ঢাকা : যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের দুই প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প তৃতীয় ও শেষ দফার বিতর্কে মুখোমুখি হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় (স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টায়) নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাসের নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ৯০ মিনিটের বিতর্কে সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন ফক্স নিউজ চ্যানেলের ক্রিস ওয়ালেস।
বিতর্কে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেদের নীতিগত অবস্থান তুলে ধরেছেন।
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ওবামা সরকারের আইন প্রয়োগের ব্যর্থ চেষ্টার পর বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে মার্কিন নির্বাচনে। আর সে কারণেই এবারের নির্বাচনে হিলারির সঙ্গে শেষ বিতর্কে মুখোমুখি হলে এই বিষয়ে প্রথম প্রশ্ন করা হয়। এর উত্তরে ট্রাম্প বেশ স্পষ্টভাবেই তার অবস্থান জানান।
ট্রাম্প এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন করে আপনি কি করবেন। এই রাষ্ট্রে সবচাইতে কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগ করা হয়েছে শিকাগোতে। অথচ সেখানেই অস্ত্র ব্যবহারে বছরে সবচাইতে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে। আমি মনে করি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন করে এ বিষয়ে কোন উপকার পাওয়া যাবে না।
এদিকে ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের জবাবে হিলারি বলেন, আমাদের দেশে এই বন্দুক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতি বছর ৩৩ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। আর সে কারণেই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিবিসি জানায়, হিলারির দেয়া তথ্যটি মূলত ২০১৪ সালের একটি পরিসংখ্যান থেকে নেয়া। বর্তমান পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। বিবিসি আরো জানায়, বন্দুক ব্যবহার করে নিহতের ঘটনাগুলোর শতকরা ৬৩ ভাগই আত্মহত্যার ঘটনা।
অভিবাসী ইস্যুতে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ‘হিলারি ও বারাক ওবামা অভিবাসীদের ঠাঁই দেয়ার নামে আমেরিকার সীমান্তকে অরক্ষিত করেছেন।’
জবাবে হিলারি বলেন, ‘এক কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে আমরা কোনোভাবেই বিপদে ফেলতে পারি না।’
গত ৯ অক্টোবর দ্বিতীয় নির্বাচনী বিতর্কে মুখোমুখি হন হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিতর্ক শেষে সিএনএন`র দর্শক জরিপে হিলারি ৫৭ ভাগ ও ট্রাম্প ৩৪ ভাগ ভোট পান।
এরআগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম বিতর্কেও বিজয়ী হন হিলারি। সেবার হিলারি ৬২ শতাংশ আর ট্রাম্প ২৭ শতাংশ ভোট পান।
এবারও তাঁরা পরস্পরকে আক্রমণ করেছেন। এছাড়া এই দুই প্রার্থীর বিতর্কে অভিবাসন, অবসরপ্রাপ্তদের জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সুপ্রিম কোর্টের শূন্য পদে মনোনয়ন, অর্থনীতি, বৈদেশিক নীতি ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ্যতার মতো বিষয়ও উঠে আসে।
ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ হিলারির তৈরি।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিভাজন সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন হিলারি। তিনি বলেন, ট্রাম্প সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে উদ্বুদ্ধ করছেন।
ট্রাম্পের অভিযোগ, হিলারি কথায় পারদর্শী, কাজ নয়।
হিলারি বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি যেসব কাজ করেছেন, তা দেশের স্বার্থেই করেছেন।
প্রায় সব জাতীয় জনমত জরিপে পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। তাই তাঁর জন্য এই বিতর্ক ছিল নিজের যোগ্যতা প্রমাণের শেষ সুযোগ।
ফক্স নিউজের সর্বশেষ জাতীয় জনমত জরিপে ট্রাম্পের তুলনায় হিলারি ৭ পয়েন্টে এগিয়ে। নির্বাচনী বিশ্লেষকেরা বলছেন, অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তন না হলে হিলারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ।