Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ২ ১৪৩১, মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪

‘রাজনীতির বাইরে থেকেও দেশের জন্য কাজ করা যায়’

মাহমুদা পারভীন নূপুর, ইউকে করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০২:৫২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০২:১০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রিন্ট:

‘রাজনীতির বাইরে থেকেও দেশের জন্য কাজ করা যায়’

-রুবি হক

লন্ডন : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-র সহযোগি সংগঠন জাতীয় নারী জোট যুক্তরাজ্য শাখার আহ্বায়ক রুবি হক বলেছেন, ইচ্ছা করলে রাজনীতির বাইরে থেকেও দেশের জন্য কাজ করা যায়। তিনি মনে করেন, ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে শনির দশা নেমে এসেছিল বর্তমানে সেই অপরাজনীতি থেকে দেশ অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে।

সম্প্রতি লন্ডনে বহুমাত্রিক.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন রুবি হক। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইউকে করেসপন্ডেন্ট মাহমুদা নুপুর।

বহুমাত্রিক.কম : প্রবাসে থেকে দেশকে কেমন দেখছেন?

রুবি হক : বলা চলে ​এই লন্ডনেই ছোট থেকে বড় হয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি, আমার বাপ-দাদার দেশ। আমার আত্মপরিচয়ের শিকড়। সেই শৈশব থেকেই বাংলাদেশের প্রতি আমার একটি অবারিত আকর্ষণ। বাংলাদেশ আমার এক ভালবাসার নাম।

বহুমাত্রিক.কম : ​দেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

রুবি হক : ​একটা দেশের রাজনীতিকে অল্প কথায় মূল্যায়ন করা কঠিন। কারণ রাজনীতিতে অনেকগুলো প্রতিপাদ্য বিষয় জড়িয়ে থাকে যা থেকে রাজনীতির পূর্ণাঙ্গরূপ সম্পর্কে মন্তব্য করা যায়। তবে সংক্ষেপে বলতে গেলে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি অতীতের যে কোন সময় থেকে অনেকটাই অগ্রগামী ও প্রগতিশীল। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে শনি’র দশা নেমে এসেছিলো, যে রাজনীতি স্বাধীন বাংলাদেশের মূল চিত্রটিকেই বদলে দিতে চেয়েছিলো সেই অপরাজনীতি থেকে বর্তমান বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে সচেষ্ট হচ্ছে।

বহুমাত্রিক.কম : প্রবাসে থেকেও দেশের জন্য কিভাবে কাজ করতে চান?

রুবি হক : ​যুক্তরাজ্য বিশ্ব রাজনীতির একটি চারণভূমি। এখান থেকে যেকোন দেশের রাজনীতিকে খুব পরিষ্কারভাবে অবলোকন করা সম্ভব। এর অনেকগুলো কারণ আছে। তবে প্রবাসে থেকে দেশের জন্য কাজ করতে শুধু রাজনীতির দ্বারস্থ হতে হবে তা কিন্তু ঠিক না। কেউ যদি ইচ্ছা করে তাহলে রাজনীতির বাইরে থেকেও দেশের জন্য কাজ করতে পারে। আমি রাজনৈতিকভাবে এবং রাজনীতির বাইরে থেকে উভয় পন্থায় দেশের জন্য কাজ করতে আগ্রহী।

জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সাথে রুবি হক

বহুমাত্রিক.কম : নারী হিসাবে রাজনীতি করতে গিয়ে কী ধরণের বাঁধার মুখোমুখি হয়েছেন বা হচ্ছেন?

রুবি হক: ​এই দেশে মূলধারার রাজনীতি করতে গিয়ে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ একেবারেই চোখে পড়ে না বললে ভুল হবে না। কিন্তু যখন এদেশে আমরা দেশের রাজনীতির চর্চা করি তখনই দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। এখানকার বাংলাদেশী রাজনৈতিক দলগুলোতে ইদানিং নারীদের উপস্থিতি অতীতের চেয়ে অনেকটাই ভাল কিন্তু তা আশাব্যঞ্জক নয়। আর এর জন্য দায়ী বাংলাদেশি নষ্ট রাজনীতির অপসংস্কৃতি।

এখানে একটি রাজনৈতিক দলে যেমন পুরুষদের মধ্যে গ্রুপিং থাকে নারীদের মধ্যেও সেটি সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া অতি নগন্য সংখ্যক রাজনৈতিক কর্মী এবং নেতানেত্রী ছাড়া অন্যরা দেশে থাকতে হয়তো প্রাতিষ্ঠানিক কিছু শিক্ষা ছিলো কিন্তু রাজনীতির উপর যেমন পড়াশুনা করেনি এদেশে এসেও তা করে না।

দেশে থাকতে উনাদের অনেকের রাজনৈতিক অবস্থান হয়তো তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ছিল না কিন্তু এখানে সেই লোকগুলোই দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে বসে আছেন। যুক্তরাজ্যে রাজনীতির এই অপসংস্কৃতি থেকে নারীরাও বেরিয়ে আসতে পারছে না বরং এখানে নারীরাই নিজের অবস্থানকে শক্ত করার জন্য অন্য নারীদের বিরুদ্ধে কাজ করে। যা সুস্থ্য রাজনীতির জন্য লজ্জ্বাজনক।

বহুমাত্রিক.কম : প্রবাসে কি ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।?

রুবি হক : ​বাংলাদেশী রাজনীতি বলতে আমি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) যুক্তরাজ্যের একজন কর্মী। আমি জাতীয় নারী জোট, ইউকে’র আহ্বায়ক। জাতীয় নারীজোট যদিও একটি বাংলাদেশী নারী সংগঠন কিন্তু এটির কর্মতৎপরতা বিশ্বের যে কোন দেশে চালানো যেতে পারে। এই সংগঠন সকল কর্মজীবি, শ্রমজীবি ও পেশাজীবি নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে থাকে।

যুক্তরাজ্য সফরে যাওয়া শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও নারীনেত্রী শিরীন আক্তার এমপি’র সাথে রুবি হক

বহুমাত্রিক.কম : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি বড় ইস্যু। যুক্তরাজ্যে এ বিষয়ের উপর জনমত তৈরিতে আপনারা কি ধরনের ভূমিকা রাখছেন?

রুবি হক : ​বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার সাথে সাথেই আমরা এই লন্ডনে সর্বমোট ৭২টি রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে ‘ইন্টারন্যাশাল ক্রাইম ট্রাইবুনাল ফোরাম’ নামে একটি সংগঠনের গোড়াপত্তন। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ সপক্ষশক্তির প্রতিটি সংগঠন ও ব্যক্তি অত্যান্ত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন।

তবে জামাত বিএনপি চক্র এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ও আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে বেশ একটা জোরালো অবস্থান নিয়েছিলো। কিন্তু আমাদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে ওরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। জনমত তৈরীর বিষয়ে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি যা বিচার শুরু থেকেই আমরা করে আসছি। এর মধ্যে মানববন্ধন, সভা, সেমিনার, টিভি টক শো, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বহুমাত্রিক.কম : ইউকে’র স্থানীয় রাজনীতিতে আমাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। আপনার মূল্যায়ন কী? স্থানীয় রাজনীতিতে জড়ানোর কোন ইচ্ছা আছে কি?

রুবি হক : ​এদেশে বাঙ্গালি অভিবাসীদের মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়ছে কথাটিকে ঠিক কিন্তু তা বিতর্ক সাপেক্ষ। বর্তমান প্রজন্মের লোকদের অংশগ্রহণ খুবই নগন্য বললে ভুল হবে না। যারা আগে দেশ থেকে এসেছেন এবং বিভিন্ন সময় বিশেষ করে বর্ণবাদী সমস্যা, হাউজিং সমস্যা জাতীয় বিভিন্ন সমস্যাকে মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেকেই রাজনীতিতে এক ধরনে বাধ্য হয়েই রাজনীতিতে অংশ নিয়েছেন। তাদের কথা বাদ দিলে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ সেভাবে বেড়েছে বলে আমি মনে করি না। তবে পূর্বে যারা এদেশে এসে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়েছেন তাদেরই সৃষ্টি আজকের এই সফলতা। আমি ২০০২ সাল থেকেই লেবার পার্টির একজন সক্রিয়কর্মী। এখন আমি রেডব্রীজ বারার উত্তর ইলফোর্ড লেবার গ্রুপের আমি একজন মেম্বার। ভবিষ্যতে হয়তো আরো বেশি করে নিজেকে মূলধারার রাজনীতিতে জড়ানোর ইচ্ছা আছে।

স্বামীর সাথে রুবি হক

বহুমাত্রিক.কম : আপনার পরিবার-সন্তানদের কথা বলুন। তাদের কিভাবে দেখতে চান?

রুবি হক : আমার স্বামী মজিবুল হক মণি বাংলাদেশে ও এ দেশের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত। আমাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান। আমি আগেই বললাম যে, নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদেরকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে উৎসাহ প্রধানের ক্ষেত্রে আমাদের কমিউনিটিতে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। তবে আমার মেজো মেয়ে কাজী সোহা হক ‘ল’ পাশ করে আইন পেশার পাশাপাশি রাজনীতিতে অংশ করতে আগ্রহী।

বহুমাত্রিক.কম : ​আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

রুবি হক : ​নারী অধিকার নিয়ে আমি ব্যাপকভাবে কাজ করতে আগ্রহী। এদেশের মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করবো এবং তা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন অনগ্রসর দেশে অবহেলিত নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা রাখি।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer