Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাভার ও আশুলিয়ায় কোচিং ব্যবসায় প্রতারণার শিকার শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ১৭ আগস্ট ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

সাভার ও আশুলিয়ায় কোচিং ব্যবসায় প্রতারণার শিকার শিক্ষার্থীরা

ফাইল ছবি

সাভার : কোচিং সেন্টারে ভরে গেছে আশুলিয়ায় প্রত্যেকটি মহল্লা। নামে বেনামে গড়ে ওঠা এসব কোচিং সেন্টারে নাম মাত্র শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

এ ধরনের কোচিং সেন্টারের প্রতারণার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এছাড়া অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষকদের দিয়ে জোরপূর্বক কোচিং করাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে একটি প্রতিষ্ঠানের সহকারি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও প্রাথমিকে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে জমজমাট ব্যবসা খুলে বসে আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব কোচিং সেন্টারে স্কুলের শিক্ষকরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিং এ গিয়ে ক্লাস করাচ্ছে।

শুধু যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কোচিং সেন্টার রয়েছে তা নয় খোদ স্কুলের ক্লাস রুমেই কোচিং করানো হচ্ছে অনায়াসেই। তবে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা কোচিং নির্ভর হয়ে পড়ার কারণে শিক্ষরা এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক মহল।

২০১২ সালের ২০ জুন কোচিং বন্ধের নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবে না। তবে তারা নিজ প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য স্কুল, কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানে দিনে সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। কোন কোচিং সেন্টারের নামে বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং বানিজ্য পরিচালনা করা যাবেনা। এ নীতিমালা অমান্য করে সাভার ও আশুলিয়ার অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা অবকাঠামোর ভেতর কোচিং বানিজ্যে করছেন।

শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্যই যেখানে-সেখানে যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠেছে এসব কোচিং সেন্টার। আর এসব কোচিং সেন্টার নিয়ে অভিযোগেরও কমতি নেই।

্আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপি’র গোহাইলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান (মিলন) সহকারি শিক্ষকদের দিয়ে জোরপূর্বক অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন শিক্ষকই এর প্রতিবাদ করতে পারেন না। প্রতিবাদ করলেই তার বেতন বন্ধ করে দেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদেরকে কোচিং করাতে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোহাইলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারি শিক্ষক জানান, ‘কোচিং করা আইনত দন্ডনীয়। তবে অতিরিক্ত ক্লাস করানো যাবে সেটা শিক্ষার্থীরা চাইলে। কিন্তু এ স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান মিলন জোরপূর্বক শিক্ষকদের দিয়ে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং করাচ্ছেন। কোন শিক্ষক এর প্রতিবাদ করতে গেলেই তার বেতন বন্ধ করে দেন এবং নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখান। এছাড়া কোন শিক্ষার্থী যদি কোচিং না করে তাহলে তাকে বেত দিয়ে পিটিয়ে কোচিং করতে বাধ্য করানো হয়।

গোহাইলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণীর অধিকাংশ শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা কেউ ইচ্ছা করে কোচিং করি না। কোচিং করাতে আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে। সহকারি প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে নানা ভয়ভীতি ও পিটিয়ে কোচিং করাতে বাধ্য করছেন। কেউ কোচিং না করলে তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে বেত দিয়ে পেটানো হয়। ভয়ে আমরা বাধ্য হয়ে কোচিং করছি।’

গোহাইলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান মিলন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কাউকে জোরপূর্বক কোচিং করানো হচ্ছেনা। শিক্ষার্থীদের সম্মতিতেই অতিরিক্ত ক্লাস করানো হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত শত্রুতার কারনে তার বিরুদ্ধে এধরণের অভিযোগ করেছে।

শুধু গোহাইলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় নয় আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোতে কোচিং বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। যেমন, শিমুলিয়া ইউপি’র টেঙ্গুরী কোনাপাড়া এলাকার ইকরা প্রি-ক্যাডেট এন্ড হাই স্কুল, কোনাপাড়া চিরিঙ্গার পুকুরপাড় এলাকার গ্রীন প্রি-ক্যাডেট স্কুলসহ অধিকাংশ প্রি-ক্যাডেট স্কুলগুলোতে কোচিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোর থেকে কোচিং বানিজ্য শুরু হয়। আবার অনেকে রাতেও কোচিং করিয়ে থাকে। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান আবার ছুটির পর কোচিং শুরু করেন।

শুধু স্কুলই নয় অনেকে কোচিং সেন্টার দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। জিরানীসহ সাভার উপজেলায় কোচিং সেন্টার যেন দিনের পর দিন ব্যাংঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিবাবক জানায়, সফল কয়েকজন শিক্ষার্থীর ছবি সম্বলিত একটি কোচিং সেন্টারের প্রসপেক্টাস দেখে আমার ছেলেকে সেখানে ভর্তি করলে আমার ছেলে শিক্ষার্থী হিসেবে আরো খারাপ হয়ে যায়। অথচ প্রতি মাসে আমাকে মোটা অংকের টাকা গুনতে হয়েছে।

বিভিন্ন কোচিং সেন্টরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে পাঠদান করার কথা থাকলেও সেসব প্রতিষ্ঠান অনবিজ্ঞ লোকজন দিয়ে চালানো হচ্ছে।

কিছু কিছু কোচিং সেন্টার আছে যেগুলোতে ১০০% পাশের নিশ্চয়তা দেয়া হয় অথচ খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ২০% ও পাশ করে না। প্রতি বছর একই কাহিনী । প্রতারণার যেন কোন শেষ নেই।

তবে অভিবাবকরা অভিযোগ করেছেন, প্রধান শিক্ষকের অনুমতিতেই সবাই স্কুলের মধ্যে কোচিং করাছে।

এদিকে, সাভার ও আশুলিয়ায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠছে কিন্ডার গার্টেন স্কুল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ননীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মনগড়া নিয়ম-কানুন তৈরী করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। মন মত পরীক্ষা, ভর্তি ফি অতিরিক্ত, অনবিজ্ঞ শিক্ষক, স্কুলে নেই খেলার মাঠ। শুধু তাই নয় বর্তমানে সাভার ও আশুলিয়ায় লক্ষ করা গেছে অধিকাংশ কিন্ডার গার্টেন স্কুল ফ্লাট বাড়ি কিংবা বাসা বাড়িতেই পরিচালনা করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ওই বিষয়ে অকৃতকার্য বা ফেল করানো হয় শিক্ষার্থীদের। যে শিক্ষার্থীরা যে শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট/কোচিং করে সে শিক্ষার্থীদেরকে মার্ক/নাম্বার ভাল দেয়া হয় এবং যে শিক্ষার্থীরা কোচিং/প্রাইভেট পড়েনা তারা ভালভাবে পরীক্ষা দিলেও ভাল নাম্বার তাদেরকে দেয়া হয়না বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

এ ব্যাপারে পত্র-পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। তাই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সনাক্ত করে বন্ধ করে দেয়া এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোচিং এর সাথে জড়িত শিক্ষকদের বিরোদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিবাবকরা।

এব্যাপারে সাভার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. কামরুন্নাহার জানান, এটা আমরা জানি যে টিচাররা কোচিং বানিজ্যে লিপ্ত আছে। বিষয়টি মনিটরিং করে আইডেন্টিফাই করা যেটা আমি সাভার উপজেলায় আশার পরে করতে পারিনি। তবে কাছাকাছি স্কুলগুলোতে গিয়েছি। এছাড়া বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer