Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে লুটপাট হচ্ছে সরকারি ওষুধ

কাজী রকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০১:৩৭, ৬ নভেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে লুটপাট হচ্ছে সরকারি ওষুধ

ছবি : সংগৃহীত

যশোর : গ্যাস্ট্রিকের ইনজেকশন ওমোপ্রাজল ও অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট কিলম্যাক্স যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সরকারিভাবে সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু অসংখ্য রোগীর অভিযোগ, তারা এ ওষুধ পাচ্ছেন না। হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন থেকেও স্বজনদের দিয়ে এ ইনজেকশন বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।

গত কয়েকদিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওমোপ্রাজল ইনজেকশন ও কিলম্যাক্স ট্যাবলেটের মতো সরকারের সরবরাহকৃত অধিকাংশ ওষুধ রোগীরা পাচ্ছেন না। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, সরকারি ওষুধ নিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। সরবরাহকৃত ওষুধ রোগীদের না দিয়ে সংশ্লিষ্টরা তা লুটপাট করছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঠিকভাবে তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা না থাকায় এ অনিয়ম বেড়েই চলেছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জানিয়েছেন, সরকারি ওষুধ রোগীদের সঠিকভাবে প্রদানের জন্য চিকিৎসক ও সেবিকাদের নির্দেশ দেয়া আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রোগীর স্বজনদের বোকা বানিয়ে ওষুধ লুটপাটের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে শুরু করে প্রতিটি ওয়ার্ডে সরকারি ওষুধ নিয়ে অনিয়ম চালানো হচ্ছে। কতিপয় চিকিৎসক সেবিকা ও কর্মচারীরা এ অনিয়মের সাথে জড়িত রয়েছেন। তবে অস্ত্রোপচার কক্ষে কৌশলে ওষুধ লুটপাট চালানো হয়।

রোগীর লোকজন জানিয়েছেন, অপারেশন করার আগের রাতে সংশ্লিষ্ট ইউনিটে ভর্তি হওয়া চিকিৎসক ওষুধ সামগ্রী কেনার জন্য তাদেরকে তালিকা করে দেন। এরমধ্যে অনেক ওষুধ সামগ্রী হাসপাতালে সরকারিভাবে থাকলেও তা দেয়া হয়না। বাইরে থেকে ওষুধ কেনার পর সকালে রোগী নিয়ে স্বজনেরা চলে যান অস্ত্রোপচার করে সামনে। এরই মধ্যে কর্মচারীরা এসে ওষুধ নিয়ে যান অস্ত্রোপচার করে ভিতরে। কিছু সময় পর অপারেশনের জন্য রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত তিনদিন হাসপাতলের অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনে অবস্থান করে দেখা গেছে, চিকিৎসক রোগীর দেয়া তালিকায় যেসব ওষুধ সামগ্রী লিখেছেন তার অধিকাংশ হাসপাতালে সরকারিভাবে সরবরাহ রয়েছে। শুধু মাত্র নামটা ভিন্ন। আবার কোন কোন ওষুধের নামের মিলও রয়েছে। যেমন স্যালাইন লেকটোরিড, হার্টসল, ইনজেকশন ইটোরাক, কোটামিন, আইভি ক্যানোলা, স্যালাইনসেট, পভিসেফ, ক্ষতস্থান সেলাই করার জন্য প্রোলিন গ্লোবসসহ আরো কয়েক প্রকারের সুতা। এগুলো হাসপাতালে থাকা সত্বেও রোগীর স্বজনদের দিয়ে বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হাতানো হয়ে থাকে সুতা। যার প্রতিটির দাম ৩শ’ থেকে ৫শ’ ৫০ টাকা। রোগীর স্বজনদের দুর্বলতাকে পুঁজি করে তাদের কাছ থেকে ৩/৪টি করে হাতিয়ে নেয়া হয়।

রোগীর স্বজন বেবী ও রকি হোসেন বলেন, তার রোগীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের জন্য মোট ৪ টি সুতা দিতে হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষ করে চিকিৎসক বেরিয়ে যাওয়ার পরও এক কর্মচারী ছোট স্লিপ দিয়ে বলেন, এ সুতাটি তাড়াতাড়ি কিনে আনেন। ক্ষতস্থান সেলাই দিতে হবে।

মুজিবর রহমান নামে আরও একজন জানান, তার বোনের সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের জন্য ৩২শ’ টাকার ওষুধ সামগ্রী কিনে দিয়েছি। এরপরেও শর্ট স্লিপ দিয়ে আরো ২টি সুতা কিনে আনতে বাঁধ্য করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, রোগীর স্বজনদের দিয়ে কেনানো হাজার হাজার টাকার ওষুধ মজুদ রেখে সরকারীভাবে সরবরাহকৃত ওষুধ সামগ্রী দিয়ে অস্ত্রোপচারের কাজ করা হয়। ওষুধ মজুদ করার জন্য, সার্জারী বিভাগ, অর্থোপেডিক বিভাগ, ইএনটি বিভাগ ও গাইনী বিভাগের অস্ত্রোপচার কে নির্দিষ্ট কর্মচারী রয়েছে। তাদের কাজই রোগীর স্বজনদের বোকা বানিয়ে হাজার হাজার টাকার ওষুধ লুটপাট করা।

এদিকে হাসপাতালে প্রতিটি ওয়ার্ডে সরকারি ওষুধ নিয়ে চলছে প্রতারণা। বেশি দামের বিভিন্ন এনটিবায়োটিক ও ট্যাবলেট এবং স্যালাইন ওয়ার্ডে সরবরাহ থাকলেও সাধারণ রোগীরা পাচ্ছেন না। তবে কোন রোগীর তদবির থাকলে দেয়া হয়।

মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে বিষপান করে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন লাখি খাতুন জানান, তিনদিনে তার রোগীর জন্য ৪৬শ টাকার ওষুধ কিনে আনতে হয়েছে। ওয়ার্ড থেকে কোন ওষুধ দেয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে সরকারি ওষুধ নিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারনা করা হচ্ছে। কিন্তু অসহায় মানুষেরা কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। ওষুধ নিয়ে অনিয়মের কারনে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সুত্রে জানা গেছে, ইডিসিএল ও সিএমএইচডি’র প্রায় ৬২ প্রকারের ওষুধ সামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ রয়েছে। প্রতি মাসে ফার্মেসী থেকে এগুলো উত্তোলন ও করা হয়। এগুলো বিনামূল্যের হওয়া সত্বেও রোগীদের দেয়া হয় না।

তাহলে এসব ওষুধ সামগ্রী কোন কাজে ব্যবহার করা হয়? এমন নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে রোগিদের মাঝে।
অস্ত্রোপচার কক্ষের ইনচার্জ খুকু রাণী জানান, তার জানা মতে এখানে (অস্ত্রোপচার কক্ষে) দায়িত্বরত কেউ ওষুধ নিয়ে অনিয়ম করার সুযোগ পাননা। রোগীর স্বজনদের সাথে প্রতারণা করে ওষুধ লুটপাটের ব্যাপারে তিনি বরাবরই সজাগ থাকেন। এখানে সরকারিভাবে যেসব ওষুধ সামগ্রী সরবরাহ আছে তার তালিকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি সাধ্যমতো রোগীদের সরবরাহকৃত ওষুধ প্রদান করে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি এ হাসপাতালে যারা চিকিৎসার জন্য আসেন তাদের অধিকাংশ গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। তারপরও অসাধুরা তাদের সাথে ওষুধ সামগ্রী নিয়ে প্রতারণা করছেন।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম কামরুল ইসলাম বেনু জানিয়েছেন, সরকারিভাবে সরবরাহতকৃত ওষুধ রোগীদের মাঝে সঠিকভাবে বিতরণের জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া আছে। তার জানা মতে রোগীরা সরকারি ওষুধ পাচ্ছেন। তবুও অভিযোগ পেলে বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। যদি ওষুধ নিয়ে কেউ অনিয়ম করেন তাহলে বিষয়টি সহ্য করা হবেনা।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer