Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

যশোরে গাইড বই বাণিজ্যে তিন শিক্ষক নেতা

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:৩৪, ৫ মার্চ ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

যশোরে গাইড বই বাণিজ্যে তিন শিক্ষক নেতা

যশোর : যশোরে শিক্ষক সমিতির তিন নেতার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার গাইড বই বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। খোদ শিক্ষকরাই এ অভিযোগ করেছেন।

একই সাথে গাইড বই বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী যশোর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে তাকে বদলির মিশনে নেমেছেন ওই শিক্ষক নেতারা। এছাড়া শিক্ষক সমিতির সাথে যুক্ত হয়েছেন কতিপয় অসাধু প্রকাশক। এসব শিক্ষক নেতা ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের শত শত কোটি টাকার বিনামূল্যে দেওয়া পাঠ্যবই কোন কাজে আসছে না। ওই সব শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে প্রকাশকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় শিক্ষক সমিতি। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ মূল্যে নিন্মমানের গাইড বই কিনতে বাধ্য করে শিক্ষক নেতারা।

সূত্র জানায়, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (সেলিম ভূঁইয়া) গ্রুপের শিক্ষক নেতা আছাহাবুল গাজী, (আওয়াল) গ্রুপের আব্দুল মজিদ ও মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মাওলানা নুরুল ইসলাম যশোরে দীর্ঘদিন ধরে গাইড বই বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। তারা জেলার প্রায় ৮০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থীদেরকে জিম্মি করে এই বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন।

কেউ এই গাইড বই বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। কিন্তু বর্তমানে যশোর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রশিদ চলতি বছর গাইড বই বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। আর এতে করে তার ওপর খেপেছেন ওই শিক্ষক সমিতির নেতারা। শিক্ষক সমিতির নেতারা ওই শিক্ষা অফিসার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করে তাকে বদলির মিশনে নেমেছেন। আর শিক্ষক সমিতির নেতাদের এই অপকর্মের সাথে যোগ হয়েছেন কতিপয় অসাধু প্রকাশক ও বই ব্যবসায়ী।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (সেলিম ভূঁইয়া) গ্রুপের যশোর সদর উপজেলা শাখার সেক্রেটারি আছাহাবুল গাজী বলেন, আমরা বই বাণিজ্যের বিরুদ্ধে। আমরা সব সময় সরকারি বই পড়াই। আমরা যশোর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ৬৫ জন প্রধান শিক্ষক ও ৪০ জন সুপার স্বাক্ষরিত অভিযোগ ডিজির বরাবর করেছি।

তিনি অভিযোগ করেন, শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বুলবুল নেপথ্যে থেকে আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছে।

এ ব্যাপারে শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, উনার (আছাহাবুল) মাথা খারাপ হয়ে গেছে। উনি (আছাহাবুল) শিবির নেতা ছিলেন। শিবির নেতা না হলে বাদশা ফয়সাল স্কুলে চাকরি হয় কি করে ? উনার বউকে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চাকরি দিয়েছেন। উনার ছেলেকে প্রাইভেট ইউনিভারসিটিতে পড়ান কি করে। উনার গাইড বই বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে উনি পাগল হয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, সরকার চায় না কোন সহায়ক বই বিক্রি হোক। উনারা বছরের শুরুতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে পুস্তক তালিকা ধরিয়ে দিয়ে এক একজন অভিভাবককে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বই কিনতে বাধ্য করেন। উনি সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আছাহাবুল গাজী প্রতি বছর কোটি টাকার বাণিজ্য করেন। তার নামে যশোর শহরে তিনিটি ফ্লাট রয়েছে।

এদিকে, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (আওয়াল) গ্রুপের যশোর জেলার সভাপতি আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে রয়েছে গাইড বাণিজ্য ছাড়াও নিময় বার্হিভুতভাবে প্রধান শিক্ষকের পদ দখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাওয়ার জন্য তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব পুরানো অভিযোগ। সদর উপজেলায় গাইড বই কে কি করে আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আর সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির নামে কোন টাকা নেওয়া হয় না।

এ প্রসঙ্গে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, আমরা এখনো কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তকরে ব্যবস্থা নেব।

গাইড বই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সব সময় গাইড বই এর বিরুদ্ধে। এ জন্য বছরের শুরুতেই আমারা গাইড বই নিষিদ্ধের ব্যাপারে শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করেছিলাম। তবে অভিযোগ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer