Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

২০৫০ সালে বাংলাদেশে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা হবে ৪ কোটি

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

২০৫০ সালে বাংলাদেশে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা হবে ৪ কোটি

ঢাকা : বাংলাদেশে আগামী ২০৫০ সালে শিশুর চেয়ে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা বাড়বে। ওই সময়ে শিশুর সংখ্যা হবে ১৯ শতাংশ এবং এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা হবে ২০ শতাংশ। খবর বাসস’র 

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবীণ বা সিনিয়র সিটিজেন রয়েছে। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ প্রবীণদের সংখ্যা হবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। ২০৫০ সালে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি এবং ২০৬১ সালে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি প্রবীণ জনগোষ্ঠী।

‘প্রবীণ বন্ধু’র নির্বাহী পরিচালক ডা. মহসীন কবির লিমন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এইসব তথ্য প্রকাশ করেন।

তিনি বাসসকে জানান, বাংলাদেশের ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে সরকার দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে বয়স্ক ভাতা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার প্রায় ১ হাজার ৮শ’৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে মনে করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে আগামী ২০৫০ সালে শিশুর চেয়ে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা এক শতাংশ বেশি হবে। ওই সময়ে শিশুর সংখ্যা হবে ১৯ শতাংশ এবং প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা হবে ২০ শতাংশ। পৃথিবীর সব দেশেই সিনিয়র সিটিজেনের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে এবং তাদের অসহায়ত্বও বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি এবং মানুষের নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার কারণে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশে সাধারণত যাদের বয়স ৬০ বছর তারাই প্রবীণ ব্যক্তি।

তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অসাধারণ সাফল্যে বর্তমান বিশ্বে মানুষ প্রায় ১২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন। বয়স বৃদ্ধির এ হারে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর। দিন দিন বাড়ছে প্রবীণের সংখ্যা। সম্প্রতি সরকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সিনিয়র সিটিজেন মর্যাদায় ঘোষিত করেছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্বের সর্বত্র ৮০ বছরের উপরে অতি প্রবীণের সংখ্যাও বাড়ছে দ্রুত হারে। বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ১৯৯০ সালে সর্বপ্রথম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক প্রস্তাবে ১৯৯১ সাল থেকে বিশ্ব প্রবীণ দিবস পালিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশে ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত বার্ধক্য বা প্রবীণব্যাক্তিদের সমস্যাটি তেমন গুরুত্ব পায়নি। ২০০০ সালের পর থেকে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে আগামীতে প্রবীণদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সমস্যাটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে বর্তমান সরকার বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকার ২০১৩ সালে পিতা-মাতা ভোরণ-পোষণ আইন কার্যকর করেছে।

২০১৩ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশে দুই তৃতীয়ায়শ প্রবীণই দারিদ্র, শতকরা ৫৮ ভাগ প্রবীণের মৌলিক চাহিদা পূরণের সামর্থ নেই। এছাড়াও বার্ধক্যকালীণ সময়ে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ফলে প্রবীণরা নানা ধরনের শারিরীক ও মানসিক রোগে ভোগে থাকেন। সবকিছু বিবেচনা করলে আমাদের দেশের প্রবীণরা এই মুহুর্তে ভালো নেই। তারা অনেকটা মানবেতর ভাবেই দিন পার করছেন।

এর কারণ হিসাবে বলা হয়, বিশ^ায়নের এ যুগে আমাদের দেশের যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে তৈরি হচ্ছে একক পরিবার, এতে করে পরিবারগুলোতে প্রবীণরা ছিটকে পড়ে অসহায় হয়ে পড়ছেন। ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতির কারণে এদেশের প্রবীণেরা এখনও অনেকটাই সম্মানিত হচ্ছেন । কিন্তু উল্টোচিত্রে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রবীণদের প্রধান সমস্যা হলো দারিদ্রতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.এস.এম আতিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের বার্ধক্য সমস্যা ও সমাধানে গণমাধ্যমকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

বর্তমানে দেশে ৬০ বা তার চেয়ে বেশি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ। রাষ্ট্রকে এদের দায়িত্ব নিতে হলে এখন থেকেই কর্র্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রায় ১৮৯০ কোটি টাকা ব্যয় করছে। তা বাংলাদেশের জন্য একটা বিশাল উদ্যোগ।

বাংলাদেশ এজিং সাপোর্ট ফোরামের সভাপতি হাসান আলী বলেন, প্রবীণ জনগোষ্ঠী বিশ্ব অর্থনীতির একটি বড় ঝুঁকি। বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের সোয়া কোটি প্রবীণদের জন্য অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে।

পল্লী উন্নয়ন সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, দেশের প্রবীণদের কল্যাণে এখন থেকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে সরকারের এসডিজি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer