ছবি : বহুমাত্রিক.কম
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে এবারও হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মে গচ্চা যাচ্ছে সরকারে বিপুল অর্থ। নিন্মমানের কাজেই নয় অপ্রয়োজনীয় বাঁধ তাও আবার বেশীর ভাগ বালি দিয়ে তৈরী। ফলে বরাদ্দকৃত টাকাগুলো নিজেদের পকেটে নেয়ার জন্য নানা টালবাহান করছে পিআইসির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের মাটি ৫০ মিটার দূর থেকে না নেওয়া এবং কমপেকশন না হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ের কৃষক ও স্থানীয়রা। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ না করে যন্ত্রদানব দিয়ে বাঁধের গোঁড়া থেকে নিজেদের মনগড়া কাজ করে বাঁধে দুরমুজ না করে যন্ত্রদানব দিয়ে বাঁধের নিকট থেকে মাটি কেটে বাঁধকে হুমকির মুখে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দুরমুজ সহ সকল নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করার জন্য প্রথমে চলতি বছরের গত ৭ জানুয়ারি, পরে ৩০ জানুয়ারি ও সর্বশেষ ১৯ জানুয়ারি জেলার সকল উপজেলার ইউএনও ও পাউবো-প্রকৌশলীকে চিঠি দেন।
হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে পাউবোর নীতিমালা অনুযায়ী সব বাঁধেই মাটি দুরমুজ করা ও দূর্বা ঘাস দেবার নিয়ম নির্দেশনা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী মাটি দুরমুজের জন্য প্রতি ঘনমিটারে ৩৭.৫২ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। দূর্বাঘাস দেবার নিয়ম থাকলেও জেলার একটি বাঁধেও তা কেউ এখনও পর্যন্ত দিচ্ছে না। অথছ বাঁধের কাজ নাম মাত্র করেই শেষ করছে। আর টাকা উত্তোলনের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, জেলার ৯৬৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট বরাদ্দ ১৭৭ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ইউএনওদের ব্যাংক হিসাবে ১২২ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে পানি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। প্রাক্কলনে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে ৭ কেজি ওজনের লোহার হাতুড়ি দিয়ে বাঁধের মাটি দুরমুজ করতে হবে। প্রতি ৬ ইঞ্চি মাটি ফেলার পরপর হাতুড়ি দিয়ে কমপেকশন করার নিয়ম। কিন্তু কোন বাঁধেই পাউবোর নিয়ম অনুযায়ী কমপেকশন হচ্ছে না।
বাঁধে দূর্বাঘাস দেবার কথা থাকলেও কেউ দিচ্ছে না। হাওরের নীতিমালা পরির্বতন ও টাকার বরাদ্দ বেশী দিলেও সংশ্লিষ্ট অনেকের নেতিবাচক কর্মকান্ডের কারণে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে কৃষক। জেলায় নির্মাণাধীন হাওর রক্ষা বাঁধগুলো বর্তমানে যে অবস্থা তাতে বন্যা হলে কৃষকের ফসল প্রকৃত অর্থে সুরক্ষা দেওয়া যাবে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জেলার ৯৬৪টি প্রকল্পের ৬০-৭০ভাগ কাজ হয়েছে বলে দাবি করলেও বাস্থবের সাথে কোন মিল নেই। বাঁধে ৭৫ লাখ ঘনমিটার মাটির দুরমুজ খাতের ২০ভাগ বরাদ্দ (২৩ কোটি টাকা) এবং বাঁেধর দুই পাশেই দূর্বাঘাস দেওয়ার জন্য বরাদ্দ রয়েছে আরো প্রায় কয়েক কোটি টাকা।
বাঁধ নির্মাণে পৃথক পৃথক ভাবে বরাদ্দ থাকলেও জেলার ১১টি উপজেলার কোনো বাঁধেই দুরমুজ করা হচ্ছে না। হাওর পাড়ের কৃষকগন আরো জানায়, জেলার তাহিরপুর, শাল্লা, জামালগঞ্জ, দিরাই, ধর্মপাশা, ছাতক, দোয়রাবাজার, বিশ্বম্ভরপুরসহ ১১টি উপজেলার হাওর রক্ষা বাঁধেই সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না।
২৮শে ফ্রেরুয়ারির মধ্যে সকল বাঁধে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও অনেক বাঁধে কাজ শুরু করেছে ২৮ফ্রেরুয়ারির পর। এছাড়াও যন্ত্রদানব (এক্সেভেটর) বা ট্রাক দিয়ে একসাথে অনেক মাটি ফেলায় কমপেকশন (দুরমুজ) করার কোন সুযোগই থাকছে না। ৬ ইঞ্চি করে মাটি ফেলার নিয়ম থাকলেও এক সাথেই অন্তত ৪-৫ফুট উঁচু করে মাটি ফেলা হচ্ছে।
এরপর এই মাটির উপর ট্রাক বা এক্সেভেটর চালানো হচ্ছে। পিআইসির সভাপতিদের দাবি বাঁধে মাটি ফেলার পর এক্সেভেটর চলাচল করায় দুরমুজের কোনো প্রয়োজন হয় না। তবে পিআইসির সভাপতিদের এসব দাবি মানতে নারাজ পাউবো কর্তৃপক্ষ।
বাঁধে সঠিক ভাবে কমপেকশন করার জন্য সকল কাবিটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদস্য সচিব পাউবোর শাখা কর্মকর্তাদের চিঠি দিলেও কার্যকর ফল পাওয়া যায় নি। বাঁধের প্রকৃত অবস্থা দেখেই বিল প্রদান করার দাবী জানাই।
সাংবাদিক বিপ্লব রায় জানান, শাল্লা উপজেলায় যেখানে বাঁধের প্রয়োজন নেই সেখানে বাঁধ নির্মানের নামে প্রকল্প বরাদ্ধ দিয়ে পুকুর চুরি করছে। বাঁধে দুরমুজ সহ সঠিক ভাবে কোন কাজ না করায় এসব অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় আমার উপর হামলা চালিয়ে আমাকে আহত করে পিআইসি ও সাধারন সম্পাদকরা।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, আমি জেলার বিভিন্ন হাওরের বাঁধ পরির্দশন করেছে দেখেছি বেশীর ভাগ বাঁধে দুরমুজ করা হয় নি। ফলে বাঁধ গুলো দূর্বল রয়েছে। আর দুর্বাঘাস কোন বাঁেধই দেওয়া হয় নি। কিন্তু এ দুটি খাতে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। বাঁধে যে পরিমাণ কাজ হয়েছে সেই পরিমাণ কাজের টাকা দেওয়া হবে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের দুরমুজ করা হচ্ছে না। দূর্বাঘাস লাগানোরসহ এ বিষয়ে বার বার কাবিটা উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তারপরও সঠিক ভাবে নীতিমালা অনুসরণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বাঁধের প্রকৃত অবস্থা দেখেই বিল প্রদান করা হবে।
বহুমাত্রিক.কম