Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

সাশ্রয়ী পুষ্টিকর শস্য বাউ-চিয়া, কমায় হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস

আবদুল আউয়াল মিয়া শেখ, বাকৃবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:৫৬, ১৭ মার্চ ২০১৮

আপডেট: ০২:৫৭, ১৭ মার্চ ২০১৮

প্রিন্ট:

সাশ্রয়ী পুষ্টিকর শস্য বাউ-চিয়া, কমায় হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

ময়মনসিংহ : হৃদরোগী ও ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত উপকারী শস্য বাউ-চিয়া। অল্প ব্যয়ে অধিক লাভজনক পুষ্টিসমৃদ্ধ শস্য বাউ-চিয়া। চিয়া চাষ করে প্রতি হেক্টরে প্রায় ২ টন উৎপন্ন করা যায়। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৬০ লাখ টাকা।

অপরদিকে ধান চাষ করে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৪ টন উৎপন্ন করা যায়। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪০ লাখ টাকা। ধান চাষের জন্য যে পরিমাণ সার, সেচ ও শ্রমিক প্রয়োজন, চিয়া চাষের জন্য অর্ধেক হলেই হয়। আর্ন্তজাতিক বাজারে চিয়ার চাহিদা অনেক। প্রতি কেজির বাজার মূল্য ৩০০০ টাকা।

শস্যটি রবি মৌসুমী। আমন ধান কেটে পরই জমি চাষ না করেই চাষাবাদ করানো যায়। সরিষার পরিবর্তে কৃষকেরা এই চিয়া চাষ করতে পারেন। সেচ দু একবার দিলেই হয়। ফসলটি ৯০-১০০ দিনের ঘরে তোলা যায়। শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায় অনেক দিন। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। তা মানব শরীরের জন্য একটি অত্যাবশকীয় ফ্যাটি এসিড।

যা মানবদেহ থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক দ্রব্য বের করে দিয়ে হৃদরোগের ঝুকি কমায়। কিন্তু কেবল কিছু সামুদ্রিক এককোষী শৈবাল এবং সামুদ্রিক মাছ থেকেই উচ্চমানের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। তাই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের বিকল্প উৎস খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন প্রায় ৭ বছর ধরে চিয়া শষ্য নিয়ে গবেষণা চালান।

অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন বলেন, চিয়া হলো তৈলজাতীয় ফসল। এটি প্রধানত মেক্সিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় জন্মায়। চিয়া শস্যের এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ আমিষ (১৫-২৫ %), চর্বি (৩০-৩৩%), ফাইবার (১৮.৩০ %) এবং এ্যাশ (৪-৫%) থাকে। তবে এর মধ্যে থাকা সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ উপাদান হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ( প্রায় ৬৭.৮%)।

সামুদ্রিক এককোষী শৈবাল এবং সামুদ্রিক মাছ থেকেই উচ্চমানের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে এসব দ্রব্য সহজলভ্য না হওয়ায় এবং দাম বেশি হওয়ায় দেশের বেশিরভাগ মানুষ খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই খাবার হিসেবে চিয়া শস্য খেলে এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের কোলেস্টরল কমাতে সহায়তা করবে। এছাড়াও চিয়া শস্যে মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের অপ্রয়োজনীয় রেডিক্যালস বের করে দিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেবে।

গবেষণার প্রথমে ২০১০ সালে চিয়া বীজ দেশে নিয়ে আসেন ড. আালমগীর হোসেন । এরপর বাকৃবির ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগীয় মাঠে ৪ বছর ধরে চিয়া বীজের অভিযোজন পরীক্ষা করেন। অভিযোজন পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর ৩ বছর ধরে চিয়া বীজের চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা করেন।

২০১৭ সালে দেশের পাবনা, বগুড়া, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ ও চরঞ্চলে চিয়া চাষে ব্যাপক সফলতা আসে। দেশে চাষকৃত এই জাতটির তিনি নাম দেন ‘বাউ-চিয়া’। গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাসুদুল করিম এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং গবেষণা সহযোগী মো. আরিফ সাদিক পলাশ এবং আহাদ আলম শিহাব।

দেশীয় আবহাওয়ায় চিয়ার চাষাবাদ সম্পর্কে ড. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সাধারণত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে জমিতে বীজ বোনা যেতে পারে। হেক্টর প্রতি প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি বীজ লাগবে। জমিতে বীজ লাগানোর ১১০-১১৫ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যাবে। এই উদ্ভিদের পোকা-মাকড় ও রোগবালাই খুবই কম হওয়ায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশর প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ ২টন উৎপাদন লাভ করা সম্ভব।

দেশে মাঠপর্যায়ে এর সম্প্রসারণ সম্পর্কে ড. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘খুব শিগগির এই জাতটি অবমুক্তকরণের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে নেয়া হবে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় চিয়া চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হবে এবং পুষ্টি নিরাপত্তায় বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এদেশে চিয়ার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে ফসল উদ্ভিদ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. জাকির হোসেন বলেন, চিয়া শস্য শুকনো অবস্থাতেই খাওয়া যায়। তবে চিয়া শস্য বিভিন্ন খাবার যেমন দই,পুডিং বা বিস্কিটের সাথে যোগ করে এর চাহিদা বাড়ানো যেতে পারে।

চিয়া বিষয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আহাদ আলম শিহাব বলেন, চিয়া চাষ করে কৃষকেরা অল্প ব্যয়ে ও স্বল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা পেতে পারে। দেশের মানুষের হৃৎরোগী কমাতে ও পুষ্টি নিরাপত্তায় উলেøখযোগ্য ভ‚মিকা রাখতে পারবে বলে আশা করছি।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer