Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

সেইসব মধুর স্মৃতি ভুলতে পারিনি আজও : নবী চৌধুরী

শওকত আলী বেনু

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৭ এপ্রিল ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

সেইসব মধুর স্মৃতি ভুলতে পারিনি আজও : নবী চৌধুরী

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

লন্ডন থেকে : প্রবাসী কবি ও চিকিৎসক ক্যাপ্টেন (অব:) গোলাম নবী চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের বো এলাকায়। প্রবাসী এই নিউরোলোজিস্ট অবসর জীবনেও বেশ রোমান্টিক, কথা ও ভাবনায়।

কুষ্টিয়ার গোসাইন দুর্গাপুরের আড়পাড়া গ্রামের আব্দুল আজিজ চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র নবী চৌধুরী`র সাথে বহুমাত্রিক.কম এর পক্ষে কথা বলেছেন শওকত আলী বেনু।

ইতিপূর্বে দুই পর্বে তুলে ধরা হয়েছিল নবী চৌধুরীর যাপিত জীবনের দিনলিপি। আলাপচারিতার পরবর্তী অংশ তুলে ধরা হলো তৃতীয় (শেষ) পর্বে।

বহুমাত্রিক.কম : আপনার শৈশব সম্পর্কে কিছু বলুন। কিভাবে কেটেছে ছেলেবেলার দিনগুলো?

নবী চৌধুরী : ছোটবেলায় অনেক দুষ্টুমি করেছি। সেইসব মধুর স্মৃতি আমি আজও ভুলতে পারিনি।বন্ধুদের সঙ্গে করা সব দুষ্টুমি সেই সময় জীবনটাকে রঙিন করে তুলেছিল। এর গাছের আম, ওর গাছের বড়ই এইসব চুরি করতাম। মার হাতে অনেক মার খেয়েছি । বকুনি খেয়েছি। সেইগুলো বলে শেষ করা যাবে না।

একবার কী হলো জানেন? খুব সকালে বড়ই গাছে উঠে পড়লাম। বাড়ির পাশেই গাছ। গাছের মালিক এতটাই কিপ্টা যে, বড়ই খেতে চাইলে দিবে না। পাকা বড়ই মাটিতে পড়ে থাকলেও নিতে দিবে না। তাই ভাবলাম একটা কিছু করতেই হবে। ছালার বস্তা নিয়ে উঠে পড়লাম গাছে একদিন খুব সকাল বেলা। বড় জাতের বড়ই। বস্তা ভরলাম। হটাৎ দেখি মালিক গাছের নিচে এসে আমাকে দেখে ফেলেছে। বড় বিপদ। ধরা খেলে তো সর্বনাশ। মা’র কাছে ধরে নিয়ে যাবে। বুদ্ধি একটা আটলাম। পড়নের কাপড় ফাঁক করে দিলাম ছেড়ে ...... এক্কেবারে মাথার উপর। চেঁচিয়ে উঠে দিলো দৌড়। এই সুযোগে আমিও এক লাফ দিয়ে নেমে বস্তা নিয়ে পালাই। আমাকে আর পায় কোথায়?` (গল্প বলে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই হাসতে হাসতে খুন।)

সেদিন খুব ভয়ে ছিলাম। মা’র কাছে তো নালিশ যাবেই। তাই হলো। মা আমাকে বকেছিলেন। মায়ের বকুনি আর শাসন এখনো মনে পড়লে বুকটা কেঁপে উঠে। তাইতো মা’কে নিয়ে এখন কবিতা লিখি। পড়ে দেখুন এই কবিতাটা। অনেকগুলো কবিতা লিখেছি মা’কে নিয়ে।

(হাত বাড়িয়ে মা`কে নিয়ে লেখা কয়েকটি কবিতা পড়তে দেন । এর মধ্য থেকে দুটো কবিতা পরে শুনাই। শুধু মা`কে নিয়ে নয়। কবিতা লিখেছেন শৈশবের স্মৃতিমাখা অনেক বিষয় নিয়ে। প্রবাসে থেকেও শৈশবের স্মৃতিমাখা দেশটাকে নিয়ে ভাবেন, কথামালা সাজিয়ে পথ, মাঠ-ঘাট,বন-বৃক্ষ, ফুল, প্রজাপতি নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা।)

বহুমাত্রিক.কম : আপনার কাব্যগ্রন্থ বের হয়েছে কি?

নবী চৌধুরী : না, এখনো বের হয়নি। পাণ্ডুলিপি পাঠিয়েছি ঢাকায় মেয়ের স্বামীর কাছে। শুনেছি কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।

বহুমাত্রিক.কম : যৌবনে রোমাঞ্চকর কোনো গল্প বলবেন......

(প্রশ্নটি শেষ না হতেই অট্টহাসিতে পঁচাত্তর বছরের যুবক। কিছুটা লজ্জা বোধ থেকে না বলার ভঙ্গিতে স্মিত হেসে স্ত্রীর দিকে তাঁকালেন।)

পাশে বসা সহধর্মিনী তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন- ‘আমি বলছি,আমাকে বলতে দিন’।

নবী চৌধুরী (স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে): তুমি আবার কী বলবে?

বহুমাত্রিক.কম : ঠিক আছে। ওনাকে (স্ত্রী ) কিছু বলতে দিন। তিনি তো কিছু একটা বলতে চেয়েছেন মনে হলো।

নবী চৌধুরী : এইগুলো আবার পেপারে লিখে-টিকে দিবেন না তো ?

স্ত্রী আফরোজা চৌধুরী : (বেশ আগ্রহ নিয়ে) শোনেন, মেডিকেল এ পড়ার সময় একজনের সাথে সম্পর্ক হয়েছিল। এই নিয়ে বন্ধুরা যে কতো মজা-তামশা করেছে !

নবী চৌধুরী: তুমি এবার থামো !

(আরো কিছু বলতে চেয়েছিলেন মিসেস চৌধুরী। এইভাবেই কিচ্ছুক্ষণের জন্যে হলেও ফিরে যায় স্বামী-স্ত্রী পিছনের মধুময় স্মৃতি রোমন্থনে।)

বহুমাত্রিক.কম : দেশের বন্ধুদের কথা মনে পড়ে না?

নবী চৌধুরী : হ্যাঁ, মনে তো পড়েই। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, তোফায়েল আহমেদ এদের সাথে একসময় ভালো বন্ধুত্ব ছিল।

বহুমাত্রিক.কম : এখন এদের সাথে যোগাযোগ নেই?

নবী চৌধুরী : না।

বহুমাত্রিক.কম : জীবনের নেতিবাচক স্মরণীয় ঘটনা কোনটি?

নবী চৌধুরী: ১৯৯১ সালের দিকে বরফের উপর দিয়ে হাটতে গিয়ে পা পিছলে পিঠে মারাত্মক আঘাত পাই। সেইটা আমাকে দীর্ঘদিন ভুগিয়েছে।

বহুমাত্রিক.কম: ইতিবাচক?

নবী চৌধুরী : মানুষের সেবা করা।

বহুমাত্রিক.কম : স্মরণীয় কোনো বিশেষ স্মৃতি?

নবী চৌধুরী: ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে সহপাঠী ক্যাপ্টেন আমিনুল ইসলাম এর চিরতরে চলে যাওয়া।

বহুমাত্রিক.কম : ১৯৭১ সালে আপনি একজন প্রবাসী।মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে সেই সময় আপনার কোনো চিন্তা ভাবনা ছিল কি?

নবী চৌধুরী : ১৯৬৯ সালে দেশ ছেড়ে চলে আসি। নতুন পরিবেশ, পড়াশুনা, চাকুরি খোঁজা এই সব নিয়ে নানা প্রতিকূলতার মাঝে টিকে থাকতে হয়েছে সেই সময়। স্বীকৃত কোনো সক্রিয় ভূমিকা নেই। তবে পজেটিভ ছিলাম।

বহুমাত্রিক.কম: অবসর জীবন কেমন কাটছে ?

নবী চৌধুরী : দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে নামাজ পড়ে, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করে। কবিতা লিখছি। নিজেই আবৃত্তি করি। যৌবনে কবিতা আবৃত্তি করতাম। এখনো করি।

‘টেস্ট বাণিজ্যের পক্ষে ছিলাম না বলেই দেশ ছাড়তে হয়’

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer