Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সুনামগঞ্জে বিলুপ্তির পথে মিঠা পানির মাছ

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:৫৮, ২১ মে ২০১৮

আপডেট: ০২:১২, ২১ মে ২০১৮

প্রিন্ট:

সুনামগঞ্জে বিলুপ্তির পথে মিঠা পানির মাছ

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

সুনামগঞ্জ : বাংলাদেশের মানুষ মাছে ভাতে বাঙ্গালী কথাটি বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্তির পথে মিঠা পানির সুস্বাদু ছোট ছোট মাছও। হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলার প্রবাদ আছে মৎস্য, পাথর, ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ এই প্রবাদটি এখন অতীত। কারণ এখন আর পূর্বের মত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।

এক সময় সুনামগঞ্জের প্রতিটি উপজেলার হাওর গুলো মৎস সম্পদে ভরপুর ছিল। অপরিকল্পিত ভাবে মৎস নিধনের ফলে এই জেলা থেকে মিঠা পানির সুস্বাদু মাছ গুলো বিলুপ্তি হচ্ছে দিন দিন। ফলে জেলা সদরসহ প্রতিটি উপজেলায় এখন মাছের বাজার দখল করেছে আছে ফিশারিজ মাছ।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, বিশ্বাম্ভরপুর, দিরাই-শাল্লা সহ সবকটি উপজেলায় অতীতের মত মিঠা পানির সুস্বাদু মাছ গুলো পাওয়া যাচ্ছে না। শুষ্ক মৌসুমে উপজেলার হাট বাজার গুলোতে সুস্বাধু মাছের চিহ্ন নেই,আছে ফিসারীতে উৎপন্ন পাঙ্গাস,সরপুটিসহ বিভিন্ন মাছ।

বর্ষার ঐ সব উপজেলায় পানিতে ভাঁসলেও মিঠা পানির সুস্বাদু মাছ পূর্বের মত আর পাওয়া যায় না। যে কিছু মাছ পাওয়া যায় জেলেরা মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছে পায়কারী বিক্রি করে দেয়। ব্যবসায়ীরা সে মাছ আবার বাক্স বন্দী করে নৌকা যোগে পাঠিয়ে দেয় জেলা শহর,রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই। আর শহরে পাঠিয়ে যে মাছ অবশিষ্ট থেকে যায় তার দাম শুনেই ক্রেতাগন মাছ কেনার কথা ভুলে যায়। এবং মাছের পরির্বতিতে অন্য কিছু সিদল,সুটকি খেতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে সুটকি,সিদল এর কদর একট বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরো জানা যায়, গত দশ বছরের ব্যবধানে দেখা গেছে বিপন্ন মিঠা পানির মাছ গুলো অস্তিত্ব নেই। মাছের বংশ বৃদ্ধির শুরুতেই বিনষ্ট হয়ে বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে-মলা মাছ,ডেলা মাছ,ট্যাংরা মাছ,ডোরাকাটা বৌ মাছ,মাগুর মাছ সহ মিঠা পানির ৫৪ প্রজাতির মাছ আরো ১২০প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে। যে মাছ গুলো বিপন্ন সেগুলো-শিং, চেনুয়া, খোকশা, কালাবাটা, ঢেলা, মধুপাবদা, একঠোঁটা, লাল চান্দাঁ, তিলপুঁটি ইত্যাদি।

মাছ গুলো বিলুপ্তির অন্যতম কারণ, মাছের অন্যতম আধার প্লাবন ভূমি, চলনবিল, নদী-নালার মোহনা, বড় বিল, দিঘী শুকিয়ে যাছে শুকনো মৌসুমে। জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশক ছিটানো, প্রাকুতিক দূর্যোগ ও পরিবেশ দূষণ, নদীতে পলি জমে, নাব্যতা হারিয়ে, ভাঙ্গনে, গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে, বিল, হাওরের গভীরতা কমে, অপরিকল্পিত ও প্রজনন মৌসুমে ডিম ওয়ালা মাছ শিকার করার কারণেই অতি পরিচিত এ মাছ গুলো বিলুপ্তি হচ্ছে। বিলুপ্ত হওয়া এই মাছ গুলো ফিরিয়ে আনার কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, এক জন মানুষের দৈনিক মাছের প্রয়োজন ৫৬ গ্রাম। মানুষ পাচ্ছে ৩৮ গ্রামেরও কম। গরিব অসহায় ও নিন্ম আয়ের মানুষ পাচেছ ২৫ গ্রামের নিচে। বছরে মাছের প্রয়োজন ৩৩ লাখ ২৪ হাজার টন। উৎপাদন হচ্ছে ২৬ লাখ টন। এর মধ্যে একলক্ষ্য টন রফতানি হচ্ছে। দেশে মাছের ঘাটতি রয়েছে ৮ লাখ টনের উপরে। জলাভূমির নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এ পর্যন্ত দেশের জলাভূমি কমেছে ৬৫ লাখ হেক্টর। দেশের মোট ৭৩৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে স্বাদু পানির মাছ ২৬০ প্রজাতির এবং লোনা পানির বা সামুদ্রিক মাছ রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির।

মাসুক মিয়া, সাদেক আলী, রফিকুল ইসলামসহ জেলার সচেতন মহল মনে করেন-বিলুপ্তি হওয়া মাছ গুলো উপাদনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া না হলে ভবিষ্যত্বে কোন ধরণের মাছের অস্তিত্বই থাকবে না। মৎস অধিদফতর দুই দশক ধরে মাছের উৎপাদন বাড়িয়েছে ঠিকেই যার মধ্যে ক্রস করে আনা বিদেশী জাতের মাছ বেশি। এর সঙ্গে নাম মাত্র দেশীয় জাতের কিছু মাছ রয়েছে অভিযোগ রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, পাওয়া যাচ্ছে না মিঠা পানির সুস্বাদু জাতের ছোট মাছ। প্রতি বছরেই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে খাল,বিল শুকিয়ে মাছ নিধন ও বর্ষার শুরুতেই অভাধে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধনের মহা উৎসব চলে। জেলেদের সচেতনতার মাধ্যমে পোনা মাছ নিধন বন্ধ করতে হবে। তাদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করা হলে ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ দেশীয় জাতীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে মিঠা পানির সুস্বাদু জাতের ছোট মাছ আর পাওয়াই যাবে না।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাওরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এখন প্রজননের মৌসুম। সব হাওরে এখনো পানি প্রবেশ করেনি। মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিও জন্য আমরা সব রখম চেষ্টা করছি। ভরা বর্ষায় প্রচুর পরিমানে মাছ পাওয়া যাবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer