Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

‘স্বাধীনতার প্রশ্নে নেতাজি ও বঙ্গবন্ধুর বহু মিল’

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

আপডেট: ১৮:১৩, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

প্রিন্ট:

‘স্বাধীনতার প্রশ্নে নেতাজি ও বঙ্গবন্ধুর বহু মিল’

ছবি : সিরাজুল সালেকীন

ঢাকা : দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বহু মিল রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মত অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২১তম জন্মবার্ষিকী ও দেশপ্রেম দিবস উপলক্ষে বহুমাত্রিক.কম আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার বিকালে ঐতিহাসিক এই দিনে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘নেতাজি কংগ্রেসের রাজনীতি করতেন, সেটি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বঙ্গবন্ধুও একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন। উভয়েরই একটি জায়গায় মিল-তারা মনে করতেন অপশক্তিকে-স্বৈরশক্তিকে সরিয়ে স্বাধীনতা আনতে হলে একটি কাউন্টার ফ্রন্ট দরকার। যার জন্য তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেছিলেন। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে বাংলাদেশিদের নিয়ে একটি গোপন সংঘ গঠন করেছিলেন, যা আমরা পরবর্তীতে দেখতে পাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা লাভের জন্য দুই নেতার এই যে পদক্ষেপ-সেই পদক্ষেপে অসম্ভব মিল রয়েছে। এটাই যে সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জনের মূল পথ আমরা তা বুঝতে পারি।’

জেষ্ঠ এই রাজনীতিক বলেন, ‘নেতাজিকে কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়ার পর স্বাধীনতা অর্জনের ওই কাজেই হাত দিয়েছিলেন। উনার কাজটা যে সঠিক ছিল এটা ব্রিটিশরা এখন স্বীকার করছে, সেদিন যদি সেনা বিদ্রোহ না হত নৌবিদ্রোহ না হত তা না হলে কিন্তু তারা অন্যরকম চিন্তা করত।’

তিনি বলেন, ‘দুই নেতার অসম্ভব মিল। বঙ্গবন্ধু নেতাজির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন শৈশবে-কৈশোরে। এবং সেইদিকেই তিনি ধাবিত হয়েছিলেন পরবর্তীকালে। ভারতবর্ষে যে স্বাধীনতা এই স্বাধীনতার চিত্র এমন হতো না যদি না নেতাজি কংগ্রেসের সভাপতি থাকতেন। এবং শেরেবাংলা মুসলিম লীগের সভাপতি থাকতেন। দু’জনই বাঙালি-তাদের দু’জনকেই ষড়যন্ত্রে দল থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে, এটাই হল বাস্তবতা-ঐতিহাসিক সত্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার কারণ হচ্ছে ১৯৪০ সালে লাহোরে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের কনফারেন্স হল-সেই কনফারেন্সে শেরেবাংলা যে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব দিলেন-সেটা ছিল ইউনাইটেড বেঙ্গল একটি আলদা রাষ্ট্র থাকবে। ব্রিটিশ যদি ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে যায় তাহলে অবিভক্ত বাংলা থাকবে। শেরেবাংলার সেই প্রস্তাব লাহোর অধিবেশনে গৃহীত হয়েছিল। ওইদিন থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, তাকে মুসলিমলীগের পদ ছেড়ে দিতে হল। ১৯৪২সালে আবার লাহোরে মুসলিমলীগের সম্মেলনে ওই প্রস্তাব বাতিল করা হল। ঠিক তেমনিভাবে কংগ্রেসের নেতৃত্বেও কিন্তু কংগ্রেসকে সরে যেতে হয়েছিল। বিপুলভোটে জয়যুক্ত হওয়ার পরও কংগ্রেসে থাকতে পারেননি।’

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘লক্ষ্য করি এই ষড়যন্ত্র অনেকদূর এগিয়েছিল। কিছুদিন আগে পত্রিকায় পড়েছিলাম, ব্রিটিশরা এত তাড়াতাড়ি ভারত ছেড়ে যেত না যদি না নেতাজির নেতৃত্বে ভারতীয় বাহিনীর জায়গায় বিদ্রোহ না হত। যে কারণে ব্রিটিশরা ভীত হয়েছিল, বুঝতে পেরেছিল, ভবিষ্যতে প্রত্যেকটি যুদ্ধে তারা পরাজয় বরণ করবে। তাই তরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারতবর্ষ ত্যাগ করার।’

নেতাজির বাংলাদেশে আসার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘নেতাজি বাংলদেশে এসেছিলেন-বরিশালেই এসেছিলেন, আমার মামা জাহিদ হোসেন জাহাঙ্গীর ছিলেন আরএসপির মূল নেতা। আমার বাড়ির রাস্তার উল্টো দিকেই তাঁর অফিস ছিল। নেতাজি ওই অফিসে এসেছেন। আমাদের বাড়িতে খেয়েছেন। শুনেছি আমি নাকি তাঁর কোলেও উঠেছিলাম। আমি আজ শ্রদ্ধার সাথে নেতাজিকে স্মরণ করছি।’
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।

বাংলাদেশে নেতাজির জন্মদিন উদযাপনের আয়েঅজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে হাই কমিশনার বলেন, ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে এই আয়োজনের জন্য বহুমাত্রিক.কম-কে ধন্যবাদ জানাই। ইন্ডিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান নেতা সুভাষচন্দ্র বসু। ইন্ডিয়ার তরুণদের কাছে তিনি আদর্শ। তাঁর সাহসের কথা সবাই জানেন। বাংলাদেশেও নেতাজি অনেক সম্মানিত জেনে আমি খুব খুশি হয়েছি।’

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘নেতাজি বাংলাদেশে এসেছিলেন। কলকাতা থেকে আফগানিস্তান পালিয়ে যাবার আগে তৎকালীন পূর্ববাংলাতে অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। আমি শুনেছি-নারায়নগঞ্জে নেতাজির নামে একটি ক্যাফে আছে। আমি সেখানে যেতে চাই।’

‘নেতাজি অনেক মেধাবী ছিলেন। তিনি পুরো কলকাতায় ম্যাট্রিকুলেশনে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ও ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। আইসিএস পরীক্ষায় তিনি ব্রিটিশ সরকারের চাকরি করেননি। সুভাষ বসুকে নিয়ে অনেক সিনেমা ডকুমেন্টারি হয়েছে। নেতাজি বলেছিলেন, তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। তাঁর স্লোগান ‘জয়হিন্দ’ এখনও আমরা বলি। যারা এই মহান নেতাকে সম্মান জানিয়ে এখানে এসেছেন, তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ’-বলেন বন্ধপ্রিতীম দেশ ভারতের এই দূত।

পর পর বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীতে শুরু হয় ইতিহাসের মহানায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন উদযাপনের এই আয়োজন। রূপশ্রী চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন-বহুমাত্রিক.কম’র উপ-সম্পাদক মাহেনূর মোস্তারি। অনুষ্ঠানে নেতাজি ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বহুমাত্রিক.কম এর প্রধান সম্পাদক এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম।

এতে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন নেতাজি বিশেষজ্ঞ ও কলকাতার আলিপুর বার্তার সম্পাদক ড. জয়ন্ত চৌধুরি। এতে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন-সমাজকর্মী আজিজুল হক, বাংলাদেশ অনলাইন মিডিয়া এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম খান, কৃষিবিদ ড. ফররুখ আহমেদ ফারুক প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে নেতাজিকে নিবেদন করে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মহিউজ্জামান চৌধুরী(ময়না)। আয়োজনে নেতাজিকে নিয়ে প্রকাশিত বিশেষ প্রকাশনা ‘বীরবন্দনা’র মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। পরে জাতীয় জাদুঘর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়।

‘বহুমাত্রিক.কম’ এর সার্বিক আয়োজনে অনুষ্ঠানের গণমাধ্যম সহযোগি ছিল ছাড়পত্র ডটকম ও প্রতিদিনের চিত্র। 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer