ছবি: বহুমাত্রিক.কম
বাকৃবি,ময়মনসিংহ : গরীবের প্রোটিন এবং শরীর গঠনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় সীম গোত্রীয় ডাল জাতীয় একটি ফসল অরহড়। অরহড় শুকনা বীজ ডাল, পরিপক্ক সবুজ বীজ মটরশুটির মত আমিষ সমৃদ্ধ সবজি, পাতা ও ডগা পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পাতার রস জন্ডিস রোগ নিরাময়েও কার্যকর।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি)-এ অরহড় ডালের বহুমূখী ব্যবহার নিয়ে এক কর্মশালায় ডালটির এসব গুণাগুণের কথা জানান কৃষিবিদরা।
কর্মশালায় তারা বলেন, আমরা মাংস থেকে শতকরা ৪৫-৫০ ভাগ প্রোটিন পেয়ে থাকি, অপর পক্ষে অত্যন্ত কম মূল্যের ফসল অরহড় থেকে শতকরা ৩৫-৪০ ভাগ প্রোটিনের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত ‘অরহড় ডালের বহুমূখী ব্যবহার’ বাকৃরি কর্মচারি চাষিদের নিয়ে দিনব্যাপি চলে এই অনুষ্ঠান। আলোচনার পাশাপাশি অরহড় ডালের প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ- উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ জসিমউদ্দিন খান, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।
আলোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক ও ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ ছোলায়মান আলী ফকির।
প্রধান অতিথি বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ, বর্ধিঞ্চু জনসংখ্যা ও ক্ষয়িঞ্চু চাষের জমির কারণে বাড়ীর আশে-পাশে ধান ক্ষেতের উঁচু আইলে এবং রাস্তার দু’পাশে খুব সহজে চাষ করা যায়। আমি প্রত্যাশা করছি গবেষণার মাধ্যমে এর চাষপদ্ধতি আরও আধুনিক করা হবে এবং ব্যাপকভাবে এর বিস্তার লাভে ভূমিকা রাখবে।। যত ডাল আমরা খেয়ে থাকি তারমধ্যে অরহড় থেকে আমরা প্রোটিন সবচেয়ে বেশী পেয়ে থাকি তাই অরহড়কে গরীবের ডাল বলা হয়ে থাকে।
প্রধান গবেষক ও ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ ছোলায়মান আলী ফকির জানান, অরহড় (Pigeonpea) একটি বহুবর্ষজীবী শীম গোএীয় খরা সহনশীল উদ্ভিদ। এটি বীজ থেকে হয়। জাত ভেদে এ উদ্ভিদ ১-৮ মি. লম্বা ও ৫-৫০টি শাখা প্রশাখা যুক্ত হতে পারে। ডাল ও শাখা জ্বালানি, শেকড়ে বাসকারী ব্যক্টেরিয়া মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে, পাতা ও ডগা পচিয়ে জৈব সার তৈরী করা যায়।
তিনি বলেন, এটি ঘন করে লাগানোর ফলে বাড়ীর বেড়া, মাটির ক্ষয়রোধে নতুন পুকুর/জমির আইলে লাগানো যায়। সর্বপরি অরহড় গাছ শুকানোর পর উৎকৃষ্ট মানের লাকড়ি/খরি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ড. ফকির জানান, বীজ মার্চ-এপ্রিল মাসে বপণ করা হয়। প্রতিটি গর্তে ২-৩ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগে ভাল ফলন পাওয়া যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ফুল ও ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফল পাওয়া যায়। এ থেকে ফলন পাওয়া যাবে প্রতি হেক্টর জমিতে ১মি.-১মি. দুরত্বে গাছ লাগানো হলে ১-৩ টন শুকনা বীজ, ২.৫-৫ টন কাঁচা ফল, ১-২ টন পাতা ও ডগা, ৪-১০ টন লাকড়ী পাওয়া সম্ভব। এ দুরত্বে গাছ প্রতি ১.৫-৩.০০ কেজি কাঁচা বীজ যা সবজি হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
কর্মশালায় বাকৃবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ এতে অংশ গ্রহণ করেণ। পরে কর্মচারি কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে অরহড়ের বীজ বিতরণ ও সকলকে অরহড়ের তৈরী বিভিন্ন খাবার পরিবেশন করা হয়।
কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু : সহকারী পরিচালক, বাকৃবি ময়মনসিংহ।
বহুমাত্রিক.কম
