ঢাকা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে নস্যাৎ করতেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়টি এখন স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, তাঁর হত্যাকারীরা বাংলাদেশ থেকে তাঁর আদর্শকে বিনষ্ট করতে সমর্থ হয়নি।
জাতির পিতার ৪১তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন ও তাঁর রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এ কথা বলেন।
বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদ জানান, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর নামেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তিনিই বাংলাদেশের স্থপতি। বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছিলেন, তা নস্যাৎ করতেই তাঁকে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আদর্শের উপর আঘাত নেমে আসে। তবে এ কথা আজ স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, তাঁর হত্যাকারীরা বাংলাদেশ থেকে তাঁর আদর্শ বিনষ্ট করতে সমর্থ হয়নি।
তিনি বলেন, মানুষ বর্তমানে যেভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, সেভাবে তাঁর আদর্শকেও রাষ্ট্রীয় জীবনে পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে।
বরেণ্য বুদ্ধিজীবী আরো বলেন, এ কথা স্বীকার্য যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা এবং পরবর্তীকালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর নিন্দুকেরা জাতিকে অনেকখানি বিভক্ত করতে সমর্থ হয়েছে। তাই, এখন আমাদের কর্তব্য হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে ও রাষ্ট্রীয় আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের সেই জাতীয় ঐক্য যতদূর সম্ভব প্রতিষ্ঠা করা।
বঙ্গবন্ধুর নামেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে উল্লেখ করে এমিরিটাস অধ্যাপক বলেন, দেশের সর্বস্তরের মানুষ তখন তাঁর নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেন। তাঁর নেতৃত্বের প্রতি মানুষ যেমন আস্থা রেখেছিলেন, তিনিও তেমনি মানুষের সে আস্থার মর্যাদা সমুন্নত রেখেছেন। দেশের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ অতুলনীয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনায় যেসব মূলনীতি প্রণয়ন করেছিলেন তা পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরের সংগ্রামের মধ্যদিয়েই বিকাশ লাভ করেছিল।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ব্যক্ত ছিল। তারপরও ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন তার ঐতিহাসিক প্রমাণাদি উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও যারা তা মানতে চান না, তারা ইতিহাসের সত্যকেই অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর স্বল্প সময়ের ক্ষমতাকালে একটি আদর্শ সংবিধান প্রণয়ন এবং শিক্ষা-শিল্প-বাণিজ্য-পররাষ্ট্র ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিও বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ঘাতকের গুলিতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেমন আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তেমনি পরিত্যক্ত হয় ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূলনীতিসমূহ। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন সম্ভব হবে।