ঢাকা : পাকিস্তানি গায়ক আদনান সামি প্রথমবারের মতো গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে জনপ্রিয়তা পান মুম্বাইয়ে এসে হিন্দি গানের মাধ্যমে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যাওয়া আদনান সামির জাদুকরী কণ্ঠে সবাই মাতোয়ারা হলেও অতিরিক্ত মোটা হওয়ার কারণে বারবারই পিছিয়ে পড়তে হচ্ছিল তাকে। এমনকি এ নিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগতে ভুগতে একসময় শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েন ‘মুঝকো লিফ্ট করা দে’ খ্যাত এই গায়ক!
সালটা ২০০০। ‘মুঝকো ভি তো লিফট কারা দে’-র সঙ্গে নেচে উঠেছিল গোটা দেশ। র্যাপ, পপের বাজারে একটু অন্যরকম তাজা হাওয়া এনে দিয়েছিলেন আদনান। সুরেলা কণ্ঠের ওই গায়ক প্রথম ঝলকেই মন কেড়েছিলেন লাখ লাখ শ্রোতার। একে একে আরও অ্যালবাম, আরও খ্যাতি। কিন্তু তবুও মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন আদনান। কারণ তার ওজন তখন ২০০ কেজি।
নিজের চেহারা নিয়ে নানা ভাবে ট্রোলড হতে হয়েছিল আদনানকে। একটা সময় প্রবল মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন গায়ক। ‘তেরা চেহেরা’, ‘উড়ি উড়ি’, ‘ইসক হোতা নেহি’ গান তখন লোকের মুখে মুখে ফিরছে। কেরিয়ারের চূড়ান্ত সাফল্যও তাঁকে শান্তি দিতে পারেনি। প্রিয়জনের কাছ থেকেও নাকি আঘাত পেয়েছিলেন তিনি।
‘বলিউড হাঙ্গামা’-র একটি সাক্ষাৎকারে আদনান বলেছিলেন, ‘আমি ওবেসিটিতে আক্রান্ত মানে এই নয় আমার একটা সুন্দর মন নেই। শুধু পর্দায় আমাকে সুন্দর দেখায় না।’
২০০৫ সালে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যান আদনান। সবাই ধারণা করেছিলেন অতিরিক্ত মেদ কমাতে শল্য চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছেন তিনি। কিন্তু দেড় বছর পর ফিরে এসে আদনান জানান ভিন্ন কথা। তিদনি জানান, অতিরিক্ত ওজনের কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানান, দ্রুত ওজন না ঝরালে আর হয়তো মাস ছ’য়েক বাঁচবেন তিনি।
চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই শুরু হয় মেদ নিধন অভিযান। সঠিক ডায়েট ও শরীরচর্চার জন্য নামী নিউট্রিশনিস্টের দ্বারস্থ হন তিনি। উড়ে যান হিউস্টন। তবে ওই অভিযানে তিনি একা ছিলেন না। পরিবার ও বন্ধুরাও তাঁর পাশে ছিলেন বলে জানিয়েছেন আদনান।
ওজন ঝরানোর প্রক্রিয়া মোটেই সহজ ছিল না। আদনানের কথায়, ‘বিষয়টা ৮০ শতাংশ মানসিক এবং ২০ শতাংশ শারীরিক’। ডায়েট শুরুর আগের দিন নাকি কব্জি ডুবিয়ে পছন্দের খাবার ম্যাশড পটেটো, প্রচুর মাখন মাখানো স্টেক এবং বড়সড় চিজ কেক দিয়ে ভুরিভোজ সেরেছিলেন তিনি। তবে, ঠিক তার পর দিন থেকেই শুরু করেছিলেন লো-ক্যালরি এবং হাই-প্রোটিন ডায়েট।
প্রথমেই তাঁর খাদ্যতালিকা থেকে ভাত, রুটি এবং জাঙ্কফুড ছেঁটে ফেলেন নিউট্রিশনিস্ট। সেখানে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নেয় স্যালাড, মাছ এবং সেদ্ধ ডাল।
আদনান বলেছেন, ‘নিউট্রিশনিস্ট আমাকে বলেন আগে মন থেকে খাই খাই বন্ধ কর। তারপর ডায়েট মেনে চল। মনকে সংযত করলে তবেই শরীর কথা শুনবে।’
আদনানের দিন শুরু হতো এক কাপ চিনি ছাড়া চা দিয়ে। লাঞ্চে সব্জির স্যালাড এবং মাছ। রাতে শুধু সেদ্ধ ডাল অথবা চিকেন। তা ছাড়া, খুচরো খিদে মেটাতে বাড়িতে তৈরি পপকর্ন, লবণ ও মাখন ছাড়া। সঙ্গে চিনি ছাড়া ড্রিঙ্কস।
সঠিক ডায়েট মেনে ৪০ কিলোগ্রাম ওজন ঝরানোর পরেই জিমে যাওয়ার অনুমতি পান আদনান। সেখানে ট্রেডমিল এবং হালকা ফ্রি-হ্যান্ড দিয়েই শুরু হয় তাঁর শারীরিক কসরৎ। কয়েক মাস পর ট্রেনার প্রশান্ত সবন্ত তাঁর জন্য ওয়েট ট্রেনিং-এর রুটিন বানিয়ে দেন। সপ্তাহে ছ’দিন মেপে ফিটনেস ট্রেনিং শুরু করেন গায়ক।
প্রতি মাসে ১০ কিলোগ্রাম করে ওজন ঝরিয়েছেন আদনান। ১৬ মাসের মধ্যে ১৫৫ কিলো ওজন ঝরিয়ে এখন তাঁর ওজন ৬৫ কিলোগ্রাম। ২০১৩ সালে ফের যখন পর্দায় ধরা দেন গায়ক, গোটা ভারত তাঁর নতুন লুক দেখে চমকে ওঠে।
মেকওভারের পর আদনান নিজেও খুব খুশি। বলেছেন,‘আগে নিজের পায়ের পাতা দেখতে পেতাম না। আর এখন অনেক ফিট এবং ঝরঝরে লাগে। মানসিক অবসাদও চলে গিয়েছে।’
স্ত্রী ও সন্তান মদীনাকে নিয়ে এখন সুখেই আছেন আদনান। ফিরতে চান না আগের সেই দিনগুলোতে, যেখানে মেদের ভারে চাপা পড়ে যেত জীবনের সব আনন্দই।