ছবি : বহুমাত্রিক.কম
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় বসন্তের মধ্যে হাওরগুলোতে বর্ষায় রুপ নিয়েছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে একের পর এক ছোট-বড় বোরো ধান উৎপাদনে সমৃদ্ধ উপজেলার ২৩টি হাওরের মধ্যে ১৯টি হাওর এতিমধ্যে ডুবে গেছে।
হাওর গুলো ডুবে ফসল হারিয়ে এখন নিঃস্ব! হাওর পাড়ের কৃষক পরিবারগুলো। ক’দিন বৃষ্টি না হলেও পাহাড়ে টানা বর্ষনের ফলে ভারছে হাওরের পানি। তার পরেও সব হাওর হারিয়ে শেষে রয়েছে শেষ ভরসা শনির হাওর। এ হাওরের কয়েকটি বাঁধের উপর দিয়ে পানি হাওররে প্রবেশ করার উপক্রম হয়েছে। তাই সবাই সব হারিয়ে শেষ সম্পদ শনির হাওর রক্ষায় বাঁধে কাজ করে যাচ্ছেন হাজারো কৃষক-শ্রমিক জনতা।
তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ সহ তিন উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৩সহশ্রাধিক শ্রমিক স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছে শনির হাওরের বগিয়ানী,লালুরগোয়ালা,ঝালখালি,নান্টুখালি বাঁধে। তার পরেও উৎবেগ আর উৎকণ্ঠায় রাত দিন পাহায় রয়েছে স্থানীয় জনসাধারন।
এই হাওর রক্ষায় টানা ৭দিন ধরেই স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে কাজ করে যাচ্ছেন তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের চিকসা, বীরনগর, জয়নগর, উজান তাহিরপুর, মধ্য-তাহিরপুর, ভাটি-তাহিরপুর, গোবিন্দ্রশ্রী, দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর, মাড়ালা, বালিজুরী ইউনিয়নের আনোয়ারপুর, দক্ষিনকুল, লোহাচুরা, বারুঙ্কা, পাতারি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ই্উনিয়নের দাওয়া, বাগুয়া, বসন্তপুর, রাজিন্দ্রপুর, খিরদরপুর, জামালগঞ্জ উপজেলার বেহলী ইউনিয়নের মষলঘাট,রাধানগর,ইসলামপুর সহ অর্ধশতাধিক গ্রামের ৩ সহশ্রাধিক কৃষক ও শ্রমিক।
সব হাওর হারিয়ে সবাই আশা অন্তত এই শেষ সম্বল শনির হাওর টুকু রক্ষা করা। ইতি মধ্যে পাহাড়ি ঢলের পানি তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশতাধিক হাওর। বালিজুরী ইউনিয়নের পাতারীগ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন,শনির হাওরটি রক্ষা হলে ধানের পাশাপাশি গরুর খাবারও সংগ্রহ করা যাবে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের কৃষক আরিফ মিয়া বলেন,শনির হাওরটি রক্ষা করার জন্য হাজার হাজার কৃষক সাপ্তাহ খানেক ধরে রাত-দিন পরিশ্রম করে বাঁধে কাজ করছে।
ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম,মহিবুর রহমান,উজান তাহিরপুর গ্রামের সাইদৃুল কিবরিয়া সহ একাধিক কৃষক জানান,হাওরের বাঁধ গুলো যখন থেকে হুমখির মূখে পরে তখন থেকেই পিআইসিরা গাঁ ঢাকা দিয়েছে,বর্তমানে হাওরপারের কৃষকরা সেচ্ছাশ্রমে বাঁধে কাজ করছে। তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও শনি হাওর উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে বৃহৎ বোরো ফসলি হাওর শনি এখনো ঠিকে আছে হাজারো মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন,এক সপ্তাহ ধরে শনির হাওরে তিন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ বাঁেধ কাজ করছে। সবার সহযোগীতায় এখনো ঠিকে আছে এই হাওরটি। সব হারিয়ে এই হাওরটিই তাহিরপুর বাসীর আশা। হাওরের বাঁধ যাদের দিয়ে হয় না তাদের হাতে ভবিষত্বে আর দায়িত্ব না দেওয়ার দাবি জানাই এবং যাদের পুকুর চুরির কারণে হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে কষ্টের ফলানো বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে তাদের বিল বাতিল করা সহ কঠিন শাস্তির দাবি জানাই।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সাইফুল ইসলাম জানান,হাওর রক্ষায় সব সময় খোঁজ রাখছি এবং হাওরের বাঁধ রক্ষায় আমাদের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগী করা হচ্ছে। বাঁধ নির্মান কারীদের অনিয়মের বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। অনিয়মের কারণেই উপজেলার প্রতিটি বাঁধ ভেঙ্গেছে। তাই আমাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়েছে বাঁধ নির্মানে অনিয়মকারীদের বিল না দেওয়ার জন্য।
বহুমাত্রিক.কম