Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৯ ১৪৩১, মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪

সাতশ শিশুর বাবা-মাকে খুঁজে দেওয়া একজন কামাল হোসেন

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:২০, ২১ অক্টোবর ২০১৭

আপডেট: ২২:৩৮, ২১ অক্টোবর ২০১৭

প্রিন্ট:

সাতশ শিশুর বাবা-মাকে খুঁজে দেওয়া একজন কামাল হোসেন

ঢাকা : ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ছয়লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। পালিয়ে আসতে গিয়ে অনেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন তাদের প্রিয়জন থেকে।

তেমন মানুষদের স্ব-উদ্যোগে সহায়তা করছেন কামাল হোসেন নামে আরেকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী। প্রায় কুড়ি বছর ধরে তিনি নিজেই উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা।

আগস্টের ২৭ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাতশো পরিবারকে তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে পুনরায় মিলিত হতে সহায়তা করেছেন তিনি।

কামাল হোসেন বিবিসি বাংলাক বলেছেন, তিনি যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন তার বয়স ছিল নয়। ১৯৯৮ সালে তিনি মিয়ানমার থেকে শরণার্থী হয়ে চলে এসেছিলেন বাংলাদেশে। তিনি এসেছিলেন একাই বাবামাকে না জানিয়ে এবং ক্যাম্পে থাকার জন্য নথিবদ্ধ হয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক একটি ত্রাণ সংস্থায় গার্ডের কাজ করেন কামাল হোসেন। বলছিলেন এত লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রথমবারের মত বাংলাদেশে এসে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

"এরা আসতেছে- কিন্তু গ্রাম চিনেনা-পথঘাট চিনেনা। তারা কখনও বাংলাদেশে আসে নাই। এদিক ওদিক যেতে গিয়ে অনেক বাচ্চার থেকে আম্মা হারায়ে যাচ্ছে, কারও আত্মীয় স্বজন হারায়ে যাচ্ছে। খুঁজে পাইতেসে না। "কামাল হোসেন বলছিলেন সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল বাংলাদেশে ঢোকার পর একদিন তিনি দেখেন তার অফিস গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এক মহিলা কাঁদছেন।

"একটা মহিলা আমার গেটের সামনে আসি কান্নাকাটি করতেসে। আমি জিজ্ঞাস করার পর উনি বলতেসে আমার একটা ছেলে আজকে দুদিন ধরে হারিয়ে গেছে, আমি খুঁজে পাইতেসি না।"

"সারাদিন ডিউটি করার সময় চিন্তা করি করি আমার মনে হল অনেক মানুষ রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতেছে, টাকাপয়সা, জিনিসপত্র দিতেছে, আমার তো ওইধরনের কোন সম্পদ নাই। আমি তো কিসু করতে পারতেসি না। তালে আমি যদি মাইকিং দিয়ে বাচ্চাগুলো যারা হারিয়ে যায়,তাদের মা-বাপেরে যদি খুঁজে দিতে পারি, তাহলে যারা ত্রাণ দিতেসে, ওদের মত ওইধরনের সোয়াবগুলো আমি পাব।"

২৭ সেপ্টেম্বর কামাল হারিয়ে যাওয়া পরিবারগুলোকে আবার মিলিয়ে দেবার কাজ প্রথম শুরু করেন।
তিনি বলছিলেন তার নিজের পকেট থেকে তার বেতনের ৩০০০ টাকা দিয়ে তিনি চার দিনের জন্য একটা মাইক ভাড়া করেছিলেন মাইকিং করার জন্যে।

"চারদিন পর যখন সময় চলে গেসে, আমি মাইক ফেরত দেবার জন্য যাচ্ছি, তখন ইউএনএইচসিআর আমার সঙ্গে কথা বলল- বলল আপনি তো নিজের টাকা খরচ করি মাইকিংটা করতেসেন। এখন আপনার তো সময় চলে গেছে- আপনি তো মাইকগুলো ব্যাক দিতে চান। তালে আমরা মাইকগুলার ভাড়া দেব, কিন্তু আপনি একটু হেল্প করতে পাবেন কীনা?"

এরপর রাজি হয়ে তিনি সেখানে একটা বোর্ড তৈরি করে টাঙালেন হারানো পরিবারদের মিলিয়ে দেবার জন্য। সেখান থেকেই তিনি শুরু করলেন মাইকিং করতে।

তিনি বলছিলেন কোনো ছেলে হারিয়ে গেলে তিনি তাকে তার গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করেন, তার নাম, তার আব্বা-আম্মার নাম,তার বয়স এসব নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তারপর মাইকিং করতে থাকেন।বিবিসি বাংলা

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer