ছবি : বহুমাত্রিক.কম
তাহিরপুর থেকে : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটার দুই তীরে দুই ধর্মের-দুই সাধুর ভক্তদের মিলনমেলায় ঢল নেমেছিল হাজারো মানুষের। ভক্তদের এই মিলনমেলা চলবে ৩ দিন পর্যন্ত।
একটি হিন্দু ধর্মালম্বীদের পনাতীর্থ বা গঙ্গাস্নান আর অন্যটি হল মুসলমানদের হযরত শাহ আরোফিন (রঃ) এর ওরস মোবারক। এই দুই উৎসবের মধ্য দিয়ে ঘটে দুই ধর্মের প্রায় ১৫ লক্ষাধিক মানুষের আগমনে মিলন মেলায় যাদুকাটা নদী কানায় কানায় পরিপূর্ন হয়ে উঠবে।
দু’ধর্মের দু’আধ্যাত্বিক সাধকের ভক্তদের মিলনমেলাকে কেন্দ্র করে সিলেট বিভাগের সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জসহ ৪ জেলা এবং উপজেলাগুলোতে গত এক সপ্তাহ ধরেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দুই ধর্মের ভক্তদের মাঝে সকল প্রস্তুতি ও তাদের নিরাপত্তার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, প্রতি বছরের ন্যায় ইতিমধ্যে দেশের সমগ্র অঞ্চল থেকে হাজার হাজার কাফেলাধারী পাগল ফকির, ভক্ত, সাধক ও দর্শনার্থীরা ওরস এবং স্নানযাত্রা মহোৎসবে যোগ দিতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো ও আখড়াবাড়ীর আশে পাশের গ্রামে আসতে শুরু করেছে।
দুইধর্মের দুই উৎসবের একটি-হিন্দু ধর্মালম্বীদের পনাতীর্থ বা গঙ্গাস্নান ১৪মার্চ থেকে শুরু শেষ হবে ১৬মার্চ। ১৫মার্চ ভোর ৫টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গঙ্গা স্নান হবে। হিন্দুধর্মালম্বীরা যাদুকাটা নদীতে গাঙ্গা স্নানের মাধ্যমে তাদের সারা বছরের পাপ মোচনসহ পুণ্য লাভের জন্য এখানে আসেন মা, বাবা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আসেন।
১৫১৬ খ্রিষ্টাব্দে পনাতীর্থের সূচনা করেন অদ্বৈত আর্চায প্রভু। তার জন্ম সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের নবগ্রামে। কিন্তু সেই গ্রাম যাদুকাটা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বহু বছর আগেই। এজন্য নদীর তীর সংলগ্ন রাজারগাঁও গ্রামে অদ্বৈত আর্চায মন্দির ও আখড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রতি বছরের চৈত্র মাসে এই তৃথীতে গঙ্গাস্নানের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে হিন্দু ধর্মাবলাম্বীরা যাদুকাটা নদীতে ছুটে আসেন।
অন্যটি হল-১৫ মার্চ থেকে বাদ আছর ওলি আউলিয়া ও হযরত শাহ আরোফিন (রঃ) এর জীবন দর্শনের উপর আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে ৩ দিনব্যাপি ওরস বার্ষিক মোবারক আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে। শেষ হবে ১৭ মার্চ আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে।
মুসলমান ধর্মালম্বীরা তাদের মনোবাসনা পূরণ ও সিদ্ধি লাভের আশায় শাহ আরোফিন (রঃ) এর ওরসে যান। মুসলমানদের ৩৬০ আউলিয়ার মধ্যে শাহ আরোফিন (রঃ) ছিলেন অন্যতম। সবাই জানেন তিনি একজন জিন্দা পীর। তিনি ভারতের মেঘালায় পাহাড়ের বড়বড় পাথরের গুহায় বসে আল্লাহ ইবাদত করতেন। ওইটাই ছিল তার একমাত্র আস্তানা, বাংলাদেশে কোন আস্তানা নেই। কিন্তু ভারতের সেই আস্তানায় ভক্তদের যেতে দেয় না ভারতীয় বিএসএফ। তাই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের লাউড়েরগড় এলাকায় জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন স্থানে শাহ আরোফিন (রঃ) এর আস্তানা তৈরি করে সেখানেই ওরস পালন করা হয়।
সেখানে বক্তরা বাউল, জারি, সারি, মারফতি, আধ্যাত্মিক, বাউল শাহ আব্দুল করিম, হাসন রাজা, রাধারমন সহ বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া গান পরিবেশন করে গানে গানে মুখরিত করে তুলে চারপাশ।
এ সময় পূণার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য যাদুকাটা নদীর চারপাশ। শাহ আরোফিন (রঃ) এর ওরস ও পনাতীর্থকে কেন্দ্র করে যাদুকাটা নদীর দুই তীর রাজারগাঁও ও লাউড়েরগড়ে বসে বিরাট বারুনী মেলা। মেলায় অসংখ্য দোকানপাট বসে। এসব দোকানপাট থেকে কোটি টাকা চাঁদা উঠানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসীর মেলাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠে বিভিন্ন শ্রেণির চাঁদাবাজচক্র চোরাচালানীরা ওপেন বিক্রি করে মদ, গাজা, হেরোইন ও মেলা বসায় জুয়ার বোর্ড। এছাড়াও চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণধৌলাইয়ের শিকার হয়।
বহুমাত্রিক.কম