Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাওরে জীববৈচিত্র রক্ষায় প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা

কৃষিবিদ ডঃ মোঃ হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ০৭:১১, ২১ জুলাই ২০১৮

আপডেট: ০৭:১৬, ২১ জুলাই ২০১৮

প্রিন্ট:

হাওরে জীববৈচিত্র রক্ষায় প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি-বন্যা নিত্য-নৈমিত্তিক ও অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সে বৃষ্টি যদি আগাম হয় তবে সেটা সবসময় কল্যাণ বয়ে আনে না। এমনই ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে ভাটির দেশ, ধানের দেশ, গানের দেশ, প্রাণের দেশ হাওরে। গানের দেশ বলছি এজন্য যে, ভাউয়াইয়া, ভাটিয়ালি সুরের গানের টানে জন্য বিখ্যাত এলাকা হলো হাওর এলাকা। আর সেজন্যই শাহ্ আব্দুল করিম, হাছন রাজার, বারী সিদ্দিকীর মতো গানের যাদুকরের সৃষ্টি হয়েছিল সেসব এলাকায়। কারণ নৌকা বাইতে বাইতে মাঝিরা সেখানে লম্বা লম্বা সুরে গলা ফাটিয়ে সুর তুলে গানে। 

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি বিরাট অংশ ভাটি এলাকার হাওর হিসেবে পরিচিত। বৃহত্তর সিলেটের জেলাসমূহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ে এ বিশাল হাওর এলাকা গঠিত। এ এলাকার একটি বিশেষত্ব হলো সেখানে বছরে ৭ মাসই পানিতে তলিয়ে থাকে। বছরে মাত্র একটি ফসল বোরোধান উৎপাদিত হয়ে থাকে। এসময়ে সেখানে প্রাকৃতিকভাবেই মিঠাপানির অনেক দেশি প্রজাতির মাছ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত বিচিত্র ও বাহারি রকমের ধান ও মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে ক্ষেত্র বিশেষে বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।

এ অঞ্চলের একটি বড় রকমের দুঃখ হলো আগাম বন্যা ও অতিবৃষ্টি। প্রতিবছরে একমাত্র বোরো ফসল কাটার সময় এলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে শিলাবৃষ্টি ও আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের। কিন্তু প্রতিবছরই কিছু না কিছু ফসল বিনষ্ট হলেও গতবছর (২০১৭) অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন জরিপকারী সংস্থাসমূহ। সেখানে বিস্তীর্ণ হাওর এলাকায় প্রায় দুই লক্ষাধিক হেক্টর জমির ধান ফসল যার বারো আনা নষ্ট হয়েছে। সেখানে ৫ লক্ষাধিক মেট্রিক টন ধান নষ্ট হয়েছে যার বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকারও বেশি।

কৃষক সারাবছরের সঞ্চয় একসাথে করে জমা রাখে যাতে বোরো মৌসুমে ধান আবাদকালে চাষাবাদের খরচ যোগান দেওয়া যায়। শুধু তাই নয় সার, সেচ, কীটনাশক, আগাছা নাশক, শ্রমিকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য এ সঞ্চিত অর্থ খরচ করা হয়। সেই সঞ্চিত অর্থই এ ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট না হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে দাদন ব্যবসা কিংবা মহাজনী কারবারীদের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়তে বাধ্য হয়। দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনের সময় সহজ শর্তে ব্যাংক লোন পায় না। তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই কৃষকরা উচ্চসুদে বেসরকারী সংস্থা কিংবা জমিতে রেখেই নামেমাত্র মূল্যে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়।

পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে নেমে আসা বানের পানির তোড়ে সব ধরনের বাধ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। সেই বাধভাঙ্গা পানি যখন ধান ক্ষেতের মধ্যে ঢুকে পড়ে, তখন আর হাওরবাসীর কান্নার সীমা থাকে না। হাওরের ধানগুলো এমনিতেই নিচু এলাকায় হয়। সেখানে এত পরিমাণ নিচু যে সেখান থেকে আর পানি অন্যত্র নামিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। সেজন্য অল্প বৃষ্টিতেই মৌসুমের শুরুতেই ধানের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।

শুধুমাত্র মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত হাকালুকি হাওরেই নষ্ট হয়েছিল ২৫ মেট্রিক টন বিভিন্ন বিরল প্রজাতির মাছ। বৃষ্টির পানিতে আধাপাকা ধানের গাছ পানির নিচে চলে যাওয়ায় সেখানে সেগুলো পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। সেই দুর্গন্ধে পানিতে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস সৃষ্টি হয়ে পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। আমরা জানি রাসায়নিকভাবে কোন কিছুর নরমাল অর্থাৎ নিরপেক্ষ পানির পিএইচ-এর আদর্শ মাত্রা হলো ৭। কিন্তু এক্ষেত্রে পানির নিচে ধানের খড় পঁচে গিয়ে পানির স¦াভাবিক পিএইচ মান ৭ থেকে ৩-৪ এ নেমে গিয়ে পানি এসিডিক হয়ে পড়ছিল। এতে মারা যায় মাছসহ পরিবেশের জীববৈচিত্রের অন্যান্য সজীব উপাদানসমূহ।

জানা গেছে, এগুলো সমাধানের জন্য যদিও সংশ্লিষ্ট এলাকার মৎস্য ও কৃষি বিভাগ যৌথভাবে চুনসহ অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহার করে পানির স্বাভাবিক পিএইচ মাত্রায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে, তারপরও তড়িৎ কোন ফল পেতে দেরি হয়েছিল। তাই সেখানে মাছ মরে মরে ভেসে উঠেছে। ঠিক সেকারণে বিষাক্ত মাছ ধরে যাতে জনস্বাস্থ্যের কোন সমস্যা সৃষ্টি না হয় সেজন্য তখন সেখানে সাতদিন মাছ ধারার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

এসব এলাকায় মরে গিয়ে ভেসে উঠা মাছ খেয়ে সেখানকার পানিতে ভেসে বেড়ানো হাঁসগুলো মারা যাচ্ছিল। এক পরিসংখ্যানে প্রকাশ পেয়েছে সেসব এলাকায় প্রায় পঁচিশলক্ষাধিক হাঁস পালন করে থাকেন সেখানকার কৃষকেরা। আর শুধু হাঁস কেন, সেখানে মারা পড়ছে অন্যান্য প্রাণী ও জীবজন্তু। কারণ এক অর্থে সেখানকার খাদ্য শৃঙ্খলে (ফুড চেইন) দেখা দিয়েছিল এক প্রকার বিপর্যয়। একদিকে সেখানকার মানুষগুলো যেমন আশ্রয় ও খাবারহীন হয়ে পড়েছে, সেইসাথে আশ্রয় ও খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে সেখানকার গবাদিপশু সহ সকল প্রাণীকুল। সেখানে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী অন্যান্য জীব যেমন সাপ, গুইসাপ, ব্যাঙ, বিভিন্ন বিরল দেশি প্রজাতির মাছ ইত্যাদি সবগুলোই এখন হুমকীর সম্মুখীন।

সম্প্রতি পত্রিকান্তরের একটি খবর আরো বেশি আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। আর সেটি হলো আমাদের টাঙ্গুয়া হাওরের অদূরে পাশ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় স্থাপিত বিভিন্ন খনির উত্তোলন। সেখানে কয়লা থেকে শুরু করে মারাত্মক ইউরেনিয়াম পর্যন্ত রয়েছে। আর ইউরেনিয়াম হলো এমন একটি মারাত্মক রাসায়নিক যা কিনা পারমাণবিক চুল্লির উপজাত হিসেবে নিঃসৃত হয়ে থাকে। এ থেকে বিষাক্ততা ছড়িয়ে পড়লে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে মেঘালয়ের এসব খনি থেকে উজানের ঢলের পানির স্রোতের সাথে যদি ইউরেনিয়ামসহ কোন ধরনের দূষিত রাসায়নিক আমাদের হাওরে চলে আসে তখন তা শুধু যে হাওরেই সীমাবদ্ধ থাকবে তা কিন্তু নয়। তা তখন সারাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্যই একটি মারাত্মক হুমকী হিসেবে দেখা দেবে তাতে কোন সেন্দহ নেই।

আমরা জানি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সেই কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার মানুষ। তিনি শিকড়ের টানে সেসব বন্যাপীড়িত মানুষের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখার জন্য সেসব এলাকা পরিদর্শন করেছেন যা আমরা গণমাধ্যমে প্রচারিত হতে দেখেছি। সেখানকার সরেজমিন পরিস্থিতি দেখে তিনি এতটাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেনন যে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৯ এপ্রিল (২০১৭) একটি সমাবর্তনে যোগ দিতে এসেও সেই হাওর এলাকার মানুষের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা ও উষ্মা প্রকাশ করে বিশেষভাবে বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর মনের বেদনার কথা বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

কেন হলো এবারের এমন ভয়াবহ অবস্থা? কারণ অন্যান্য বছরগুলোতে বর্ষাটা সাধারণত বৈশাখের শেষের দিকে শুরু হয়। কিন্তু এবার তা বৈশাখই শুধু নয় শুরু হয়েছে চৈত্রের শুরুতেই। বিশেষজ্ঞদের ধারণামতে এগুওেলাই আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল। তাছাড়া হাওরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে সেগুলো এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। সেখানে বেড়িবাধ, বিভিন্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধসমূহ যখন সম্পন্ন হবে তখন এ ধরনের সমস্যা কম হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞগণ।

আমরা জানি এও প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর কারো কোন হাত নেই। তবে একে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিছুটা মিনিমাইজ করা যায়। এগুলোকে মিনিমাইজ করার জন্য বর্তমানে সরকারেরর ইচ্ছায় হাওর উন্নয়ন বোর্ডকে আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে। সেইসাথে ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি হাওরের কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিবিড়ভাবে গবেষণার মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য চালু করা হয়েছে হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। আরো নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক সমন্বিত প্রকল্প। যেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের হয়তো হাওরের মানুষের এমন কান্না আর দেখতে হবে না। তবে এ মুহূর্তে আমাদের সাধ্যমতো তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

যেকোন ধরনের সমস্যারই তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা কঠিন। বিগত দিনে অতীতের সরকারগুলোর পক্ষ থেকে এসব পিছিয়ে পাড়া জনগোষ্ঠীর দিকে কেউই দৃষ্টি দেয়নি। যদি আগে থেকেই এসব এলাকার মানুষের জন্য কাজ করার জন্য সমন্বিত ও সম্মিলিতভাবে দৃষ্টি দেওয়া যেত তাহলে এসব সমস্যার অনেকাংশেই অনেক আগেই সমাধান সম্ভব হতো। তবে আশার কথা দেরিতে হলেও যেহেতু এসব এলাকার সার্বিক উন্নয়নে পরিকল্পনামাফিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে সুফল একসময় আসবেই। তবে এসব গৃহীত অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পসমূহ যেন কোন দুর্নীতির কাছে হোঁচট না খায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ ইতোমধ্যেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধসহ অরো অনেক হাওর উন্নয়ন প্রকল্প নাকি একপ্রকার অমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও লাল ফিতার চুরাবালিতে আটকে রয়েছে যা কোন অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না। কারণ এগুলো দেখভাল করার জন্য বর্তমান সরকার ও রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্ব ব্যক্তি রয়েছেন।

আগেই বলেছি, হাওর হলো দেশের অন্যতম খাদ্য শস্যের আধার। দেশের এ বিরাট অংশ বাদ দিয়ে সারাদেশের উন্নয়ন ভাবাই যায়না। এ অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নের উপর নির্ভর করেই সেখানকার খাদ্য নিরাপত্তাসহ সারাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বিরাট অবদান রাখে। দেশের এ অঞ্চলটির মূল কৃষির উন্নতির সাথেই দেশজ কৃষির উন্নতি অনেকাংশে নির্ভর করে। সেখানকার সারাবছরের একটি মাত্র বোরো ফসলই কৃষকগণ তাদের সর্বস্ব দিয়ে উৎপাদনে বিনিয়োগ করে থাকে। সেই বিনিয়োগে যেমন থাকে আনন্দ তেমনি থাকে হাহাকারও। তেমনি একটি হাহাকারে মধ্যে দিয়ে এখন পার করতে হচ্ছে তাদের।

সময় যাচ্ছে আর আবহাওয়া, জলবায়ু, পরিবেশ ইত্যাদি দিনকে দিন বিরূপ আচরণ করছে। এর সর্বশেষ নজির হলো ২০১৭ সালের হাওরাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এ বিপর্যয় যে শুধু তখন হাওরেই সীমাবদ্ধ ছিল তা কিন্তু নয়। এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশময়। সেসময় মাসাধিককাল ধরে প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে খবর আসতো সারাদেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা। কিন্তু তখন যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবরগুলোর আসছিল সেগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন নয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছিল এর সময় ও তীব্রতা নিয়ে।

আমরা জানি গতবছর অর্থাৎ ২৯ মার্চ (২০১৭) থেকে হাওরাঞ্চলে যে উজানের পাহাড়ি ঢল শুরু হয়েছিল। তার তীব্রতায় মাসাবধি আগাম বন্যায় ফসল, মাছ, হাঁস, ব্যাঙ, গবাদিপশুসহ অন্যান্য প্রাণীকুলের যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা আমরা সকলেই বিগত কিছুদিনে উপলব্ধি করতে পারছি। অপরদিকে সারাদেশজুড়েই শুরু হয়েছিল আগাম অতিবৃষ্টিজনিত বন্যা। সেইসাথে বজ্রপাত ও কালবৈশাখী কিংবা টর্নেডো তো রয়েছেই। দেশের বিভিন্ন নিন্মাঞ্চল পানির নিচে চলে যাওয়ায় সেসব স্থানে বর্তমানে মাঠে থাকা বোরো ধানসহ অন্যান্য সকল ধরনের কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে হাওরাঞ্চলের জন্য এধরনের সমস্যা নতুন কিছু নয় বরং ফিবছর নিত্য-নৈমিত্তিক।

এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের ধান আবাদের প্রায় ৮০ শতাংশ জুড়ে থাকা বোরো ধানের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনভাবেই পূরণযোগ্য নয়। এখন কথা উঠেছে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বোরো আবাদের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কিনা। কারণ সারাদেশে প্রায় বোরোতে ৪৮ লক্ষ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি মেট্রিক টন ধান ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিণ করা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে হাওরাঞ্চলে প্রায় দুই লক্ষাধিক হেক্টর জমির বোরো ধানের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগই বিনষ্ট হয়েছে। সেখানে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মেট্রিক টন ধান এবং সেই পরিমাণ টাকার অংকে দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবছর এভাবে হাওরাঞ্চলে প্রায়ই এমন ঘটনার মধ্যে পড়ে সেখানকার অসহায় কৃষকদের সর্বস্ব হারাতে হয়।

দেশের উত্তরবঙ্গে চলনবিলসহ অন্যান্য নিন্মাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল, পূর্বাঞ্চলসহ সারাদেশেই আরো প্রায় সমপরিমাণ বোরো ধানের ক্ষতির খবরও গণমাধ্যমে হর হামেশাতেই প্রকাশিত হয়ে চলেছে। তাছাড়া এসময়ে কৃষি ফসলের মধ্যে কাঁচা মরিচ, বেগুন, কুমড়া, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ঢেড়শ, শসা, বরবটি ইত্যাদি সবজি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি করেছে এ আগাম বৃষ্টিজনিত বন্যা ও ঝড়-ঝঞ্ঝা। রমজান মাসে এসব ফসলের কম উৎপাদনের কারণে তাদের দামের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে থাকে। বিশেষ করে রমজানের নিত্যপণ্য হিসেবে দাম বাড়তে পারে কাঁচা মরিচ, শসা, বেগুন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সবজি ফসলের দামের উপর। ইতোমধ্যে সব ধরনের ধান এবং চালের মূল্যের উপর এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রকারান্তরে এগুলো জনস্বার্থ পরিপন্থি হতে বাধ্য।

অথচ এগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিবছরই সমানভাবে দেখা যায় না। আমরা যখন পরিবেশ পরিবেশ কিংবা জলবায়ু জলবায়ু করে চিৎকার করি তখন সেটাকে কেউই পাত্তা দিতে চায় না। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবকিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যদ্বাণীই এক্ষেত্রে সত্যি হতে চলেছে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ায় শীতে শীত থাকছেনা, গরমে গরম থাকছে না, বর্ষাকালে বৃষ্টি থাকছেনা, কখনো অতি গরম আবার কখনো বা অতি শীত আবার বর্ষা শুরু হতে না হতেই উচ্চশব্দে বজ্রপাতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে, যা আগে কখনোই তেমন দেখা যেতো না। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি এখন আসলে তাই হচ্ছে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গতবছর (২০১৭) হাওরাঞ্চলে যে আগাম বন্যায় ক্ষতি হয়েছিল তা বিগত ১২০ বছরে দেখা যায়নি। অপরদিকে সারাদেশে যে যে বজ্রপাত ও ঝড়-ঝঞ্ঝা বিগত প্রায় তিনদশক দেখা যায়নি। কিন্তু এসব এখন হচ্ছে, তার অন্যতম কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। যদিও দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ), বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন (বিএনএফ) সহ আরো অনেক সরকারি বেসরকারি সংস্থা তাদের যার যার সাধ্যমতো সেসব হাওরের দুর্গত মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে গেছে। সরকারের নিদের্শে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক তাদের কৃষিঋণ আদায় বন্ধ করে দিয়েছে এবং ঋণের সুদ মওকুফ কওে দিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে ভালো হতো যদি পরিবেশ দুষণ কমিয়ে এসব দুর্যোগের হাত থেকে আগেই জানমালের রক্ষা করা যেতো।

বলতে গেলে এসবের সৃষ্টি করছি আমরা নিজেরাই। কারণ ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন আধুনিক জীবন যাপনের উপজাত হিসেবেই সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশ ধ্বংসকারী বিভিন্ন পরিবেশ বিপর্যয়কর বস্তু। পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার, গাছপালা না লাগিয়ে শুধু কর্তন, শোধন না করে শিল্প কারখানার বর্জ্য অপসারণ, বিভিন্নভাবে ক্ষতিকর গ্রিন হাউজ গ্যাস সৃষ্টি, পানির স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ করা, নদ-নদী ভারাট করে স্রোতধারা পরিবর্তন, অবৈজ্ঞানিক ইটভাটা স্থাপন ইত্যাদিসহ আরো অনেক কিছু। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর মানুষের কোন হাত নেই। তবে অভিযোজনের মাধ্যমে তা সংকোচনের চেষ্টা করার সুযোগ রয়েছে। এখন একটি সুন্দর আগামীর জন্য সেদিকেই আমাদের হাঁটতে হবে।

এসব আগাম বন্যা পুষিয়ে নিয়ে কিছুটা হালে পানি দেওয়ার জন্য হলেও সরকার তাদের ব্যাপকভিত্তিক পুনর্বাসন কার্যক্রমে এগিয়ে আসতে হবে। সেইসাথে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সবধরনের সংস্থা সমূহকে তাদের সাহোয্যের হাত সম্প্রসারিত করে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যায় সরকার। দুর্যোগ পরবর্তীতে তাৎক্ষনিকভাবে বিতরণ করা হয় নগদ টাকা ও খাদ্য হিসেবে চাল। সেইসাথে হাঁস মাছসহ অন্যান্য গবাদিপশুর যাতে আর কোন মড়ক বা তাদের স্বাস্থ্য সমস্যা না হয় সেজন্য স্ব-স্ব সরকারি বিভাগসমূহ মাঠ পর্যায়ে পুনর্বাসনের কাজ করে থাকে।

পূর্বেই বলেছি গতবছর হাওরের এসব বন্যাদূর্গত মানুষের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য প্রথমে রাষ্ট্রপতি হাওরের মানুষ মোঃ আবদুল হামিদ গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে দফায় দফায় বিভিন্ন পর্যায়ের সমাজকর্মী, সংসদ সদস্য, মন্ত্রীগণ তাদের হাতে থাকা সাহয্য সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে গেছেন। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দূর্গত এলাকায় স্বচক্ষে দেখার জন্য মৌলভীবাজার পরিদর্শন করেছিলেন। সেখানে হাওরের জন্য আগামীদিনে সরকারের মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি নিজের হাতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে কিছু ত্রাণ বিতরণ করেন। তবে তিনি সেখান বর্তমান উন্নয়ন পরিকল্পনায় কিছু ত্রুটি বিচ্যুতির বিষয়ে তাঁর অসন্তুষ্ঠির কথাও জানান। তবে সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রততার সাথে সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন।

হাওরের সেসব সমস্যা সমাধানের বিষয়টি এখন শুধু আলোচনার টেবিলে না রেখে কেমন করে ভবিষ্যতে একটি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ তাদের মতামত রাখছেন। কারণ হাওরের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা। এখন যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে প্রকৃতিতে দেখা দিচ্ছে। সেজন্য একে মাথায় নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণের দাবী রাখে। কারণ যে অবস্থা বিগত ১২০ বছর দেখা যায়নি, তা সেবার দেখা দিয়েছে। এবং এবারের পরে আর হবেনা এমন গ্যারান্টি এখন আর কেউ দিতে পারছেন না। মাঝে-মধ্যেই এমন দুর্যোগের সম্মুখীন হতে পারে। সেজন্য সেভাবেই পরিকল্পনা রেখে অভিযোজনের কাজটি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

তবে আশার কথা ইতিপূর্বে আমাদের দেশের বিভিন্ন ক্রাইসিস সম্মিলিত উদ্যোগে অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সেক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা নিরসন, দক্ষিণের উপকূলবর্তী লবণাক্ততা নিরসন, খরা ও বন্যা সহনশীলতা সহ্যকারী ফসল উৎপাদন, এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলা কিংবা সিডরের পরে সেগুলো একটি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে। সেগুলো অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনের দিনগুলোতে হাওরের জন্য উন্নয়ন মহাপরিকলপনা গ্রহণ করলে সার্বিক উন্নতিতে পৌঁছাতে বেগ পেতে হবে না।

বাংলাদেশ নিজেই একটি বড় বদ্বীপ। আর সেই বদ্বীপের একটি বিরাট অংশ হলো এ হাওর এলাকা। কাজেই আন্তর্জাতিকভাবে আগামী ১০০ বছরের যে বদ্বীপ বা ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ রয়েছে সেখানে হাওরের এসব সমস্যা সমাধানের ব্যাপভিত্তিক পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে অবকাঠামো উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, সৌন্দর্য বর্ধন, কৃষি ফসল, মাছ, গবাদিপশু, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ইত্যাদি প্রত্যেকটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে বাৎসরিক বাজেট, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এগুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

তারপরও এ মুহূর্তে যে বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট ভাবা দরকার বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। কারণ তাঁরা মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তনই অকাল বন্যার মূল কারণ। জলবায়ু পরিবর্তন যে শুধু বৈশ্বিক কারণে হচ্ছে সেজন্য এক চেটিয়াভাবে বিদেশিদেরকে দোষারোপ করলে চরবে না। কিছুটা দায় নিজেদেরও নিয়ে সে মোতাবেক সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সেখানে সময়মত পুরাতন বাঁধগুলো মেরামত ও নতুন বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।

তাছাড়া বর্ষার সময় বাঁধ নির্মাণে অহেতুক সময় ও অর্থ নষ্ট না করে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি বড়জোড় মার্চের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই সেগুলো শেষ করা প্রয়োজন। পানির সুষ্ঠু পরিচলনের জন্য জন্য শুধু বাঁধ নির্মাণ করলেই চলবে না। সেখানে অতিরিক্ত পানি বের করার জন্য প্রয়োজনে সুযোগ ও সময়ে বাঁধ কেটেও দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কাজটি করতে হবে ফসল তোলার ক্ষেত্রে। এপ্রিল মে মাসের দুর্যোগ দেখা দেওয়ার পূর্বেই ধাণ ফসল ঘরে তুলতে হবে। সেটার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব হলো কৃষি বিজ্ঞানীদের। কারণ নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে যেভাবে অন্যান্য দুর্যোগের সহনশীল ফসলের জাত আবিষ্কার করেছেন। এখন শুধু ধান চাষের উপর নির্ভর না করে ভাসমান পদ্ধতিতে শাক সবজি, ডাল, তেল, ভূট্টাসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ বাড়াতে হবে। তেমনিভাবে হাওরের জন্য উচ্চ ফলনশীল স্বল্পদিনে হয় এবং আগাম জাতের উন্নয়ন ঘটাতে হবে, যা নিয়ে কৃষি বিজ্ঞানীগণ কাজ করছেন। এভখাবেই সকলের সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমাদের এসব দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে।

এ বিষয়ে হাওরাঞ্চল নিয়ে ভাবেন এবং সেদিকে নজর রাখেন এমন কিছু বিশেষজ্ঞ মহল থেকে পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে বেশ কিছু পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। সেগুলোর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- (১) যেহেতু এসময় অন্যান্য এলাকায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়না, সেজন্য সেসব এলাকা থেকে যাতে কিছু শ্রমিক ভাটি/হাওরাঞ্চলে গিয়ে তাদের তলিয়ে যাওয়া ধান কেটে তুলতে সহায়তা করে দেয়, (২) সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান যেমন- কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত উন্নতপ্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াই মেশিন তথা- রাইস রিপার, কম্বাইন্ড রাইস হারভেস্টার, রাইস কাটার ইত্যাদি মেশিনের সুবিধা রয়েছে তাদেরকে এগুলো নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে, (৩) এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে দিলে তাদেরকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও খরচও প্রদান করা হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের তরফ থেকে।

অন্যদিকে সামনের দিনগুলোতে এ সমস্যা আরো কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে হলে যে বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে সেগুরো হলো- (১) ইতোমধ্যে লবণাক্ততা সহিষ্ণু, উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা নিরসনকারী কয়েকটি ধানের জাত আবিষ্কারের মাধ্যমে সেখানকার সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করতে সম্ভব করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা, (২) তেমনিভাবে হাওরাঞ্চলের জন্যও বেশ কয়েকটি স্বল্পমেয়াদি বোরো ধানের জাত ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে, আবার অনেকগুলো জাত আবিষ্কারের অপেক্ষায় রয়েছে। (৩) সেগুলোকে হাওরে বর্তমানে চাষকৃত জাতগুলোর স্থলাভিষিক্ত করতে হবে অতি তাড়াতাড়ি, (৪) আগাম বন্যা প্রতিরোধের জন্য আরো বেশী ও শক্তভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরী করতে হবে, (৫) বর্তমানে হাওর উন্নয়ন বোর্ড এবং ময়নসিংহস্থ বালাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নতুনভাবে স্থাপিত হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এর মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে হাওরাঞ্চলের জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিসের প্রত্যেকটিতে ধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াইয়ের জন্য রাইস রিপার, কম্বাইন্ড রাইস হারভেস্টার, রাইস কাটার ইত্যাদি মেশিনের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। সেগুলো পুরো বোরো মৌসুমজুড়ে বাড়িবাড়ি গিয়ে পালাক্রমে কৃষকের মাঠের ধান কেটে ঘরে ফসল তুলতে সহায়তা করতে পারবে। তাহলেই খাদ্যে উদ্বৃত্ত এ হাওরাঞ্চল অব্যাহতভাবে জাতীয় উৎপাদনে ব্যাপকভিত্তিক অবদান রাখতে পারবে।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ
পাক্ষিক কৃষিপ্রযুক্তি লেখক সম্মাননা-২০১৫, বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক-১৪২২ এবং কেআইবি কৃষি পদক-২০১৮ প্রাপ্ত লেখক, মোবাইল-০১৭১৫-২৮১৮৯২, email: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer