Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

সুন্দরবনের করমজল যেন সবুজের মায়াবী হাতছানি

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:২৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ১৪:১১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রিন্ট:

সুন্দরবনের করমজল যেন সবুজের মায়াবী হাতছানি

করমজল থকে ফিরে : তাসনুভা তাবাচ্ছুম যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযের ছাত্রী স্বজনদের সাথে সুন্দরবন দেখতে বের হয়েছেন। তিনি সুন্দরবনের করমজলে এসেছেন জীব জন্তু দেখতে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হচ্ছে আমাদের সুন্দরবন। এই সুন্দরবনে সবুজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে মায়াবী হরিণের প্রাণোচ্ছ্বল চাহুনি আর তিড়িং বিড়িং ছুটে চলা। তাদের সঙ্গি রয়েছে দুষ্টু বানরের দল। আর এ বানরের বাদরামি ও ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক ছাপিয়ে শোনা যায় অচেনা পাখির কলরব। এ আকষর্ণেই এখানে ছুটে আসা করমজলে।

প্রকৃতির নৈসর্গিকতায় সবুজের মায়াবী হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে সুন্দরবনের করমজল। চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী স্টেশন সংলগ্ন সুন্দরবনের করমজল এলাকায় বন বিভাগ প্রকৃতির কোলে গড়ে তুলেছে ‘ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র’।

স্বল্প খরচে একদিনের জন্য যারা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য করমজল পর্যটন কেন্দ্র একটি আদর্শ স্থান।

করমজলের ঘাটে ঊঠার পর টিকিট কাউন্টার থেকে নামমাত্র টাকার বিনিময়ে টিকিট নিয়ে বনের মধ্যে প্রবেশ করতে হয়। প্রবেশ করর পর ডানদিকে কন্ক্রীটের আঁকাবাঁকা পথ। বনের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে পায়ে হাঁটা রোমাঞ্চকর এ উঁচু পথ। দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। যার নাম ‘মাঙ্কি ট্রেইল’।

কাঠ বিছানো ট্রেইল ধরে বনের ভেতরে এগুতে দুই ধারে ঘন জঙ্গল। বাইন, পশুর কেওড়া আর সুন্দরী গাছের সারি। বন্য প্রকৃতিতে পথে পথে দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা জানায় মায়াবী হরিণ। কাঠের পথ কিছুদূর গিয়েই থেমে গেছে পশুরের তীরে।

সেই নদীর তীরে বসার জন্য রয়েছে বেঞ্চ পাতানো ছাউনি। মূল পথটির আরও কিছুটা দূরে ছোট খাল। পাশে গোলপাতায় ছাওয়া আরও একটি শেইড। গোলাকৃতির শেইডের বেঞ্চে বসে বনের নিস্তব্ধতা, সত্যিই উপভোগ্য।

শেড থেকে পশ্চিমে ট্রেইলটি ইট বাঁধানো সরু পথ ধরে গেছে কুমির প্রজনন কেন্দ্রের পাশে। ২০০২ সালে বন বিভাগ এখানে দেশের প্রথম এবং একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। মাঝে করমজলে অন্যতম আকর্ষণ সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এই টাওয়ারের চূড়া থেকে দেখা যাবে করমজল এবং চারপাশের নয়নাভিরাম সবুজে ঘেরা সুন্দরবনের নতুন রূপ।

ওয়াচ টাওয়ারের পাশেই প্রাচীর ঘেরা পুকুর। পাশে কুমির প্রজনন কেন্দ্র। সেখানে রয়েছে ছোট ছোট অনেকগুলো চৌবাচ্চা। ওই ৗেবাচ্চাকে বনবিভাগের ভাষায বলা হয় প্যান। তার মধ্যে কোনটিতে ডিম ফুটে বের হওয়া কুমির ছানা, কোনটিতে মাঝারি আকৃতির আবার কোনটিতে আরও একটু বড় আকৃতির কুমিরের বাচ্চা রয়েছে। সবমিলিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন বয়সের বাচ্চা রয়েছে ২১৫টি।

কয়েকদিন আগে এই করমজলে ঘটে যায় আলোচিত ঘটনা। কুমিরের ৬২টি বাচ্চা খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক তেঅরপাড় হয়। এরপর কুমিরের প্যানে কারেন্ট জাল দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে।

টাওয়ারের পাশের বড় পুকুরে রয়েছে লোনা পানির কুমির রোমিও, জুলিয়েট এবং পিলপিল। বনকর্মীরা নাম ধরে ডাকলে অনেক সময়ে পুকুরে থাকা কুমিরগুলো খাবার খেতে তাদের ডাকে সাড়ে দিয়ে উঠে আসে পাড়ে।কুমির প্রজনন কেন্দ্রের সামান্য পশ্চিম দিকে হরিণ লালন-পালন ও প্রজনন কেন্দ্র। এখানে চিড়িয়াখানার মতো উপরিভাগ উন্মুক্ত খাচায় ঘেরা খোলা জায়গায় চোখে পড়বে চিত্রা হরিণ।

সুন্দরবনের করমজল ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য গত সোমবার সকালে রওয়ানা হই বাগেরহাটের মোংলার উদ্দেশ্যে যাই। মোটর সাইকেলে সাথে ছিলেন, ডেইলি স্টারের খুলনার করেসপন্ডেন্ট দিপঙ্কর রায়। এরপর ট্রলারে করে পূর্বপাড়ে যাই। সেখানে পূর্ব থেকেই ট্যুরিস্ট বোট ঠিক করে রাখেন আমাদের সহকমী আবু হোসাইন সুমন। আমি এর দিপঙ্কর দা দুজনে একটি বোটে করে রওয়ানা হই করমজলের উদ্দেশ্যে।

নদীর  অনুকুলে থাকায ৪৫ মিনিটে পৌছে যাই করমজল ইকোট্যুরিজম ও বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রে। তবে নৌকার ভাড়া সাধারণত: নেয় ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এরপর সেখানে পৌছে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা হয়। তিনি কেন্দ্রের সকল তথ্য দেন।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, সুন্দরবনে লোনা পানির কুমির রক্ষায় প্রজনন বৃদ্ধি এবং লালন-পালনের জন্য ২০০২ সালে বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় করমজল ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি ৮ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ওই বছর সুন্দরবনের নদীতে জেলেদের জালে আটকা পড়া ছোট-বড় লোনা পানির পাঁচটি কুমির নিয়ে যাত্রা শুরু করে বনবিভাগের এ প্রজনন কেন্দ্রটি। এছাড়াও ‘করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে রয়েছে সুন্দরবনের কচ্ছপ। এছাড়া প্রজনন কেন্দ্রে রয়েছে শুকর, সাপ, বনবিড়াল, চিতা বিড়ালসহ নানা প্রজাতির জীব জন্তু।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer