ছবি: বহুমাত্রিক.কম
খুলনা : ‘ছোটকাল থেকেই বাবার সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে অন্যের জমিতে কামলা দিতাম। অপরের জমিতে সবজি আবাদ করতে করতে নিজেই বাড়ির পাশে এক খন্ড জমি বর্গা নিয়ে নিজেই সবজি আবাদ শুরু করি। সেটা অনেক বছর আগের ঘটনা। প্রায় ৪০ বছর হয়ে গেছে। এখন নিজে সেই জমি কিনে নিয়েছি। সেখানে বিভিন্ন প্রকার সবজির আবাদ করি। বছরে সবমিলিয়ে লাভ হয় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।’
দরিদ্রদশা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর এ গল্প শোনাচ্ছিলেন জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের ছয়বাড়িয়া গ্রামের সবজি চাষি কার্তিক চন্দ্র পাল (৬০)।
ছয়বাড়িয়া গ্রামের মৃত বাদল পালের ৪ ছেলে ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে কার্তিক সবার বড়। কার্তিক চন্দ্র পালের বয়স তখন ১৫ থেকে ১৬ বছর। অনেকগুলো ভাই বোন। পিতার অভাবী সংসার। নিজেদের তেমন জমি জমা ছিল না।
কার্তিকের কাকা মুকুন্দ পালের জমিতে কামলা (মজুর) দিতেন। মুকুন্দ পাল বাড়ির পার্শের উঁচু জমিতে সবজির চাষ করতেন। সেই সবজি ক্ষেতের পরিচর্যা করত কার্তিক। এক সময় মুকুন্দ পাল আর জমি চাষ করতে চান না। চোখে অন্ধকার দেখে কার্তিক। সে তখন তার কাকার কাছ থেকে ওই জমি বর্গা নেয়।
সেখানে শুরু করে সবজির আবাদ। দিন রাত পড়ে থাকে জমি নিয়ে। সারা বছরই বিভিন্ন প্রজাতির সবজির আবাদ করেন কার্তিক। তার জমিতে বর্তমানে রয়েছে, ঢেড়শ, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গে, কচুর মুখি, ধুন্দল, বেগুন, ঝাল, ওল, পুই শাক, ডাটাসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি।
কার্তিক পাল জানান, তিনি সব সময় আলাদা ধরণের সবজি আবাদ করতেন। যাতে বাজারে ভাল দাম পাওয়া যায়। তার ক্ষেতে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের বেগুন উৎপাদন হয়েছে। থাইলান্ডের বিশেষ এক জাতের মরিচ উৎপাদন করে পুরুস্কৃত হয়েছেন। ওই ঝালের মরিচের প্রতিটির ওজন দাড়িয়েছিল ১০০ থেকে ১২০ গ্রাম পর্যন্ত। লম্বায় প্রায় ৬ ইঞ্চি। বর্তমানে ক্ষেতে রয়েছে মাদ্রাজি জাতের ওল। যার প্রতিটি ওজন হবে প্রায় ৬ কেজি। গত বছর একই ওজন হয়েছিল বলে জানান তিনি।
কার্তিক চন্দ্র পাল জানান, নিজেই সবজির চারা উৎপাদন করি। এক্ষেত্রে বাজার থেকে ভাল বীজ সংগ্রহ করি। তিনি বলেন, এখন নিজেই বর্গা নেয়া জমি কিনে নিয়েছি। এখন আর জমির হারি দেয়া লাগে না। তাই লাভও হয় বেশি। কার্তিক চন্দ্র পাল ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। কার্তিক পালের ২ ছেলে বড় ছেলে প্রতিবন্ধি। ছোট ছেলে অরুন কুমার পাল বাবার কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে। সব মিলিয়ে সফল সবজি চাষি কার্তিক পাল ছয়বাড়িয়া গ্রামের মডেল।
এ বিষয়ে ছয়বাড়িয়া ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বনাথ দাশ বলেন, এ এলাকার ভূমি সবজি উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগি। নোনার আধিক্য নেই। এ ব্লকে ৩৬০ হেক্টর (১ হেক্টর= ২.৪৭ একর) আবাদি জমি রয়েছে। যার মধ্যে ৪৫ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়। তিন দফা সবজি আবাদে আয় হয় প্রায় ১ কোটি টাকা।
বহুমাত্রিক.কম