Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাওরে নেই ঈদের আনন্দ-শুধু বেঁচে থাকার চেষ্টা

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ২৫ জুন ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

হাওরে নেই ঈদের আনন্দ-শুধু বেঁচে থাকার চেষ্টা

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এবার নেই ঈদের আনন্দ। অকাল বন্যার গ্রাসে মাঠভরা ফসল হারিয়ে হাওরবাসী এখন দিশেহারা। ভরা বর্ষার মাঝেও হাওরে মানুষের দিন কাটছে দুঃখ আর দুর্দশার মধ্য দিয়ে।

দিন বাদে ঈদুল ফিতরে নিজে ও সন্তানদের নতুন কাপড় কিনে দিতে না পারায় হতাশায় ভুগছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। বর্ষার সময় হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলো অসহায় হাওরে নেই মাছ, নেই অন্য কোন বিকল্প কাজ ব্যবস্থা-তাই সবাই বেকার সময় পার করছে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকার দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রামে কাজের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষার এই ৬ মাস বেকার থাকে হাওরবাসী। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সরকারের সু-নজর না থাকায় এই মানবসম্পদ এখন সমাজের বোঝা হচ্ছে দিন দিন। যার জন্যে এই অনুন্নত অবহেলিত হাওরবাসীর কণ্ঠে কেবলেই শুধু বাচাঁর আকুতি।

এবার জেলার দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, দোয়ারা বাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার হাওরগুলোতে স্মরণনকালের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক পরিবারগুলো।

এদিকে সরকারি ন্যায্যমূল্য, টিসিবির পণ্য বন্ধ, ভিজিএফ কার্ডে অনিয়ম ও ওএমএস চাল সঠিক ভাবে পায় নি হাওরবাসী। এ অবস্থায় নিজের ও পরিবারের জন্য দু-মুটো খাবার জোগাড় করা দায় হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ হাওরবাসী অর্ধহারে, অনাহারে, অভাব-অনটন কে সঙ্গী করে খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে জীবন পার করছে।

জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখাযায়-অকালে এক ফসলী বোরো ধান পানিতে তলিয়ের যাওয়ায় জেলা ও উপজেলার বাজার সহ প্রতিটি বাজারেই চালের দোকানগুলোতে চাল নেই। অনেকেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বেশি নিয়ে বিক্রি করছে। হাওর ডুবে যাওয়ার পর থেকে সরকারি সহযোগীতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপসদৃশ্য গ্রামগুলোতে টাকার অভাবে অনেকেই বাজার-সদাই করতেও পারছে না। ফসলহারা মানুষগুলোর এখন দিন কাটতে ভিজিএফ কার্ড ও খোলা বাজারে কম মূলে চালের আশায়। দূর-দূরান্ত থেকে চাল নিতে আসা মানুষজন সকাল থেকে সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে ডিলারদের কাছ থেকে পাচ্ছে না।

দুর্গত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজান মাসে সাহরি ও ইফতারিতে পানি ভাত আর রুটি, শাক পাতা আর যা পাচ্ছে তা দিয়ে কোন রকমে রোজা রাখছেন তারা। বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল কৃষক পরিবারগুলোর চাষাবাদের গরু আর গোলা (ধান রাখার পাত্র) এখন শূন্য। এখন নেই ঘরে নগদ টাকা ও খাবার চাল। হাওর পাড়ে বসবাসকারী জনসাধরন বেশির ভাগেই হাওরের পানি ব্যবহার করছে। ফলে নানা পানিবাহিত রোগে আক্রন্ত হচ্ছে।

সাদেক আলী, রফিকুল ইসলাম, শফিুকুল ইসলাম, জমির উদ্দিন, সাজন মিয়া, করিম সহ জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বলেন, কি কইমু ভাই এবার বোরো ধান হারিয়ে এক বারেই নিঃস্ব¦ হয়ে গেছি। হাতে টাকা নাই পোলা মাইয়ারে কি ভাবে নতুন কাপড় কিনা দিমু আর জীবন চালাইমু বুজতা পারতাছিনা।

তারা বলেন, আমরার অভাব অনটন লাইগাই আছে বোরো ধান চাষ ছাড়া অন্য কোন কাজের ব্যবস্থা না থাকায়। আমরা হাওরপাড়ের মানুষগুলোর ৬মাস হাওরে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করি কিন্তু হাওরে এখন মাছ নাই। সরকারিভাবে মাছের পোনা হাওরে ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়া হয়েছে দায়সারা ভাবে।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুস পুরকাস্থ বলেন, হাওর বেকার জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করার জন্য বোরো ধান চাষাবাদের পরিবর্তে বিকল্প কাজের জন্য মিল-কলখারকানা স্থাপন, কুটির শিল্পে ও হাঁস-মুরগী প্রতিপালনের সঙ্গে হাওরে বিশাল নারী জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করা গেলে তারা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশা পাশি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে এবং বেকার থাকবে না-অভাব থাকবে না।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারুজ্জামান কামরুল বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগোপযোগী উন্নয়ন করতে হবে এখানে। হাওরবাসী ভাগ্যের উন্নয়ন হলে জাতীয় অর্থনীতিই সম্বৃদ্ধ হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer