ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশন
ঢাকা : দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশিষ্ট কারুশিল্পীদের সরাসরি অংশগ্রহণে ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প নিয়ে বসেছে মেলা। এ যেন এক টুকরো ঐতিহ্যের বাংলাদেশ। এখানে যেমন রয়েছে সিলেটের মণিপুরী বয়ন শিল্প-শীতলপাটি, তেমনি রয়েছে সিরাজগঞ্জের গামছা, লুঙ্গি ও শাড়ি আর টাঙ্গাইলের শাড়ি, বাঁশের কাজ।
রয়েছে ঢাকার ধাতব শিল্প, উল, পাটজাত পণ্য, কুষ্টিয়ার একতারা ও দোতরা, ঝিনাইদহের বাঁশি ও শোলা এবং নারায়ণগঞ্জের জামদানি, হাতপাখা ও কাঠশিল্প। বসেছে মাগুরার শোলা, বরিশালের মৃৎশিল্প, রাজশাহীর পোড়ামাটির কারুশিল্প, শখের হাড়ি ও লহরিকাঁথা, রংপুরের পাটজাত পণ্য, চট্টগ্রামের বট্নি পাটি, যশোরের নকশিকাঁথা, ময়মনসিংহের কাগজশিল্প এবং রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির তাঁতে বোনা কাপড়।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নগরের মাছিমপুর এলাকার আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসবের পঞ্চম দিনে গতকাল রোববার কারুমেলায় দেশের ঐতিহ্যবাহী এসব সামগ্রী দেখতে ছিল ঔসুক মানুষের উপচেপড়া ভিড়। মানুষজন এ মেলায় যাচ্ছিলেন আর কেনাকাটা সারছিলেন। মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল কারুমেলার এ স্থানটি। এ স্থানটির নামকরণ হয়েছে সিলেটের কৃতীসন্তান, লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণে অগ্রপুরুষ ও ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্তের নামে।
এদিকে ‘কালি ও কলম’ সাহিত্য পত্রিকার উদ্যোগে সাহিত্য সম্মেলনের তৃতীয় দিন ছিল গতকাল রোববার। এ দিন ছিল এ সম্মেলনের শেষদিনও। সকাল সাড়ে ১০টায় সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে সম্মেলন শুরু হয়। গতকাল তিনটি অধিবেশনেই ছিল কবিতাপাঠ। গতকালের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কবি রবিউল হুসাইন। এ অধিবেশনে কবি মুহাম্মদ সামাদ, রাতুল দেববর্মণ, মন্দাক্রান্তা সেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, ইকবাল হাসান, তারিক সুজাত, বীথি চট্টোপাধ্যায়, সাকিরা পারভীন ও পিয়াস মজিদ কবিতাপাঠ করেন।
দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কবি রুবী রহমান। এ অধিবেশনে কবি আসাদ চৌধুরী, আশিস সান্যাল, আনিসুল হক, আবুল মোমেন, মারুফুল ইসলাম, শতরূপা সান্যাল, কৃষ্ণ প্রাসাই, হেনরী স্বপন, মোস্তাক আহমাদ দীন ও জফির সেতু কবিতাপাঠ করেন। তৃতীয় অধিবেশনে কবি আশিস সান্যালের সভাপতিত্বে কবিতাপাঠে অংশ নেন রুবী রহমান, আলতাফ হোসেন, শিহাব সরকার, টোকন ঠাকুর, ওবায়েদ আকাশ, শাহনাজ নাসরীন, আহমেদ মুনির, আসমা বীথি ও ফজলুর রহমান বাবুল। পুরো সাহিত্য অধিবেশন সঞ্চালন করেন নাট্যসংগঠক মু. আনোয়ার হোসেন রনি ও ফারজানা জাহান শারমিন।
সন্ধ্যা ছয়টা ২০ মিনিটে হাসন রাজা মঞ্চে নীলাঞ্জনা দাশের পরিচালনায় নৃত্যানুষ্ঠান ‘দ্রোহকাল’ মঞ্চায়িত হয়। এরপর সরোদ বাদনে অংশ নেন রাজরূপা চৌধুরী। এরপরই রবীন্দ্রসংগীত ও তিন কবির গান পরিবেশন করেন লাইসা আহমদ লিসা। সবশেষে পালাগান পরিবেশন করেন প্রখ্যাত পালাকার ও লোকসংগীত শিল্পী কুদ্দুস বয়াতি।
আজকের পরিবেশনা : সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে বেলা চারটা, সন্ধ্যা ছয়টা এবং রাত আটটায় যথাক্রমে ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘জালালের গল্প’ ও ‘আয়নাবাজি’ প্রদর্শিত হবে। সন্ধ্যা ছয়টা ২০ মিনিটে হাসন রাজা মঞ্চে সূচনা অধিবেশনের পর রামকৃষ্ণ সরকার ও তাঁর দল ধামাইল গান পরিবেশন করবেন। এরপর চা জনগোষ্ঠী ঝুমুর নৃত্য পরিবেশন করবে। পরেই নাগরি পুথিপাঠ করবেন আলী আসহাব। সবশেষে সিলেটের আঞ্চলিক গান পরিবেশন করবেন প্রবীণ শিল্পী সুষমা দাস, শামীম আহমদ ও বাউল সূর্যলাল।
উল্লেখ্য, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী এ উৎসব চলবে ৩ মার্চ পর্যন্ত। পুরো উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাককে। ইনডেক্স গ্রুপ নিবেদিত এ উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে ঢাকা ব্যাংক। সম্প্রচার সহযোগী চ্যানেল আই।
প্রতিদিনই কয়েকটি মঞ্চে অনুষ্ঠান হবে। মূল অনুষ্ঠান হবে সৈয়দ মুজতবা আলী এবং হাসন রাজা মঞ্চে। এ ছাড়া প্রথম দিন থেকেই শাহ আবদুল করিম চত্বরে বাদ্যযন্ত্র ও সিলেট অঞ্চলের লোকগানের ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শনী; গুরুসদয় দত্ত চত্বরে কারুমেলা ও বেঙ্গল প্যাভিলিয়ন এবং কুশিয়ারা কলোনেডে স্থাপত্য প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। রাধারমণ দত্ত বেদিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সুবীর চৌধুরী আর্ট ক্যাম্প।