Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

সুন্দরবন, রামপাল ও অন্যান্য শিল্প কলকারখানা

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ০২:১১, ২৬ আগস্ট ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

সুন্দরবন, রামপাল ও অন্যান্য শিল্প কলকারখানা

 

ঢাকা : সম্প্রতি হাইকোর্টে একটি রায় বের হয়েছে যেখানে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপিত সকল শিল্প কলকারখানার তালিকা আগামী ছয়মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে। অপরদিকে সেখানে অনুমোদন পাওয়া এবং অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন কমপক্ষে ১৫০টি বিভিন্ন ধরনের শিল্প কলকারখানা স্থাপনের অনুমোদন প্রদান কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা তার কারণ জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহ সময় দিয়ে আদালত কর্তৃক রুলনিশি জারি করা হয়েছে। সুন্দরবন রক্ষার্থে একটি পরিবশেবাদী সংগঠনের পক্ষে করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এমন একটি রায় দিয়েছে। পরিবেশবাদীদের জন্য এটি একটি স্বস্তির খবরতো বটেই সেইসাথে তা সুন্দরবন রক্ষার জন্যও আরেকটি মাইলফলক উদ্যোগের অংশ।

আজকের এ সময়ে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর সেজন্য তা নিয়ে একটু আলোকপাত করা প্রয়োজন। সুন্দরবন এখন শুধু যে আমাদের বাংলাদেশের একটি সম্পদ তা নয়। এটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক তা বহু আগেই ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া এটি আধুনিক বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য হিসেবে নির্বাচনের জন্য ডিজিটাল ভোটিংয়ে নেিনশনে অংশ নিয়েছিল। এ সুন্দরবন একদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্রের সকল ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে উপকূলকে রক্ষা করে থাকে। সেখানকার জীববৈচিত্র পরিবেশ রক্ষার্থে এক বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই বনকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা চলমান।

সেজন্য সুন্দরবনের কোন ক্ষতি কেউ মেনে নিতে পারে না। এখন সুন্দরবনের কাছে রামপালে দেশের প্রথম এবং একমাত্র পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত সফল ও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সকল বাধা বিপত্তি ও আলোচনা সমালোচানাকে যুক্তিপূর্ণ ও বৈজ্ঞানিকভাবে খ-ন করার পর সেখানে তা স্থাপনের কাজ চলছে। সে কাজটি করতে গিয়ে সেখানে যে শুধু দেশীয় বিভিন্ন পরিবেশবাদী, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাই নয় আন্তর্জাতিকভাবেও অনেক বাধাবিপত্তি এসেছে। কিন্তু সরকারের যৌক্তিক বৈজ্ঞিানিক ব্যাখ্যার কাছে সেগুলো টিকতে পারেনি। অবশেষে ইউনেস্কো কর্তৃকও রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছে সরকার।

কিন্তু এরই মধ্যে কথা উঠেছে এবং আলোচনায় চলে এসেছে সেখানকার পরিবেশ ও সুন্দরবন ধ্বংসকারী আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবর যা আমি শুরুতে কিছুটা অবতারণা করেছি। কারণ সুন্দরবনের পাশে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মূল যুক্তি দেখানো হয়েছে যে সেটা সুন্দরবন থেকে একটি নিরাপদ দূরত্বে অর্থাৎ প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে। আর সেকারণেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তা ব্যাখ্যা করা গেছে। কিন্তু নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। আর সেটা হলো রামপালকে কেন্দ্র করে যেসব রাস্তাঘাট কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে সেখানে একশ্রেণির অতি মুনাফলোভী ব্যবসায়ী রাতারাতি নানারকম শিল্প কলকারখানা গড়ে তুলেছে। আর সেখানে দেখা দিয়েছে যত সমস্যা।

কারণ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠছে আন্তর্জাতিক মানদ-ে। সেখানে ভিতরে ভিতরে যদি অরো অনেক অপরিকল্পিত শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠে তবে তা হবে সত্যিকার অর্থেই সুন্দরবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ এসব শিল্প কলকারখার কালোধোঁয়ায়, অপরিশোধিত বর্জ্য, কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যের পরিবহন ইত্যাদি প্রত্যেকটি কাজের জন্যই সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। কাজেই সুন্দরবনের সীমানার ১০ কিলোমিটারেই শুধু নয় সেখানে রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া আর কোন অবকাঠামোই স্থাপন করতে দেওয়া যাবে না। আর যেখানে কোন ভৌগ অবকাঠামোই তৈরী করতে দেওয়া হবে না সেখানেতো শিল্প কলকারখানা স্থাপনের প্রশ্নই উঠে না।

কাজেই যে বিষয়টি নিয়ে মহামান্য হাইকোর্ট একটি রায় দিয়েছে দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে, সুন্দরবন রক্ষার স্বার্থে এবং সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এবং পরিবেশ রক্ষার্থে যেহেতু সুন্দরবন রক্ষার বিকল্প নেই। কাজেই সেখানে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রামপাল ছাড়া আর কোন কিছুই করতে দেওয়া চলবে না। এক্ষেত্রে দেশের সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনের সাথে সরকারকেও একাত্মতা প্রকাশ করা প্রয়োজন।

লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer