ছবি-পিআইডি
ঢাকা : বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে তাদের দেশে স্থায়ীভাবে ফিরিয়ে নেয়া এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সদস্য দেশসমূহের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের এক বিশেষ অধিবেশনে এ আহবান জানান। আজ বিকেলে ঢাকায় প্রাপ্ত এক বার্তায় একথা বলা হয়।
শাহরিয়ার আলম ওআইসি সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো শ্রী নজিব রাজ্জাক এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
সম্মেলনে শাহরিয়ার রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাখাইন মুসলমানরা তাদের পৈতৃক বসত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী রাখাইন মুসলমানদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখ করে অবিলম্বে তাদেরকে রাখাইন রাজ্যে ফিরিয়ে নিতে এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি দাবী জানান।
তিনি নাগরিকত্ব আইনের প্রয়োজনীয় পর্যালোচনার মাধ্যমে তাদের নাগরিকত্ব পুনর্বহালের মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শাহরিয়ার বাংলাদেশে অস্থায়ী ভিত্তিতে আশ্রয় গ্রহণকারী সকল রোহিঙ্গা শরনার্থীদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জরুরী পদক্ষেপ নেয়ারও দাবি জানান। তিনি এ সমস্যা সমাধানে অব্যাহত কাজ করতে ওআইসির প্রতি আহবান জানান।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের এই সংকটে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় চুপ করে বসে থাকতে পারে না। তিনি রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের ওপর সব ধরনের দমন পীড়ন বন্ধের দাবি জানান।
মিয়ানমারে ওআইসির বিশেষ দূত ড. হামিদ আলবার সম্মেলনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশ ত্যাগের ওপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো, তাদের মানবাধিকার লংঘন এবং রাষ্ট্রীয় মদদে চালানো সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরা হয়।
তিনি মিয়ানমারের বিষয়ে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেন এবং মিয়ানমারের প্রতি এই সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান।
অধিকাংশ ওআইসি দেশ রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্দশার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও সহিংসতার অবসানের আহ্বান জানিয়েছে এবং তাদের নাগরিকত্বসহ মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
রাখাইন মুসলিমদের কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংকট কেবল একটি মানবিক বিষয়ই নয় বরং মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এর সমাধান করা প্রয়োজন- এ ব্যাপারে মতৈক্য প্রকাশকালে কতিপয় দেশ জাতিসংঘ ও মানবাধিকার কাউন্সিলের মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
পরে বৈঠকে অবিলম্বে নৃশংসতা বন্ধ, মানবিক সহায়তার বাধাহীন প্রবেশ, বৈষম্যের অবসান, বিদ্যমান আইন সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং রাখাইন রাজ্যে শরণার্থী ও বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
ওআইসি সদস্য দেশগুলো এই মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং এ বিষয়ে একটি স্থায়ী সমাধান বের করার জন্য মিয়ানমার, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আরো বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য ওআইসি মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানায়।
তারা গত কয়েক দশক ধরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানের প্রতি বাংলাদেশের বদান্যতা ও আতিথেয়তার প্রশংসা করেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নতুন করে আসা লোকদের পরিদর্শনে কক্সবাজার সফরের সুযোগ করে দেয়ার জন্য ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিস রেন্টো মারসুদি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান এবং সভায় অবহিত করেন যে, তিনি শিগগিরই ওই এলাকা সফর করবেন।
মূল বৈঠকের বাইরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো শ্রি আনিফাহ আমান-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তারা দ্বিপক্ষীয় সহায়তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমদ আল ওথাইমীন, কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত ইলদিজ-এর সঙ্গেও বৈঠক করেন।