ফেইসবুক থেকে
ঢাকা : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গণমাধ্যমের নীতি নির্ধারক ও শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞরা গণমাধ্যমে শিশু বিষয়ক খবর পরিবেশনে সাংবাদিকদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, ‘শিশু অধিকার সুরক্ষা করতে হলে সেখানে গণমাধ্যমের কিছু দায়িত্বশীলতা আছে। এই দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে যাবার কোন সুযোগ নাই।’
‘শিশু অধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যম নীতিমালা’র খসড়া উপস্থাপন ও মতবিনিময় সভায় তিনি আজ একথা বলেন।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহায়তায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর নতুন ওয়েব পোর্টাল বিএসএসইনফোটেইনমেন্ট.নেট রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে এ মতবিনিময় সভায় আয়োজন করে।
বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ‘শিশু অধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যম নীতিমালা’র খসড়া উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। চ্যানেল ৭১-এর বার্তা বিভাগের পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের এডভোকেসির পরিচালক চন্দন জেড গোমেজ, ড্যাফোডিলস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান সৈয়দ মিজানুর রহমান, দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান প্রতিবেদক আশেকুন নবী চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিভিশনের জাহিদুল ইসলাম, দৈনিক জনকন্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান, উৎস বাংলাদেশ-এর নির্বাহি পরিচালক মাহবুবা মাহমুদ প্রমুখ।
অধ্যাপক গোলাম রহমান শিশু বিষয়ক সাংবাদিকতার নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি এটি বাস্তবায়নে সাংবাদিকদের আরো আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, নীতিমালাটা যাদের জন্য করা হচ্ছে তারা কতখানি এটি নিয়ে এগুচ্ছেন সেটাও দেখতে হবে।
তিনি গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের আরো ইকোনোমিক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘মিডিয়ায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে, ছবি বা ইস্যু কি মাত্রায় আমরা ব্যবহার করব এই বিষয় আমরা খেয়াল করিনা। অনেক ক্ষেত্রে আমরা ওভার প্লে করে ফেলি, আমরা ছোট করে দেখতে পারিনা। আমাদের মাত্রাজ্ঞান, আমাদের পরিমীতি বোধের অভাবের কারণে এটা অনেক সময় হয়ে ওঠেনা। ফলে সমস্যাগুলো তৈরি হয়।’
বাসস-এর প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গণামাধ্যমে কোন ধরনের খবর ছাপা হবে সেটি সব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানেরই একটা পরিকল্পনা আছে। তা সত্বেও শিশু বিষয়ক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের আরো সংবেদনশীল হতে হবে। তাদের সার্বিক ভাবে দায়িত্বশীল হতে হবে।
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস তার মূল বক্তব্যে বলেন, শিশুদের শারীরিক এবং মনের সুকুমার বৃত্তির বিকাশকে বাধা দেয়- এমন সব বিষয় থেকে তাদের মুক্ত রাখা গোটা জাতির দায়িত্ব। শিক্ষাবিদ ও সমাজতাত্ত্বিকরা মনে করেন, গণমাধ্যম প্রতিদিন অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতকে তুলে ধরে, সমাজের জন্য জরুরি প্রশ্ন উত্থাপন করে ও বিশ্লেষণ তুলে ধরে; স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচির বাইরে গণমাধ্যমের এসব আধেয়ও শিশুদের মনোজগতে একটি বড় প্রভাব ফেলে।
তিনি শিশু সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকতার নীতি সম্পর্কে বলেন, শিশুবিষয়ক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা আরো বেশি নীতিবোধের পরিচয় দিবেন - এটাই সাধারণ প্রত্যাশা। শিশুদের স্বার্থকে অন্য যে-কোনো বিষয়ের চেয়ে প্রাধান্য দেয়া এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা - এমন নীতিমালা প্রণয়ন ও সেগুলো মেনে সাংবাদিকতা চর্চাকে নিশ্চিত করা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার বিকাশের স্বার্থেই অপরিহার্য।
সাংবাদিকতায় শিশুর স্বার্থ ও অধিকার এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে বলা হয়, ‘এক’শ মানুষের স্বার্থের বিপরীতে যদি একজন শিশুর স্বার্থ দাঁড়িয়ে যায় তবে শিশুর স্বার্থই অগ্রগণ্য বলে বিবেচিত হবে।’
শিশু বিষয়ক প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশে গণমাধ্যমের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘শিশু অধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যম নীতিমালা’ প্রণয়নের অংশ হিসেবে বাসস এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। শিশুর জন্য সংবেদনশীল সংবাদ সরবরাহে গণমাধ্যমের উদ্যোগকে আরো গতিশীল করাই এ নীতিমালা প্রণয়নের প্রধান উদ্দেশ্য।