Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

সিলেট-আখাউড়া রেলপথে ট্রেনের টিকেট পেতে যাত্রীদের ভোগান্তি

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

সিলেট-আখাউড়া রেলপথে ট্রেনের টিকেট পেতে যাত্রীদের ভোগান্তি

সিলেট : বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট-আখাউড়া রেলপথে আন্ত:নগর ট্রেনের টিকেট পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

রেলওয়ে ষ্টেশন মাস্টারসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজষে টিকেট কালোবাজারী সিন্ডিকেট চক্রের কাছে যাত্রীরা রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়ছেন। এই চক্রের দৌরাত্ম মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সিলেটসহ বিভিন্ন ষ্টেশনে রেলওয়ের কাউন্টার সমুহে নানা অনিয়ম ও যাত্রীদের হয়রানি করারও অভিযোগ উঠেছে। রেলওয়ে ষ্টেশন মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আতাত করে কালোবাজারি টিকেট ব্যবসায়ীরা আগাম টিকেট কেটে পরবর্তীতে দ্বিগুন মূল্যে যাত্রীদের কাছে বিক্রয় করছেন। সরেজমিন সিলেট রেলওয়ে ষ্টেশনসহ কয়েকটি ষ্টেশন ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্ত:নগর ট্রেনের টিকেট দশ দিন আগে অনলাইনে বিক্রয়ের সুযোগে অসাধু টিকেট কালোবাজারী চক্র রেলওয়ে স্টেশনের কতিপয় মাস্টার সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আতাত করে গোপন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

দশ দিন আগের টিকেট বিক্রির জন্য কম্পিউটার অপেন করার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আগাম টিকেট কেটে নেয়া হয়। পরে ঐ টিকেটই দ্বিগুন মূল্যে বিক্রি করা হয়।

রেলওয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সহায়তায় একটি সিন্ডিকেট চক্র জমজমাট এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পরে যাত্রীরা কাউন্টারে এসে চার, পাঁচ দিন আগেও কোন টিকেট পান না।

কম্পিউটারে দেখানো হয় টিকেট নেই। এভাবে সিলেট, মাইজগাঁও, কুলাউড়া, শমশেরনগর, ভানুগাছ, শ্রীমঙ্গল, স্বায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন সমুহে একই অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সিলেট-চট্রগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে দিনের বেলা আন্ত:নগর পাহাড়িকা, কালনী, জয়ন্তিকা, পারাবত এক্সপ্রেস এবং রাতে উদয়ন ও উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে। ফলে প্রতিদিন এই সেকশন দিয়ে হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদার কারনে সিন্ডিকেট চক্র ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, তিন, চার দিন আগেও কাউন্টারে গিয়ে ঢাকা কিংবা চট্রগ্রামে যাওয়ার টিকেট কাটতে চাইলে কোন আসন নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়। কাউন্টার থেকে বের হওয়ার পরেই একটি চক্র দ্বিগুন মূল্যে পূর্বের কেটে রাখা টিকেট বিক্রি করছেন।

তাৎক্ষনিক সিলেট থেকে কুলাউড়া, শমশেরনগর ষ্টেশনের টিকেট কাটতে চাইলেও কোন টিকেট পাওয়া যায় না। কাউন্টারে কর্তব্যরতরা এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ঘোরাতে থাকেন।

তবে মাইজগাঁও, কুলাউড়া, শমশেরনগর, ভানুগাছ ও শ্রীমঙ্গল স্টেশন সমুহে রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ও কর্মচারীরা ভিন্ন কৌশলে টিকেট উচ্চ মূল্যে বিক্রি করছেন।

এসব স্টেশনে আসার পর দেখা যায় উপবন, উদয়ন, পারাবত ট্রেনের কোন আসন খালি নেই। তবে অন্য স্টেশন থেকে সংগ্রহ করে দেয়ার কথা বলে যাত্রীদের কাছ থেকে দু’একশ টাকা বেশি নিয়ে আগাম কেটে রাখা এক স্টেশনের টিকেট অন্য স্টেশনে বিক্রি করা হয়।

এভাবে টিকেট কালোবাজারী সিন্ডিকেট চক্র আন্ত:নগর ট্রেনের টিকেট বিক্রির বড় ধরণের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

চট্রগ্রামগামী প্রবাসী যাত্রী জসিম উদ্দীন বলেন, কাউন্টারে গিয়ে টিকেট পাওয়া যায়নি। পরে কাউন্টারের পাশেই রেলওয়ের পুলিশের ড্রেস পরিহিত এক ব্যক্তি আমাকে বলে “আপনারা স্বামী-স্ত্রী কেবিনে ঘুমিয়ে চট্রগ্রাম যেতে পারবেন এমন দু’টি টিকেট আছে। ১৪০০ টাকা দিলে সেই টিকেট নিতে পারেন।” তার ঐ কথায় আমি চট্রগ্রাম যাওয়ার স্বার্থে ১৪০০ টাকায় (নম্বর সিলেট ০১৫৮৮১১৮) টিকেট নিয়ে দেখা যায় টিকেটের গায়ে লেখা ৬৩০ টাকা এবং সেটি শোভন।

ঐ টিকেট ক্রয়ের তারিখ ১২ জানুয়ারী এবং যাত্রার তারিখ ১৪ জানুয়ারী। ১৮ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার সিলেট স্টেশন থেকে উপবন এক্সপ্রেসে ঢাকাগামী যাত্রী আব্দুল আজিজ ও সমরজিত বলেন, আমরা সন্ধ্যায় স্টেশনে এসে কাউন্টারে গিয়ে উপবন ট্রেনের দু’টি টিকেট চাইলে কোন আসন নেই বলে জানানো হয়। পরে স্টেশনের একটি চক্র এক সপ্তাহ আগে কেটে রাখা ৬২০ টাকা মূল্যের দু’টি আসনের টিকেট ৯০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে। তারা আরও বলেন, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকায় বাধ্য হয়েই বেশি টাকা দিয়ে টিকেট ক্রয় করতে হয়েছে।

চট্রগ্রাম গামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী সায়েদ মিয়া, মাসুদুর রহমান বলেন, একদিন আগে এসেও টিকেট পাওয়া যায়নি। ফলে স্টেশনের কাউন্টারে টিকেট না পেয়ে দুইশ টাকা বেশি দিয়ে কালোবাজারীদের কাছ থেকে আমাদেরও টিকেট সংগ্রহ করতে হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলস্টেশনের কর্মচারীরা জানান, আগাম কেটে রাখা টিকেট ওই দিন তাৎক্ষনিক মুহুর্ত পর্যন্ত বিক্রি না হলে যাত্রীরা টিকেটের জন্য কাউন্টারে আসলে বলা হয় টিকেট নেই, তবে টিকেট ফেরত আসছে বলে চালিয়ে দেন।

অভিযোগ বিষয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কাজী সহিদুর রহমান বলেন, আসলে যাত্রীদের তোলনায় টিকেট সংকট। তাছাড়া টিকেট কালোবাজারি হয় না। বাইরের কেউ যাত্রী সেজে দু’একটি টিকেট কিনে নিয়ে বিক্রি করলে সেখানে আমাদের করার কিছু নেই।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer