গাজীপুর : মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ‘লাইভ ফুড’ বা ক্ষুদ্র প্রাণী ও উদ্ভিদ কণা অপরিহার্য উপাদান হলেও দেশের পুকুর, খালবিল, নদ-নদী সর্বেপরি মুক্ত জলাশয়ে এর উপস্থিতি উদ্বেগজনকহারে কম। অব্যাহত দূষণ, নদ-নদীর প্রবাহ সংকুচিত হয়ে এবং নদীসহ অন্যান্য মুক্ত জলাশয়ে মানুষের আগ্রাসন জলজ উদ্ভিদ কণা বা প্রাণবৈচিত্র্যের এই সংকট তৈরী করছে।
তবে আশা কথা, নদীমাতৃক বাংলাদেশের ‘মাছে ভাতে বাঙালি’র ঐতিহ্য ধরে রাখতে মৎস্য চাষের ক্ষেত্রগুলোতে পোনা মাছের খাদ্য জীবন্ত প্লাংকটন, রটিফার, স্পিরুলিনা ইত্যাদির উপস্থিতি নিশ্চিতে কৃত্রিম উৎপাদনে উদ্যোগী হয়েছেন গবেষকরা। ভবিষ্যতে মাছের এইসব খাদ্যউপাদান ব্যাপকভাবে চাষ করে সম্প্রসারণ করা গেলে মৎস্য উৎপাদনে এক নতুন বিপ্লব সাধন করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘লাইভ ফুড ইন অ্যাকোয়াকালচার অফ বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা নতুন এ সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। গত বুধবার গাজীপুরের সালনায় অবস্থিত বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) অ্যাকোয়াকালচার বিভাগে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ গিয়াসউদ্দিন মিয়া। অনুষ্ঠানে বশেমুরকৃবি’র পরিচালক (গবেষণা) অধ্যাপক ড. এ কে এম আমিনুল ইসলাম ও পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ড. আবু সাদেক মো. সেলিম বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মোঃ আমজাদ হোসেন। অন্যদের মাঝে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল হোসেন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আহসান বিন হাবীব।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য নতুন নতুন প্রজাতির মাছ চাষ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ পোনার প্রাপ্যতার অভাব। পোনা উৎপাদনের জন্য লাইভ ফুড এর ভূমিকা অপরিসীম। লাইভ ফুড হলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীব ও উদ্ভিদ কণা যা মাছের পোনার জন্য খুবই আকর্ষণীয় এবং উপাদেয় খাবার। এজন্য মাছের লাইভ ফুড চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন খুবই জরুরি। লাইভ ফুড ব্যবহার করে পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে নতুন নতুন প্রজাতির মাছ চাষ যেমন করা যাবে, তেমনি মাছের উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে পারি।
কর্মশালায় জানানো হয়, পোনা মাছের খাদ্য জীবন্ত প্লাংকটন, রটিফার, স্পিরুলিনা ইত্যাদির চাষ ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধুু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগে প্রতিষ্ঠিত লাইভ ফুড কালচার ল্যাবরেটরিতে শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে এটি ব্যাপক হারে করা গেলে এবং চাষি পর্যায়ে সম্প্রসারিত হলে মাছের উৎপাদনে এক নতুন বিপ্লব আসবে।
কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন, পরিচালকবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকবৃন্দ, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ এবং অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
বহুমাত্রিক.কম