদের অপরাধী হিসেবে দাবি করা নিয়ে আক্ষেপ আছে, বাক্য চয়ন এ রকম: ‘সে এইচএসসির ২০১৬-এর পরীক্ষার্থীদের চোর বলে অভিহিত করে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমিসহ একটা প্রতিষ্ঠান ছোট হয়ে যায়। (কৌতুকের বিষয়টি সবাই লক্ষ্য করেছে? ছাত্রটি একটি অন্যায় করতে প্রস্তুত আছে কিন্তু সেটা জানাজানি হয়ে তার প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানির ব্যাপারটিকে নিজের অপরাধ হিসেবে দেখছে না, সেটি অন্যদের সীমা অতিক্রম করা বাড়াবাড়ি হিসেবে দেখছে!) আমরা বলেছিলাম যে আমরাও চাই না প্রশ্নপত্র আউট হোক। কিন্তু যদি সেটা আউট হয় তাহলে পেয়েই পরীক্ষা দিতে চাই।’ (এই একটি কথা দিয়েই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পুরো সর্বনাশের কথাটুকু প্রকাশ করে দিয়েছি। প্রশ্ন ফাঁস হলে সে সেটা দেখে পরীক্ষা দেবে এটি সে উচ্চকণ্ঠে আমার কাছে জানাতে পারে, তার ভেতরে বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ নেই, লজ্জা নেই। শুধু তাই নয়, এরপর যে বাক্যটি লিখেছে সেটি আরও ভয়ঙ্কর!)... ‘স্যার আমি চাই আপনি আমাদের ও তাদের উদ্দেশ্যে সংশোধনমূলক একটি উত্তর আশা করছি’ (বাংলা বাক্য চয়নে এ রকম সমস্যা সারা ই-মেইলেই আছে সেটি এই মুহূর্তে বিবেচ্য নয়- কিন্তু আমার কাছে তার প্রত্যাশা খুবই বিচিত্র। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর সেটি দেখে পরীক্ষা দেয়া যেতে পারে এ রকম একটি ‘সংশোধনমূলক বাণী’ আমি দিই, যেন পুরো একটি প্রজন্ম কোনরকম অপরাধবোধ ছাড়া অপরাধ করে যেতে পারে।

প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে আমি একবার সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলাম- কোন লাভ হয়নি। আমার কাছে যেটি খুবই রহস্যময় মনে হয় সেটি হচ্ছে সংবাদপত্রগুলোর নীরবতা। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে এ রকম একজন যখন আমাকে জানায় আমি তখন জানতে পারি যে আরও একটি প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে- কিন্তু কোন সংবাদপত্রে আমি তার খবর ছাপা হতে দেখি না। ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প মহামারি বা তার চাইতেও বড় বিপর্যয় থেকে এটি কোন অংশে কম নয়। কিন্তু তারপরেও আমাদের দেশের সংবাদপত্রগুলো আশ্চর্য রকম নীরব। আমি তার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না- হতে পারে যারা সংবাদপত্র চালান তারা সবাই সমাজের উঁচু স্তরের মানুষ, তাদের ছেলেমেয়েরা ইংরেজী মাধ্যমে ও-লেভেল এ-লেভেলে পড়াশোনা করে, লেখাপড়ার মান কিংবা নৈতিকতা নিয়ে তাদের কোন দুর্ভাবনা নেই। দেশের মূল মধ্যবিত্ত মানুষের ছেলেমেয়ের কি সর্বনাশ হলো সেটি তাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। বছরে একবার পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পর ভি-সাইন দেখানো হাস্যোজ্জ্বল কিছু ছেলেমেয়ের ছবি ছাপিয়ে তারা তাদের দায়িত্ব শেষ করে ফেলে। কী ভয়ানক মন খারাপ করা একটা অবস্থা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে পারছে না আমি এটা মেনে নিতে রাজি নই। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এই সমস্যা নেই, শুধু আমাদের দেশে এই সমস্যার সমাধান নেই, এটি হতে পারে না। আমার মনে হয় কোন একটি বিচিত্র কারণে এই সমস্যাটিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। যদি এ রকম হতো যে এটি খুবই বিচ্ছিন্ন বিষয়, মাত্র একজন-দুজন এভাবে ফাঁস করা প্রশ্ন পেয়ে যায়, তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ রকম ভূমিকার অর্থ খুঁজে পেতাম। কিন্তু এখন বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষের ইন্টারনেটে চোখ বুলাবার সুযোগ আছে, স্মার্ট ফোনের দাম এত কমে গেছে যে এটি এখন বিলাসিতা নয়। কাজেই নিশ্চিতভাবেই বলা যায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রতিটি ছেলেমেয়ে চাইলেই সেটি সংগ্রহ করতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি ঘোষণা দিয়ে সব প্রশ্ন ফাঁস করে সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছে দিত আমার একটু দুঃখ হতো না যে, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া না শিখেই পরীক্ষা পাস করে যাচ্ছে। কিন্তু এখন আমার দুঃখটা আরও অনেক বেশি, এখন আমি জানি আমরা নিজেরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ক্রিমিনাল হওয়ার প্রথম ধাপটি হাতে ধরে পার করে দিচ্ছি। সেই কাজটি কে করছে? শিক্ষা মন্ত্রণালয়!

॥ দুই ॥

২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ৭৬ জন, ২০১৫ সালে সেই সংখ্যাটি হয়েছে প্রায় এক লাখ দশ হাজার। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে জিপিএ ফাইভের সংখ্যা বেড়েছে এক হাজার গুণ থেকেও বেশি (প্রায় দেড় হাজার গুণ)। পরীক্ষা নেয়া হয় একটা ছেলে বা মেয়ের মূল্যায়ন করার জন্য, সে কতটুকু শিখেছে সেটা বের করার জন্য। কাজেই কেউ যদি সোজাসাপটা হিসাব করে তাহলে বলবে নিশ্চয়ই এই দেশের ছেলেমেয়েরা গত পনেরো বছরের আগে যেটা শিখত তার থেকে হাজার গুণ বেশি শিখছে। তাই জিপিএ ফাইভের সংখ্যা হাজার গুণ বেড়ে গেছে। আমরা সবাই জানি এটা সত্যি নয়, যদি সত্যি সত্যি কিছু ঘটে থাকে তাহলে সেটি তার উল্টো- গাইড বই থেকে প্রশ্ন করার কারণে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার মান কমে যাচ্ছে। (আমি তোতা পাখির মতো একটি কথা উচ্চারণ করে যাই, শুধু গাইড বই ব্যবসায়ীরা গাইড বই ছাপিয়ে ব্যবসা করছে এটি সত্যি নয়। দেশের বড় বড় জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোও নিয়মিতভাবে তাদের পত্রিকায় গাইড বইয়ের মতো প্রশ্ন এবং উত্তর ছাপিয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিশাপ!) ছেলেমেয়েরা আগের মতো শিখছে না কিন্তু জিপিএ ফাইভের সংখ্যা হাজার গুণ বেড়ে যাচ্ছে-তার অর্থ নিশ্চয়ই লেখাপড়ার মান হাজার গুণ কমে গেছে! আমার বক্তব্যটি শুনতে পাগলের প্রলাপের মতো শোনাচ্ছে কিন্তু যুক্তিটিতে কোন্ অংশটুকু ভুল কেউ কী ধরিয়ে দিতে পারবে?

॥ তিন ॥

আমাদের দেশে প্রায় চার কোটি ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে- এটি আমাদের জন্য কত বড় একটা সম্ভাবনার কথা সেটা কল্পনা করাও কঠিন। এই চার কোটি ছেলেমেয়ে চার সহস্র কোটি সম্পদ হতে পারে যদি শুধুমাত্র আমরা তাদের ঠিকভাবে লেখাপড়া করার সুযোগ করে দিই।
বাজেটের অতি ক্ষুদ্র একটা অংশ লেখাপড়ার জন্য খরচ করা হয়। তাই খুব সহজে যে আমরা লেখাপড়ার মান রাতারাতি উন্নত করে ফেলতে পারব সেটি মনে হয় না। আমরা বাড়তি কিছু চাই না কিন্তু যেটা আমার অধিকার সেটা তো চাইতে পারি। আমরা এখন আর কিছু চাই না, শুধুমাত্র পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস না করে এই ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা নিতে চাই। আমাদের সোনার টুকরো ছেলেমেয়েদের যখন আমরা ভাল জিপিএ-এর লোভ দেখিয়ে ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়ার ফাঁদে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই, অপরাধ করার যন্ত্রণায় যখন তাদের মুখটা ছোট হয়ে যায়, তখন আমরা তাদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। দোহাই আপনাদের, আমাদের সন্তানদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে দিন।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer