Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

সেরা বেসরকারি কলেজ ঢাকা কমার্স

এস এম আলী আজম

প্রকাশিত: ০০:৫০, ২৪ মে ২০১৬

আপডেট: ০১:০৯, ২৪ মে ২০১৬

প্রিন্ট:

সেরা বেসরকারি কলেজ ঢাকা কমার্স

ঢাকা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ র‌্যাংকিং ২০১৫-এ ঢাকা কমার্স কলেজ জাতীয় পর্যায়ে সেরা বেসরকারি কলেজ নির্বাচিত হয়েছে। ৩১টি সূচকের ভিত্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত ৬৮৫টি অনার্স ও মাস্টার্স কলেজে ২০১৫ সালের জন্য স্কোরের ভিত্তিতে র‌্যাংকিং এর উদ্যোগ গ্রহণ করে।

গত ১৪ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ এক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে র‌্যাংকিং এর ফল ঘোষণা করেন। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ৫টি, সেরা মহিলা কলেজ ১টি, সেরা সরকারি কলেজ ১টি, সেরা বেসরকারি কলেজ ১টি (মোট ৮টি) এবং ৭টি আঞ্চলিক পর্যায়ের প্রত্যেকটিতে সর্বোচ্চ ১০টি করে সর্বমোট ৭৮টি নির্বাচিত সেরা কলেজকে ২০ মে জাতীয় যাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মারক সম্মাননা, সনদ ও পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি এবং ইউজিসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাংকিং-এ নির্বাচিত কলেজসমূহকে অভিনন্দন জানিয়ে এমন আয়োজনের ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, “এ ধরনের আয়োজন দেশে প্রথম। এর ফলে কলেজসমূহ তাদের স্ব স্ব অবস্থান জানতে পারবে এবং কীভাবে শিক্ষার সার্বিক অবস্থার আরোও উন্নতি করা যায় সে জন্যে প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। কলেজসমূহের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতার অবস্থা সৃষ্টি হবে, যা কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”

র‌্যাংকিং-এ জাতীয় পর্যায়ে ৫টি সেরা কলেজ এর মধ্যে ৪র্থ স্থানে রয়েছে ঢাকা কমার্স কলেজ, র‌্যাংকিং-এ জাতীয় পর্যায়ে সেরা বেসরকারি কলেজ ঢাকা কমার্স কলেজ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ অঞ্চলের ১০টি সেরা কলেজের মধ্যে ৩য় স্থানে রয়েছে ঢাকা কমার্স কলেজ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবারের মতো সেরা কলেজের র‌্যাংকিং-এ ঢাকা কমার্স কলেজ জাতীয় পর্যায়ে সেরা বেসরকারি কলেজ নির্বাচিত হওয়ায় কলেজ পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সফিক আহমেদ সিদ্দিক কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আবু সাইদ বলেন, ঢাকা কমার্স কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অত্যন্ত গতিশীল ও উন্নত। কলেজটি স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত হয়েও বিশাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) প্রফেসর মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, অত্যন্ত সঙ্গত কারণেই ঢাকা কমার্স কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং-এ সেরা কলেজের স্বীকৃতি পেয়েছে।

এরূপ সম্মাননা ও স্বীকৃতি দেয়ায় তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উপদেষ্টা অ্যাকাডেমিক প্রফেসর মোঃ মোজাহার জামিল বলেন, নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে ঢাকা কমার্স কলেজ বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় প্রতিবছরই সেরা ফলাফল অর্জন করছে।

১৯৮৯ সালে রাজধানীর কিং খালেদ ইনস্টিটিউটের শিশুদের আঙ্গিনায় ভূমিষ্ঠ হলো ধূমপান ও রাজনীতিমুক্ত এবং স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত আলোকবর্তিকা, যার রোদ ও তেজে ভেসে যায় শিক্ষাকাশের কালোমেঘ, শৈশবেই যার বলিষ্ঠ চাহনিতে মুগ্ধ সকলে, কৈশোরে যার নাম তামাম দেশ জুড়ে, যৌবনে যে শিক্ষার বিশ্বপল্লীতে অবগাহন করছে, সর্বদাই যে সাফল্যের শীর্ষে, তার নাম ঢাকা কমার্স কলেজ।

ঢাকা কমার্স কলেজ ১৯৯৬ সালে মাত্র ৭ বছরের শিশুকালে এবং ২০০২ সালে ১৩ বছরের কৈশোরকালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক কাজী মোঃ নুরুল ইসলাম ফারুকী যার নেতৃত্বে ঢাকা কমার্স কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, তিনি ১৯৯৩ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের স্বীকৃতি লাভ করেন। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ সামসুল হুদা, এফসিএ। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আবু সাইদ।

ঢাকা কমার্স কলেজের পরিচালনা পরিষদে রয়েছেন দেশজুড়ে সুপরিচিত শিক্ষাবিদ, প্রশাসক ও সমাজসেবী ব্যক্তিবর্গ। ঢাকা কমার্স কলেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (১৯৮৮-৮৯)-র আহ্বায়ক ছিলেন অধ্যাপক কাজী মোঃ নুরুল ইস্লাম ফারুকী, সাংগঠনিক কমিটি (১৯৮৯-৯০)-র সভাপতি ছিলেন বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তোহা, নির্বাহী কমিটি (১৯৯০-৯১) এর সভাপতি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রশিদ চৌধুরী।

কলেজ পরিচালনা পরিষদের পূর্ববর্তী চেয়ারম্যানগণ হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. শহীদ উদ্দীন আহমেদ (১৯৯১-৯৮), সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এ এফ এম সরওয়ার কামাল (২০০২-২০০৯) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সফিক আহমেদ সিদ্দিক (১৯৯৮-২০০১ ও ২০০৯ থেকে বর্তমান)।

ঢাকা কমার্স কলেজের উদ্দেশ্য বাণিজ্য বিষয়ক তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত করে গড়ে তোলা। কলেজের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার জন, শিক্ষক সংখ্যা ১৩২, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১০৩ এবং পরিচালনা পরিষদ ১৬ সদস্য বিশিষ্ট। এ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ব্যবসায় শিক্ষা ছাড়াও ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, মার্কেটিং, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, ইংরেজি ও অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স রয়েছে। এছাড়া রয়েছে বিবিএ (অনার্স) প্রফেশনাল কোর্স।

শিগগির খোলা হচ্ছে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইলেকট্রনিক্্র অনার্স কোর্স। ঢাকা কমার্স কলেজের রয়েছে অত্যাধুনিক কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, যেখানে প্রায় ৩৫ হাজার বই ও জার্নাল রয়েছে। এছাড়া সকল সম্মান শ্রেণির বিভাগে স্বতন্ত্র সেমিনার লাইব্রেরি রয়েছে। সবগুলো সেমিনার লাইব্রেরিতে প্রায় ১৫ হাজার গ্রন্থ রয়েছে। কলেজের ৪ তলায় রয়েছে অত্যাধুনিক ৪টি কম্পিউটার ল্যাব। কলেজের পরীক্ষা ও হিসাব কার্যক্রম অটোমেশনের মাধ্যমে সম্পাদন করা হচ্ছে। শিগগির ডায়নামিক ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে কলেজের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাদি সফ্টওয়্যারে সম্পাদন করা হবে। সাফল্যের সুতিকাগার ঢাকা কমার্স কলেজের অর্থায়নে ৫ এপ্রিল ২০০৩ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যবসায় ও প্রযু্িক্ত শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)’।

ঢাকা কমার্স কলেজের সাফল্যের ভিত্তি একদল কমিটেড শিক্ষকের আন্তরিকতাপূর্ণ টিমওয়ার্ক। শিক্ষকদের মানোন্নয়নে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় সেমিনার এবং শিক্ষক ওরিয়েন্টেশন ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম। প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম-শৃঙ্খলা এবং শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে ঈর্ষণীয় সাফল্য ক্ষয়িষ্ণু সমাজ প্রেক্ষাপটে উজ্জ্বল আশা ও সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে। শিক্ষার্র্থী-অভিভাবক সর্বদা কলেজের বিধি-বিধান মেনে চলছেন।

স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত এবং রাজনীতি ও ধূমপান মুক্ত ঢাকা কমার্স কলেজ বাংলাদেশের একটি আর্দশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার ও কোর্স প্ল্যান অনুযায়ী এ কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হয়। সাপ্তাহিক, মাসিক ও তিন মাস অন্তর পর্ব পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। কলেজের নিয়ম-শৃঙ্খলা সকল ছাত্র-ছাত্রীকে অবশ্যই মেনে চলতে হয়। প্রতি টার্ম পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সেকশন পরিবর্তন করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাল ফলাফল করার জন্য প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সৃষ্টি হয়। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ফলাফল অর্জন করছে।

ব্যবসায় শিক্ষার সেরা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কমার্স কলেজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো শিক্ষার্থীদের পূর্বের চেয়ে ভালো ফল অর্জন করার নিশ্চয়তা। নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে সেরা পণ্য তৈরি যেনো এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই সম্ভব। জুৎসই পাঠদান ও পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অবিরাম সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির। অত্র কলেজের এইচএসসি প্রথম ব্যাচ (১৯৯১) বোর্ড পরীক্ষায় শতভাগ পাসসহ মেধাতালিকায় শিক্ষার্থীরা ২য় ও ১৫তম স্থান অর্জন করে। বোর্ড মেধাতালিকায় অত্র কলেজের শিক্ষার্থীরা ১৯৯২ সালে ১ম ও ১৬তম স্থান, ১৯৯৩ সালে ২য় সহ ৫ জন, ১৯৯৪ সালে ১ম সহ ৪ জন, ১৯৯৫ সালে ১ম ও ৩য় সহ ১০ জন, ১৯৯৬ সালে ১ম সহ ১৩ জন, ১৯৯৭ সালে ৪ জন, ১৯৯৮ সালে ৭ জন, ১৯৯৯ সালে ৮ জন, ২০০০ সালে ১ম, ২য় ও ৩য় সহ ১৩ জন, ২০০১ সালে ১ম সহ ৬ জন ও ২০০২ সালে ১ম ও ৩য় সহ ৪ জন মেধাস্থান লাভ করে। ২০০৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত জিপিএ পদ্ধতিতে এইচএসসি পরীক্ষায় অত্র কলেজের গড় পাসের হার ৯৯.৮% এবং এই ১৩ বছরে ২২০৮৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৯৩২ জন, যা ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় দেশের যে কোনো কলেজের তুলনায় সর্বোচ্চ। সৃষ্টিলগ্ন থেকে কলেজে গড় পাসের হার উচ্চ মাধ্যমিকে প্রায় ৯৮%, অনার্স-এ ৯৪% ও মাস্টার্স -এ ৯৭%।

ঢাকা কমার্স কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রন্থকীট হয়ে নেই। শিক্ষাসম্পূরক কার্যক্রমেও এরা সদা অগ্রগামী। প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বনভোজন, সুন্দরবন ভ্রমণ, নৌবিহার, শিক্ষাসফর, অফিস ও কারখানা পরিদর্শন, বার্ষিক ভোজ, মিলাদ ইত্যাদি। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অত্র কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে প্রায় প্রতি বছরই পদক ছিনিয়ে আনছে। শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভা পরিস্ফুটন ও নেতৃত্ব বিকাশে রয়েছে বিএনসিসি নৌ উইং, আন্তর্জাতিক রোটার‌্যাক্ট ক্লাব, আর্টস এন্ড ফটোগ্রাফি সোসাইটি, সাধারণজ্ঞান ক্লাব, বির্তক ক্লাব, আবৃত্তি পরিষদ, নাট্য পরিষদ, নৃত্য ক্লাব, সঙ্গীত পরিষদ, রিডার্স এন্ড রাইটার্স সোসাইটি, ল্যাগুয়েজ ক্লাব, ভয়েস অব আমেরিকা ফ্যান ক্লাব, নেচার স্টাডি ক্লাব, সাইক্লিং ও স্কেটিং ক্লাব এবং বন্ধন সমাজকল্যাণ সংঘ।

কলেজে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, রেডক্রিসেন্ট, সন্ধানী, অরকা, থ্যালাসেমিয়া হাসপাতাল ও আহছানিয়া মিশন রক্তদান ইউনিট এবং যুব পর্যটক ক্লাব শাখা সামাজিক কর্মকা- সম্পাদন করছে। কলেজের রয়েছে ‘কণিকা’ রক্তদান সংগঠন। সামাজিক কর্মকা-েও ঢাকা কমার্স কলেজ নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বন্যার্ত ও শীতার্তদের মাঝে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে থাকে। প্রতিবারই রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সকল শ্রেণিতে প্রত্যহ প্রথম ঘণ্টায় অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সাধারণজ্ঞান ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা কমার্স কলেজের রয়েছে সমৃদ্ধ প্রকাশনা ভান্ডার। বার্ষিকী, মাসিক পত্রিকা, জার্নাল, বিভাগীয় স্যুভেনির, ক্লাব স্যুভেনির, সার্ক ট্যুর স্যুভেনির, বিশেষ স্মরণিকা, স্মৃতি অ্যালবাম, ক্যালেন্ডার, ডায়েরি, টেলিফোন ইনডেক্স, প্রশ্নব্যাংক, দেয়ালিকা, শুভেচ্ছাকার্ড ইত্যাদি নিয়মিত বর্ধিত কলেবরে প্রকাশিত হচ্ছে। ঢাকা কমার্স কলেজই দেশে প্রথম অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করে। প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া অত্র কলেজের সংবাদ গুরুত্বসহ সচিত্র প্রকাশ করছে।

৬ অক্টোবর ১৯৮৮ মাত্র ১৫শ’ ৫০ টাকা নিয়ে যে প্রকল্পের পদযাত্রা, ২৫ বছরেই তা বেসরকারিভাবে সম্পদে-শৌর্যে সূর্য ছুঁয়েছে। সরকার বা দাতাদের অনুদান ছাড়াই ঢাকা কমার্স কলেজ কমপ্লেক্স-এর উন্নয়ন কার্য মহীরূহে পরিণত হয়েছে। আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষার প্রজ্জ্বলিত মশাল হাতে প্রতিষ্ঠানটি শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের কোল ঘেঁষে। আধুনিক স্থাপত্যকলা ও নির্মাণশৈলী এবং মনোলোভা সৌকর্যমন্ডিত কলেজ ভৌতকাঠামো যেন পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। প্রতি তলায় ১০ হাজার ৬শ’ বর্গফুট মেঝের ১১ তলা বিশিষ্ট ১নং অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি তলায় ৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫ তলা বিশিষ্ট ২ নং অ্যাকাডেমিক ভবনের নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ৮ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনের ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত নির্মাণ শেষ হয়েছে। ১২ তলা বিশিষ্ট ২টি শিক্ষক ভবনে ৬৬ জন শিক্ষক সপরিবারে বসবাস করছেন।

১৫শ আসন বিশিষ্ট অধ্যাপক কাজী মোঃ নুরুল ইস্লাম ফারুকী অডিটোরিয়াম এর নির্মাণ কার্য সম্পন্ন হয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসে ২০১৩ সাল থেকে চালু হয়েছে ৭২ আসন বিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস। অডিটোরিয়াম সংলগ্ন কলেজ মাঠটি যেন আবাসিক শিক্ষক পরিবার ও শিক্ষার্থীদের ‘ফুসফুস’। কলেজের রয়েছে অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদিসহ জিমনেশিয়াম। কলেজ অঙ্গনে ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। ১নং অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচ তলায় রয়েছে আধুনিক ক্যাফেটেরিয়া এবং ২নং অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচ তলায় রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঞ্জেগানা নামাজ ঘর। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাকাডেমিক ভবনসমূহে নিয়মিত বিদ্যুত সরবরাহের সুবিধার্থে কলেজ প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে ২টি জেনারেটর। কলেজ ও আবাসিক ভবনের পানীয় ব্যবস্থা কলেজের নিজস্ব ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে করা হচ্ছে। রূপনগর আবাসিক এলাকা ও মিরপুর বেরিবাঁধ সংলগ্ন কলেজের কয়েকটি প্লটে কর্মচারী আবাসিক ভবন, ছাত্রাবাস, ছাত্রী নিবাস ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

ঢাকা কমার্স কলেজের ৩৫ হাজার প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী ইতোমধ্যে তাদের ক্ষুরধার মেধা, নিপুণ যোগ্যতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দ্বারা দখল করে নিয়েছে দেশের সব শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক-বিমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণমাধ্যম পর্যন্ত। দীর্ঘ ২৫ বছর ঢাকা কমার্স কলেজ বিরামহীন ও নিরবচ্ছিন্নভাবে কৃতিত্ব আর উন্নয়নের মহাসড়কে চলছে আর চলছে; কখনও তাকে থেমে থাকতে হয়নি। সাফল্যের কক্ষপথ পরিক্রমায় কোনোরূপ বিচ্যূতির সম্ভাবনা দেখা যায়নি। ঢাকা কমার্স কলেজ ইতিহাসে নিয়ত সংযোজিত হোক নব সাফল্যের অনবদ্য সৃষ্টি- এই আমাদের প্রত্যাশা।

কর্মই ধর্ম। ঢাকা কমার্স কলেজের সৃজনশীল শিক্ষকেরা পরিচালকবৃন্দের সুনীতি ও যৌথ সিদ্ধান্ত এবং প্রশাসনের পরামর্শমূলক নির্দেশনায় প্রচেষ্টা আর সফলতার হালখাতা প্রতিনিয়ত চষে বেড়াচ্ছেন। বিশাল অবকাঠামোর মহীরূহ, পরীক্ষার ফলাফলের অপ্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রত্যহ বহুরূপ শিক্ষা সম্পূরক কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের সুযোগ ইত্যাদি বিষয়াদি ঢাকা কমার্স কলেজকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে।

এস এম আলী আজম: সহযোগী অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা কমার্স কলেজ

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer