ফাইল ছবি
ঢাকা : আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের।
এসব বৈঠকে প্রাথমিক ভাবে আট হাজারের মত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজী হয়েছে মিয়ানমার সরকার। একই সাথে জিরো লাইনে আটকে পড়া আরো সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষকে তারা ফিরিয়ে নেবে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছে। কিন্তু সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া কতটা সহজ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সাবিনা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন গত বছর অগাস্টের শেষ সপ্তাহে। স্বামীকে হত্যার পর দুই সন্তান নিয়ে তিনি পালিয়ে আসেন জীবন বাঁচাতে। কিন্তু প্রায় ছয় মাস কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার দেশ মিয়ানমারের মংডুতে ফিরে যাওয়ার।
তিনি বলছিলেন "আমাদের সেখানে জমি-জমা আছে। যদি ঘরবাড়ি এখনো অবশিষ্ট থাকে আর আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া হয় তাহলে আমি অবশ্যই ফিরে যেতে চাই"। সাবিনার মত আরো অনেকেই বলছেন যে তারা তাদের দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে চান।
তেমনি একজন কুতুপালং ক্যাম্পের সেলিম মোহাম্মদ। তিনি বলছিলেন "রিফিউজি হওয়া তো আমাদের উদ্দেশ্য না। মিয়ানমার যদি নিরাপদ হয় তাহলে আমরা চলে যাবো। আমাদের সেখানে জমি-জমা বুঝিয়ে দিতে হবে, ঘর বাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। শুনেছিলাম আনান কমিশনের একটি রিপোর্ট দিয়েছে। সেটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের সেখানে অসুবিধা হবে না বলে মনে করি"।
বর্তমানে সরকারি হিসেবে সাত লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। সরকার বরাবরই বলে এসেছে মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে কিন্তু দিন শেষে তাদের নিজের দেশ অর্থাৎ মিয়ানমারে ফেরত যেতে হবে। ছয় মাসে সেই ফেরত যাওয়া বা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কতখানি এগিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে গতবছরের ২৩শে নভেম্বর একটি সমঝোতা স্মারকে একমত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। যাকে ``অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অফ ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট`` বা রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত মানুষদের ফিরিয়ে আনার সমঝোতা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
এরপর এ বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে এক চুক্তি হয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৩০০জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে।
যেদিন থেকে যাওয়া শুরু হবে, তার পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে প্রক্রিয়াটি শেষ হবে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন। কিন্তু দফায় দফায় এসব বৈঠক আর চুক্তি হলেও মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা আসলে কী?
জবাবে কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, "এখানে এত অধৈর্য হলে চলবে না। এটি একটি আলোচনা শুরু হয়েছে, অগ্রসর হয়েছে এবং আমরা মাঝপথে আছি। হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। এর আগেও আমাদের দেশে এমন সমস্যা হয়েছে তখনো সময় লেগেছে। এখন যেহেতু সমস্যাটা বেশি তাই সময়টা একটু বেশি লাগবে"।
কিন্তু তালিকায় থাকা সবাই কি জানে যে তাদের ফেরত পাঠানো হবে?
জবাবে মিস্টার কালাম বলছেন "আট হাজার ৩২ জনের যে তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠানো হয়েছে সে সম্পর্কে তালিকায় থাকা মানুষেরা কিছুই জানেন না। মিয়ানমার অনুমোদন করলেই সেটা তাদের জানানো হবে"।
অর্থাৎ তালিকায় থাকা রোহিঙ্গারা আদৌ যেতে চান কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
মিয়ানমার রোহিঙ্গা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রধান রকিবুল্লাহ বলছেন প্রত্যাবাসনের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে খুব কম তথ্য আছে। অনেকেই এ সম্পর্কে জানেন না।
মি. রকিবুল্লাহ বলছেন "এসব আলাপ আলোচনার সময় আমরা যারা রোহিঙ্গা লিডার আছি তাদের সাথে নিতে হবে বলে আমরা মনে করছি। কারণ আমরা যেতে চাই কিনা, কিভাবে যেতে চাই সেটা আমাদের কাছে তাদের জানা দরকার"। তিনি বলেন, "আমাদের মনে একটা সন্দেহ আছে এই প্রত্যাবাসন নিয়ে কারণ আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। যখন তথ্য থাকবে তখন হয়ত এই সন্দেহ থাকবে না"।
মিস্টার রকিবুল্লাহ বলেন, "আমরা বাংলাদেশে থাকতে চাই না কিন্তু সঠিক ভাবে আমাদের সব অধিকার নিশ্চিত করে তারপর ফেরত পাঠাতে হবে"। এদিকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, মিয়ানমার সীমান্তের জিরো লাইনে আটকে পড়া প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত নিতে রাজি হয়েছে।
তবে সব কিছুই এখনো আলাপ আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে, চূড়ান্ত ভাবে প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু হতে আরো সময় ব্যয় হবে সেটা কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন।-বিবিসি বাংলা