Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

‘সাহায্য বাড়াইতে অইব-নইলে বাঁচমু না’

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:১৫, ৩১ জুলাই ২০১৭

আপডেট: ০২:২২, ৩১ জুলাই ২০১৭

প্রিন্ট:

‘সাহায্য বাড়াইতে অইব-নইলে বাঁচমু না’

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

সুনামগঞ্জ : ‘শুনতাছি ৩১ জুলাইয়ের পর নাকি ভিজিএফ কার্ড বন্ধ হইয়া যাইব তাইলে কেমনে চলমু। সরকারি সাহায্য বাড়াইতে অইব নইলে বাচঁমু না।’

কথাগুলো বলছিলেন জেলার তাহিরপুর উপজেলার বীরনগড় গ্রামের সাদেক আলী। সাদেক আলীর মতই দুশ্চিন্তার আর উদ্বেগ একই গ্রামের শফিক, সবুজ, সোহাগ মিয়াদের কণ্ঠে।

দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের দুমাল গ্রামের ইসলাম উদ্দিন, রামসিমপুর গ্রামের তারা মিয়া, আলী আজগড় বলেন, ‘এই বার চৈত্র মাসেই বানের পানিতে কষ্টের ফলানো বোরো ধান ডুবাইয়া সব শেষ করে দিছে। আমরার চাষাবাদের গরু আর গোলা (ধান রাখার পাত্র) খালি। এরপর থেইকা আর কাজের ব্যবস্থা নাই বেকার।’

তারা বলেন, ‘সরকারি যে চাল দেয় তা কোন রহমে খাইয়া না খাইয়া দিন পার করতাছি। হুনতাছি বন্ধ হইয়া যাইব এমনিতেই জান যায় না পাইলে খাইমু কী?’

জানা গেছে, এক ফলসী বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাবার পর থেকেই জেলার তাহিরপুর, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুরসহ ১১টি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারী ও বেসরকারী সহযোগীতা দিয়ে আসছে যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সেই সহায়তাও এখন শেষের পথে।

ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে খোলা বাজারে চাল বিক্রির কার্যক্রম। জুলাই মাসের ৩১তারিখে শেষে হবে প্রান্তিক, দরিদ্র ও ক্ষুদ্র চাষীদের জন্য নেওয়া সরকারের বিশেষ বরাদ্ধ ভিজিএফ কার্ডের কার্যক্রম। সরকারী সহায়তার পাশা পাশি বেসরকারি ত্রাণ সহায়তাও দিন দিন কমে আসায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় আছে ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাবাসী।

আরও জানা গেছে, অকাল বন্যায় জেলায় ৯০শতাংশ বোরো ধান পানিতে তুলিয়ে যাওয়ার পর সরকার ভাবে গত ১০ এপ্রিল ৪২টি পয়েন্টে ১৫টাকা কেজি ধরে চাল বিক্রিয় শুরু হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য এর আরো ৬৮টি ওএমএস কেন্দ্র চালু করা হয়। এসব কেন্দ্রে সাপ্তাহে ৬দিন শনিবার ছাড়া প্রতিদিন ১৫টাকা কেজিতে ২শত মানুষের মধ্যে ১টন চাল বিক্রি করা হয়। ৩০জুন ওএমএস চাল বন্ধ হয়ে গেছে।
গত এপ্রিল মাসের ২৩তারিখে ৩মাসের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ওইসব কৃষকদের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্ধ ভিজিএফ কার্ড চালু হয়। এতে প্রতিটি পরিবার ৫শত টাকা ও ৩০কেজি চাল সহায়তা পাচ্ছে। এই সহায়তাও বন্ধ হবে ৩১জুলাই।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুস পুরকাস্থ টিটু বলেন, সরকারি সহযোগীতা বন্ধ না করে সময় ও সহায়তা বাড়ানো খুবেই প্রয়োজন। হাওরে এখন ত কোন কাজ নাই, কাজ না থাকলে ওইসব ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের জীবন চালাবে কি ভাবে। তা না হলে ক্ষতিগ্রস্তদের কষ্টের শেষ থাকবে না।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, সরকারিভাবে দেওয়া ওএমএস চাল বন্ধ ও ভিজিএফ কার্ডের সময়ও শেষের পথে এই সুবিধা বন্ধ হলে চরম দূভোর্গে পড়বে হাওরবাসী। আগামী বোরো ধান রোপন ও কাটার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত ওএমএস চাল ও ভিজিএফ কার্ডের সময় ও সহায়তা বাড়ানো খুবেই প্রয়োজন।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম জানান, সরকারি সহায়তার মেয়াদ শেষ হলেও আমরা সহায়তা বাড়ানোর জন্য আবেদন জানিয়েছি। আমরা সবাই সব সময় হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে আছি।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer