ছবি: বহুমাত্রিক.কম
ঢাকা : রাজধানীতে দু’দফা নামাজে জানাজা শেষে কিশোরগঞ্জের ইটনার লাইমপাশায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কৃষিবিদ, বিশিষ্ট কৃষি সাংবাদিক ও লেখক ‘হাওরভূমি পুত্র’ ড. নিয়াজউদ্দিন পাশার (নিয়াজ পাশা) মরদেহ।
ব্রেইন স্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও বাকশক্তিহীন হয়ে ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থেকে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ’তে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ড. নিয়াজ পাশার মরদেহ নেওয়া হয় রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ার বাসায়। সেখানে মঙ্গলবার বাদ ফজর তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর লাশবাহী এম্বুলেন্সে ড. পাশার মরদেহ আনা হয় তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ফার্মেগেটের সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) চত্বরে সহকর্মী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কৃষিবিদরা তাকে শেষবারের মত দেখার সুযোগ পান।
পরে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে বিএআরসি চত্বরে ড. নিয়াজ পাশার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পূর্বে তাঁর একমাত্র ছেলে ফাহিম বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
জানাজায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সদ্য সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আযাদ, সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়ায়েস কবীর, বিএআরসি’র সদস্য পরিচালক ড. আনোয়ার, ড. সুলতান আহমেদ, ড. মনোয়ার করিম, ড. জিকরুল, সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার, ঢাকার পরিচালক ড. শেখ মো. বখতিয়ার, কটন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. ফরিদ উদ্দিন, বহুমাত্রিক.কম এর প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সহ বিএআরসি ও সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। সকাল পৌনে ১০টার দিকে ড. নিয়াজ পাশার মরদেহবাহী গাড়িবহর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে বিএআরসি চত্ত্বর ত্যাগ করে।
এর আগে সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে প্রয়াত নিয়াজ পাশার স্ত্রী ফারজানা আশা বহুমাত্রিক.কম-কে জানান, ইটনার লাইমপাশা গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে তাকে।
গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর রোববার ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার পর সংকটাপন্ন অবস্থায় কৃষিবিদ ড. নিয়াজউদ্দিন পাশাকে প্রথমে বারডেম ও পরে ধানমন্ডির একটি ক্লিনিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে বুধবার দুপুরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে কোনো কথা বলতে পারেননি বিশিষ্ট এই কৃষিবিদ। তাঁর শরীরের বাম পাশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
শিক্ষাজীবন থেকেই কৃষি সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত নিয়াজ পাশা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন।
সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার, ঢাকায় কর্মরত থেকেও দেশের কৃষকদের স্বার্থ ও কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে মূলধারার গণমাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিতভাবে লিখে গেছেন ড. পাশা। হাওর অঞ্চলের জন্য অন্তঃপ্রাণ এই কৃষিবিদ ব্যক্তিগতভাবে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্নেহভাজন ছিলেন।
‘হাওর ভূমিপুত্র’ হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করা নিয়াজ পাশা অনগ্রসর হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি সরকারের উচ্চপর্যাায়ে বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে নানা শারীরিক জটিলতার মাঝেও পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি হাওর ও কৃষি বিষয়ক নানা ইস্যুতে অব্যাহতভাবে লিখে গেছেন তিনি।
না ফেরার দেশে ‘হাওরভূমি পুত্র’ ড. নিয়াজ পাশা
বহুমাত্রিক.কম