Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

সাইফুল-কিভাবে জঙ্গি হল বুঝতে পারছেন না গ্রামবাসী

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ১৫ আগস্ট ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

সাইফুল-কিভাবে জঙ্গি হল বুঝতে পারছেন না গ্রামবাসী

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

খুলনা : রাজধানীর পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে আত্মঘাতি বোমা বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গি সাইফুল ইসলামের (২১) গ্রামের মানুষ খবর শুনে হতবাক। যে ছেলে এলাকায় শান্ত, নম্র, ভদ্র বলে পরিচিত সেই ছেলে কিভাবে জঙ্গি হল এ কথা ভেবেই পাচ্ছেন না স্থানীয়।

সাইফুলের বাড়ি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার নোয়াকাটি গ্রামের মোল্লা পাড়ায়। সে মাওলানা আবুল খায়ের মোল্লার ছেলে। আবুল খায়ের স্থানীয় মাঠেরহাট মসজিদে ইমামতী করেন। সাহস ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্টার আব্দুর রবের সহকারী হিসেবেও কাজ করে আবুল খায়ের।

পুলিশ সাইফুলের বাবা ও তার দুই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সাইফুলের বাবা আবুল খায়েরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তার বন্ধু সামি ও ইসানের ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। খুলনা রেঞ্জ পুলিশের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ডুমুরিয়া থানা পরিদর্শন করেছেন।

খুলনা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দুরে নোয়াকাটি গ্রাম। খুলনা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার গেলে ডুমুরিয়া উপজেলা সদর বাসষ্ট্যান্ড। সেখান থেকে ১ কিলোমিটার গেলে ডুমুরিয়া থানা। থানা থেকে ডুমুরিয়া বারোআড়িয়া সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে রাস্তায় পাশেই সাইফুলদের বাড়ি।

সেখানে বেলা ১১টার দিকে উপস্থিত হলে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের শত শত নারী, পুরুষ। বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলে দেখা যায় টিনশেডের চাল মাটির দেয়াল দেয়া জীর্ন ঘর। ঘরের মধ্যে প্রচুর অন্ধকার। ওই ঘরের খাটের উপর বসে চিৎকার করে কাদছে সাইফুলের ছোট বোন তামান্না খাতুন। তারই পাশে নির্বাক বসে আছেন সাইফুলের বাক প্রতিবন্ধি মা আসমা বেগম। অঝোরে কেঁেদ চলেছে সাইফুলের আরেক বোন ইরানী খাতুন।

ইরানি খাতুন কাঁদছে আর বলছে আমার ভাই চাকরি করবে বলে ১০/১২ দিন আগে সার্টিফিকেট, ছবিসহ অন্যান্য কাগজ পত্র নিয়ে ঢাকায় গেছে। আজ শুনছি সে নাকি জঙ্গি। নিজের কাছে রাখা বোমায় নিহত হয়েছে। ইরানী জানায়, তার ভাই সাইফুল খুলনা শহরের বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মান শেষ বর্ষে লেখাপড়া করত।

সাইফুল ইসলাম ডুমুরিয়ার উলা মজিদিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসা থেকে ২০১১ সালে দাখিল পাশ করে। ২০১৩ সালে খুলনা কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করার পর বিএল কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখা করত।

স্থানীয় এলাকাবাসী মো: জসিম উদ্দিন জানায়, সাইফুল খুব ভাল ছেলে ছিল। মুরব্বিদের সম্মান করত। কিন্তু কিভাবে জঙ্গি হল বুঝতে পারছি না।

সাহস ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খান শফিকুল ইসলাম বলেন, সাইফুলকে খুবই নম্র, ভদ্র ছেলে হিসেবে জানি। সে কারও সাথে ঝগড়া করেছে এমন শুনিনি। ১০ দিন আগে বাড়ি থেকে নিজের একাডেমিক সার্টিফিকেট, ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে সাইফুল ইসলাম ঢাকায় যায়। তারপর মঙ্গলবার সাইফুলের নিহত হওয়ার কথা জানতে পারি। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কার মনে যে কি আছে বলা কঠিন। এখনকার তরুণেরা যে কে কিভাবে গড়ে উঠছে তা বেুঝতে পারছি না। ছেলে মেয়েদের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।

ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাবিল হোসেন জানান, রাজধানীর ওলিও ইন্টার ন্যাশনাল হোটেলে আতঘাতি বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গি সাইফুলের গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়ার নোয়াকাটি গ্রামে। সাইফুলের বাবা আবুল খায়ের ও তার দুই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

খুলনা জেলা পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট নিজাম উল হক মোল্লা জানান, সাইফুলের পিতা আবুল খায়ের মোল্লা, সাইফুলের ২ বন্ধু সামী ও ইসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডুমুরিয়া থানায় আনা হয়। সাইফুলের পিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এলাকা ত্যাগ না করা নির্দেশ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তার ২ বন্ধুকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়টি পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিন।

মঙ্গলবার ভোর থেকে চলা ওই জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘আগস্ট বাইট’। অভিযানে নিহত হয় জঙ্গি নাম সাইফুল ইসলাম। এক সময় তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান শেষ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল যে জাতীয় শোক দিবসে জঙ্গিরা ৩২ নম্বরমুখী মিছিলে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে পারে। গতকাল থেকে গোয়ন্দারা এই এলাকায় নজরদারি বাড়ায়। রাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, হোটেল ওলিওতে জঙ্গিরা অবস্থান নিয়েছে। এর পর হোটেল ঘেরাও করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে (জঙ্গি সাইফুল) আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে সে সাড়া দেয়নি। পরে সকালে হোটেলের ভেতরে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সে গুলি ছোড়ে ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। তার ছোড়া গুলিতে এক পথচারী আহত হয়। পুলিশ জবাবে পাল্টা গুলি ছোড়ে।’

আইজিপি জানান, ভেতরে দুটি সুইসাইড ভেস্ট, ব্যাকপ্যাক পাওয়া গেছে। নিহত সাইফুল ইসলাম পুলিশের তালিকাভুক্ত নব্য জেএমবির সদস্য ছিল।

শহীদুল হক বলেন, ‘আমাদের গোয়েন্দারা তৎপর হওয়ায় এমন বিপদ সামলাতে পেরেছি। তা না হলে জঙ্গি যে শক্তিশালী বোমা বিস্ফারণ করেছিল তা কোনো মিছিলে ঘটলে ভয়াবহ হতো। জঙ্গির বোমায় হোটেলের এক পাশের দেয়াল ও গ্রিল উড়ে গেছে।’

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer