ছবি: বহুমাত্রিক.কম
খুলনা : বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ, ইভটিজার মোকাবেলা, বয়:সন্ধিকালে সচেতনতা, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানা, দেশ ভ্রমনসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে নারীদের উদ্ধুদ্ধ করতে দেশ ভ্রমণে বের হয়েছেন উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত চার তরুণী।
এ সময়ে তারা ওই জেলার মেয়েদের স্কুলে এসকল বিষয়ে সচেতন করতে মতবিনিময়, প্রজেক্টরের মাধ্যমে ফিল্ম দেখানো, প্রশ্নোত্তর পর্ব, শারীরিক কসরত অনুশীলন হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেন। দেশের ৬৪টি জেলা স্কুটিতে পরিভ্রমণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তারা দেশের ৬টি জেলা পরিভ্রমণ শেষে সপ্তম জেলা হিসেবে সোমবার বেলা সাড়ে ৯টায় উপস্থিত হন খুলনা কলিজিয়েট গার্লস স্কুল এ্যান্ড উইমেন্স কলেজের গেটের সামনে।
চার তরুণী স্কুটিতে করে কলেজ গেটের সামনে দাড়ালে উৎসুক মানুষেরা তাদের কাছে জানতে চান তারা কারা, কোথা থেকে এবং কি উদ্দেশ্যে এসেছেন। সাবলিলভাবেই তারা তাদের খুলনায় আগমণ ও এর উদ্দেশ্য জানান।
’কর্ণফূলী প্রেজেন্টস নারীর চোখে বাংলাদেশ’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে গত ৬ এপ্রিল কুমিল্লা থেকে ট্রাভেলস অব বাংলাদেশের ৪ উদ্যমী তরুণী দেশ ভ্রমণে বের হন। প্রথম দফায় ওই চার তরুণী ঢাকা মেডেকেল কলেজের শেষ বর্ষের সাকিয়া হক ও মানসী সাহা তুলি, ইডেন মহিলা কলেজের একাউন্টসের স্নাতোকোত্তর শিক্ষার্থী ও ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্য আক্তার এবং ব্রাম্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী স্কুল শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস ৬টি জেলা ভ্রমণ করেন।
তারা বাংলাদেশের তরুণীদের সচেতন করতে দেশ ভ্রমণে বের হয়েছেন। পাশাপাশি অপরুপ সৌন্দের্যের এই বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শণ করে সে সম্পর্কে ইতিহাস জানা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান পরিদর্শন করা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে যুদ্ধের কাহিনী শুনতেও তাদের উৎসাহের কমতি নেই।
নড়াইলের দর্শণীয় স্থান পরিদর্শন করে ১৩ মে নড়াইল সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে মত বিনিময় করেন। পরে যশোরের ফুলের এলাকা বলে খ্যাত গদখালীর সুরতহাল বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক বক্তব্য, ফিল্ম প্রদর্শণ, দর্শণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ছবি প্রদর্শণ ও সে সম্পর্কে ধারণা দেন। পরদিন ১৪ মে তারা সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পৌছান। সেখানে কলারোয়া সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সাথে এক সেমিনাওে মিলিত হন। সাতক্ষীরা থেকে ১৫ মে সোমবার সকালে রওয়ানা হন।
স্কুটিতে প্রায় আড়াই ঘন্টা ভ্রমণ শেষে বেলা সাড়ে ৯টায় খুলনা সিটির খানজাহান আলী সড়কের সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এ্যান্ড উইমেন্স কলেজের সামনে। তারা প্রথমে কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করেন, সহযোগী অধ্যাপক জি এম মকবুল উর রহমান ও সিনিয়র শিক্ষক ফেরদৌসী মৌসূমী। এরপর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়, কলেজ ভবনের তৃতীয় তলার একটি অপেক্ষাকৃত বড় কক্ষে। সেখানে প্রায় ২ শত ছাত্রী উপস্থিত ছিল। সূচনা বক্তব্যে ভ্রমণে আসা এই ৪ শিক্ষার্থী তাদের উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন। পরে সহযোগী অধ্যাপক জি এম মকবুল উর রহমান ও সিনিয়র শিক্ষক ফেরদৌসী মৌসুমী তাদের ছাত্রীদের ভ্রমণে আসা শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান।
এ সময়ে তারা বয়োসন্ধিকালে মেয়েদের বিড়ম্বনা, লজ্জায় সেটি বলতে না পারা এবং স্বাস্থ্যহানিকর অবস্থায় পড়া থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। পথে ঘাটে চলতে গেলে ইভটিজারদেও শিকার হতে মুক্তি পেতে বা ইভটিজারকে মোকাবেলা করতে কিভাবে শারীরিকভাবে আঘাত করে তাকে হটিয়ে দিতে হবে তার অনুশীলন করানো হয়। দেশ ভ্রমণে উৎসাহ সৃষ্টি করতে দেশের দর্শণীয় স্থান সমূহের ভিডিও চিত্র প্রদর্শণ করেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালে পাকি বাহিনীর নৃশংসতার ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করেন।
তাদের কার্যক্রম কেমন লাগল এমন প্রশ্নের জবাবে নবম শ্রেণির শিক্ষাথী অর্পিতা বলেন, রাস্তায় চলতে গেলে অনেক ছেলে বাজে কথা বলে। আমরা তাদেরকে ভয় পাই। আজ ইভটিজারকে কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে বা তাকে দুর্বল করে হটিয়ে দিতে হবে তা দেখে খুব সাহস হচ্ছে।
অষ্টম শ্রেণির অধরা জানায়, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে যে এত সুন্দর সুন্দর দর্শণীয় স্থান রয়েছে তা আগে জানতাম না। আজ সেসকল স্থানের ভিডিও চিত্র দেখে খুবই ভাল লেগেছে। মনে হচ্ছে আজই দেখতে বের হয়ে পড়ি।
নবম শ্রেণির ছাত্রী শাহানাজ পারভীন জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অনেক গল্প শুনেছি। বিভিন্ন নাটকেও দেখেছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধেও ভয়াবহতারা এমন চিত্র এত বেশি সময় কখনও দেখার সুযোগ হয়নি। খুবই ভাল লেগেছে।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, দ্বিতীয় দফায় গত ১২ মে রাজধানীর কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার থেকে যাত্রা শুরু কওে নড়াইলে পৌছাই। নড়াইলের পর যশোর , সাতক্ষীরার পর সোমবার খুলনায় আসা। মঙ্গলবার বাগেরহাট জেলায় ভ্রমণ করা হবে।
সাকিয়া হক বলেন, রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে অনেক টিজিংয়ের শিকার হয়েছি। পড়েছি নানান বিড়ম্বনায়। নিজের অবস্থা ও সমস্যার কথা বিবেচনা করে ভাবি সবাই একই সমস্যায় ভূগছে । তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। তাদেরকে সচেতন করতে হবে। তাই কয়েক বান্ধবী মিলে প্রতিষ্ঠা করি ট্রাভেলস অব বাংলাদেশ নামে একটি প্লাট ফর্ম। তিনি বলেন, বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খুলনার মেয়ে মানসী সাহা বলেন, দেশ জুড়ে ভ্রমণের লক্ষ্যে গত ৬ এপ্রিল যাত্রা শুরু করি। ৬টি জেলা পরিভ্রমণ শেষে আজ (সোমবার) নিজের জেলায় এসেছি মেয়েদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করতে। আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এ্যান্ড উইমেন্স কলেজের ছোট বোনদের তাদেও সমস্যা মোকাবেলা করার কথা বলতে পারছি এতে আমার খুব ভাল লাগছে। আমরা যে সমস্যায় পড়েছি প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। আমরা চাই আমাদেও ছোট বোনেরা প্রতিবাদ করুক। তারা দেশকে জানুক, দেশের ইতিহাস জানুক, মুক্তিযুদ্ধের কথা জানুক।
এই টিমের সদস্য আসমা আক্তার বলেন, আমরা কার্যক্রমে কর্ণফুলী লিমিটেড দুটি স্কুটি দিয়েছে। ওই স্কুটিতে করে সারাদেশ ভ্রমণে বের হয়েছি। অকটেন চালিত স্কুটির জ্বালানি খরচ নিজেদের বহন করতে হয়। তাছাড়া থাকা খাওয়াসহ অন্যান্য আনুসঙ্গিক খরচও চালাতে হয় নিজেদের। এ ক্ষেত্রে যে সকল জেলায় গিয়েছি সেখানকার পরিচিতজনেরাই বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন।
বহুমাত্রিক.কম