Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গাদের মাঝে সেনা তত্ত্বাবধানে সাড়ে ৬ হাজার টন ত্রাণ বিতরণ

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

রোহিঙ্গাদের মাঝে সেনা তত্ত্বাবধানে সাড়ে ৬ হাজার টন ত্রাণ বিতরণ

ঢাকা : মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে গত ২৩ দিনে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টনেরও বেশী বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ত্রাণ গ্রহণ ও বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৮৫ টন ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত এক হিসাবে দেখা গেছে ৫ হাজার ৯শ ৯৬ দশমিক ৬৩০ টন ত্রাণ বিতরণ করা হয়। আর শনিবার ও রোববার মিলে আরও প্রায় ৫৭০ টন ত্রাণ বিতরণ হওয়ার কথা।

এ ত্রাণের মধ্যে বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ের ত্রাণ-সামগ্রী রয়েছে। উখিয়া ডিগ্রি কলেজে স্থাপিত ত্রাণ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কমান্ডার মেজর মুহিত আজ দুপুরে বাসসকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। এসব ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খাবার, পানি, তাবু, ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য।

রোববার দুপুরে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে সেনাবাহিনীর ত্রাণ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বেসরকারিভাবে আসা ত্রাণগুলো গ্রহণ করে দাতাদের রসিদ দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ দাতাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে ত্রাণবাহী গাড়িতে যেতে দেওয়া হচ্ছে। আবার রান্না করা খাবার ও পচনশীল ত্রাণ সামগ্রী সাথে সাথে সেনাপ্রতিনিধি দিয়ে নির্ধারিত ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাস্তার পাশের অস্থায়ী তাবু, খোলা মাঠে কিংবা পাহাড়ের অদূরে সুবিধাজনক বেশ কয়েকটি স্থানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম করা হচ্ছে। ফলে রাস্তায় এখন আর ত্রাণের জন্য হাহাকার নেই।

ত্রাণের গোডাউনের সামনে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য মিলে ত্রাণের হিসাব করছিলেন। ‘ত্রাণ কি শেষ হয়ে যাচ্ছে?’ এমন মন্তব্যের জবাবে সেনা সদস্যরা জানালেনÑ ‘কী বলেন, অনেক ত্রাণ এখনো জমা আছে। গুদামে রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই। ওয়াল্ড ফুড প্রোগ্রামের নতুন স্থাপিত গোডাউনে কিছু ত্রাণ রাখা হয়েছে। এখনও প্রতিদিন ত্রাণ জমা হচ্ছে।’ পরিদর্শনে দেখা গেলো গুদাম ও আশেপাশে ত্রিপলে ঘেরা প্রচুর চাল-ডাল-তেলসহ ও টিনজাত ও শুকনো ত্রাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে।

রোববার সকালে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৫-ডি জোনের মুখে দেখা যায় রোহিঙ্গা পুরুষ-মহিলা দলে দলে ফিরছেন ত্রাণ নিয়ে। এ সময় কথা হয় মাথায় চাল ও অন্যান্য কিছু ত্রাণ বয়ে নিয়ে আসা রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হাসিমের সাথে। মাথা থেকে বস্তা নামাতে নামাতে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর কারণে আমরা সহজে ত্রাণ পাচ্ছি। কোন দলাদলি নেই, হাঙ্গামাও নেই। আগে তো যার বল বেশি সে পেতো। বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। দুঃখ ভুলে আমরা এখন পরিবার নিয়ে ভালোই আছি।’ এই বলে- বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর তাগাদা দেখিয়ে হাসিম হারিয়ে গেলো পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচের দিকেÑ যেখানে পাঁচ ফুট বাই ১০ ফুটের কালো ত্রিপল বেড়ানো তাবুতে ঠাঁই হয়েছে এক-একটি পরিবারের।

‘ছোট্ট একটি ঘর, দুমুঠো খাবার-তাতেই আমরা খুশি- আমরা বাংলাদেশ সরকার ও এখানকার মানুষের এমন আন্তরিকতায় অবাক হয়েছি।’ বললেন আরেক রোহিঙ্গা নারী মিয়ানমারের বুচিদং থেকে আসা সামসুন নাহার। ‘কাটাকাটি শুরু হওয়ার পরই আমরা চলে আসি। ভাবছিলাম কী খাবো কোথায় থাকবো? কিন্তু আমরা এখন খুব ভালো আছি, শান্তিতে আছি।’ বললেন শামসুন্নাহার। এসময় পাশের মোহাম্মদ হোসেনের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখা গেলোÑ চালের বস্তা, তেলের বোতলসহ বেশ কিছু সামগ্রী রয়েছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ ও অন্যান্য কাজে সহায়তার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন। কিভাবে ত্রাণ কার্যক্রম আরও সুচারুরূপে পরিচালনা করা যায় এবং প্রতিটি রোহিঙ্গার কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো যায়- সে ব্যাপারে তারা রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়। এর পর থেকে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে অনেকটাই শৃঙ্খলা ফিরে আসতে শুরু করে। এখন আর হাজার হাজার শরণার্থীকে আর ত্রাণের জন্য পথে পথে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer