ছবি: সংগৃহীত
সন ১৯৪৫। নেতাজি সুভাষচন্দ্রের খোঁজ নেই। আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিচার শুরু হচ্ছে দিল্লির লালকেল্লায়। অভিযোগ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে বিশ্বাসঘাতকতা, নির্যাতন ও হত্যা। বাহিনীর কর্নেল প্রেম সেহগাল, কর্নেল গুরবক্স সিংহ ধিলন এবং মেজর জেনারেল শাহনওয়াজ খানকে হাজির করা হয় বিচারকমণ্ডলীর সামনে। আজাদ হিন্দ বাহিনীর এই বিচারকে ইতিহাসবিদরা স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্তিম পর্যায়ের সূত্রপাত বলে মনে করেন।
আজাদ হিন্দের বিচারকে ব্রিটিশ সরকার যতটা নাটকীয়ভাবে শুরু করেছিল, তার চারগুণ নাটকীয়তায় উত্তাল হয়ে ওঠে ভারতীয় উপমহাদেশ। সাধারণ মানুষের আবেগ, রাগ, ক্ষোভ যে আকার ধারণ করেছিল, তার চেহারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসেও অদৃষ্টপূর্ব। আজাদ হিন্দের বিচারের প্রতিক্রিয়ায় জেগে ওঠে বোম্বাইয়ের ম্যাজাগন ডক। শুরু হয় নৌবিদ্রোহ। সমু্দ্রের সেই সংক্ষোভ আছড়ে পড়ে কলকাতায়, সারা দেশে। ব্রিটিশ সরকার বুঝে যায়, তার দিন ফুরিয়েছে।
এই ইতিহাস আজ আক্ষরিক অর্থেই পাঠ্য বইয়ের নীরস পাতায় বন্দি। আজকের প্রজন্মের ভারতীদের কাছে সুভাষচন্দ্র মিথ আর আইএনএ-ও এক ধূসর কিংবদন্তি। বলিউডে যখন বায়োপিকের চাষ, তখনও তেমনভাবে কেউ ভাবেননি এই বীরদের নিয়ে ছবি করার কথা। শ্যাম বেনেগালের ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস: দ্য ফরগটন হিরো’ (২০০৫) ছবিটি ছাড়া বাকি সর্বত্রই নেতাজি ও তাঁর বাহিনী প্রান্তিকই থেকে গিয়েছেন বলিউডি কর্মকাণ্ডে। কমল হাসান অভিনীত ‘হিন্দুস্থানী’ (১৯৯৬) ছবিতে প্রোটাগনিস্ট সেনাপতি একদা আজাদ হিন্দ বাহিনীতে ছিল বলে দেখানো হয়, কিন্তু সে ছবিও আদতে তামিল ভাষায় নির্মিত।
কেন নেতাজি ব্রাত্য রইলেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অন্যতম বাচননির্মাতা বলিউডে, কী ছিল এর পিছনের রাজনীতি— এ সবই গবেষণার বিষয়। এদেশের এক বিশেষ পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতির সঙ্গে তার যোগ খোঁজেন নেতাজি-প্রেমীরা। কিন্তু তা দিয়ে কোনও দিনই পুরো উত্তর পাওয়া যায় না। মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট বা তাকে ঘিরে বিতর্কও নেতাজিকে ফিরিয়ে আনেনি এদেশের গণচেতনার মূলধারায়। বিশাল ভরদ্বাজ পরিচালিত সাম্প্রতিক ছবি ‘রেঙ্গুন’-এ আজাদ হিন্দ ফিরেছে স্বমহিমায় কিন্তু সেটা একান্ত ভাবেই কল্প-ইতিহাস।
লার্জার দ্যান লাইফ চিত্রায়ন নয়, আজাদ হিন্দের প্রকৃত চেহারাটিকেই তুলে ধরতে এগিয়ে এসেছে রাজ্যসভা টিভি। গুরদীপ সিংহ সপ্পলের প্রযোজনায় আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিচারকে ডিজিটাল ফ্রেমে ধরেছেন পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়া। ‘রাগদেশ’ নামের এই ছবি আগামী ২৮ জুলাই মুক্তি পেতে চলেছে রাজ্যসভা টিভি-র উপস্থাপনায়।
ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে ‘রাগদেশ’-এর ট্রেলার। ইউটিউবে কৌতূহলীদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। প্রেম সেহগাল, কর্নেল ধিলন এবং শাহনওয়াজ খানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কুনাল কপূর, অমিত সাধ এবং মোহিত মারওয়াহ্।
এই ছবিতে নেতাজির ভূমিকায় রয়েছেন অসমীয়া অভিনেতা কেন বসুমাতারি। এ পর্যন্ত যতজন নেতাজির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, বসুমাতারি, তাঁদের মধ্যে সবথেকে কাছাকাছি বলে শোনাও যাচ্ছে। আইনজীবী ভুলাভাই দেশাইকেও এই ছবির চিত্রনাট্য এক বিরাট জায়গা দিয়েছে। এই চরিত্রে অভিনয় করছেন কেনেথ দেশাই। এছাড়াও একটি বিশেষ চরিত্রে রয়েছেন কনওয়ালজিৎ সিংহ।
তিগমাংশুর ২০১২-র ছবি ‘পান সিং তোমর’-এ জাতীয়তাবাদের এক উল্টো সুরকে শোনা গিয়েছিল। এবারে কি তিনি এক প্রান্তিক সুরকে শোনাবেন? আপেক্ষায় দিন গুনছে ভারত। এবেলা’র সৌজন্যে