Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ২ ১৪৩১, মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪

যশোর মুক্ত দিবস ৬ ডিসেম্বর

কাজী রকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০৩:১৪, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

যশোর মুক্ত দিবস ৬ ডিসেম্বর

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

যশোর : ৬ ডিসেম্বর। ঐতিহাসিক যশোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনেই শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। এদিন বিকেলে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী। যশোরেই প্রথম উঠেছিল বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত সূর্য খচিত গাঢ় সবুজ পতাকা।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) বৃহত্তর যশোর জেলার (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল) উপ-অধিনায়ক রবিউল আলম জানান, ৭১ সালের ৩ডিসেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়।

এ সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাক আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে পর্যদস্তু পাক বাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পালাতে শুরু হয়। যশোর সেনানিবাস ছেড়ে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে খুলনার গিলাতলা সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। পলায়নকালে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শহরতলীর রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের প্রচন্ড লড়াই হয়।

৬ ডিসেম্বর সকালে ও দুপুরে পাকিস্তানের নবম ডিভিশনের সঙ্গে ভারতীয় নবম পদাতিক ও চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশনের প্রচণ্ড লড়াই হয়। বিকালেই পাক সেনা অফিসাররা বুঝে যায়, যশোর দুর্গ আর কোনো ভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়। লে. কর্নেল শামস নিজের ব্রিগেড নিয়ে রাতের আঁধারে গোপনে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যান খুলনার দিকে। এভাবেই একাত্তরে প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা হওয়ার গৌরব অর্জন করে যশোর।

৭ ডিসেম্বর সকালে যুদ্ধের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে যশোর শহরে প্রবেশ করে যৌথবাহিনী। কিন্তু জনমানবশূন্য শহরে কোনো প্রতিরোধের মখোমুখিই হতে হয়নি যৌথবাহিনীকে। পরিত্যক্ত ক্যান্টনমেন্টে একজন পাকসেনাও ছিল না। পাওয়া যায় তাদের ফেলে যাওয়া বিপুল অস্ত্র, গোলা, রসদ। মুক্তিযুদ্ধে যশোর ছিল ৮ নম্বর সেক্টরে। সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুর। তার অধীনে ছিলেন ক্যাপ্টেন আবু ওসমান চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা।

বিকেলে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তি বাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে দখল নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। পাড়া মহল্লায়ও চলে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে ফেটে পড়ে গোটা জেলার মানুষ।

এর আগে ৭১ সালের ৩ মার্চ যশোর কালেক্টরেটের সামনে শহরের রাজপথে বের হয় জঙ্গি মিছিল। যশোরবাসী শপথ নেয় স্বাধীনতা যুদ্ধের। এই মিছিলে হানাদার বাহিনী গুলি চালালে শহীদ হন চারুবালা কর। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনিই যশোরের প্রথম শহীদ।

এরপর থেকেই যশোরে সংগঠিত হতে থাকে প্রতিরোধ। নেতৃত্ব দেয় সংগ্রাম পরিষদ। সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হতে থাকে ছাত্র, যুবক ও মহিলাদের। ২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী তদানীন্তন জাতীয় সংসদ সদস্য জননেতা মশিয়ূর রহমানকে তার বাসভবন থেকে ধরে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

যশোর মুক্তিযুদ্ধের ৮নং রণাঙ্গণ। এখানকার কমান্ডার ছিলেন তদানীন্তন মেজর মঞ্জুর। অন্যদিকে, পাক বাহিনীর মোতায়েন ছিল ১০৭নং ব্রিগেড। এর কমান্ডার ছিলেন বিগ্রেডিয়ার হায়াত খান। যশোর সেনানিবাস থেকে শত্রু বাহিনী ৬টি জেলা নিয়ন্ত্রণ করত।

দেশের প্রথম শক্রসেনামুক্ত জেলা শহর যশোরের প্রাণকেন্দ্র টাউন হল মাঠে (মুন্সী মেহেরুল্লাহ ময়দান) বাংলাদেশ সরকারের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয় ১১ ডিসেম্বর। কলকাতা থেকে পাকিস্তানি কূটনীতিকদের ব্যবহৃত `শেভারলেট` গাড়িতে পেট্রাপোল-বেনাপোল হয়ে যশোর আসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলাম।

হাজার হাজার মুক্তিপাগল মানুষের সামনে তারা বক্তৃতা করেন। এই দুই নেতার সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন জহির রায়হান, এমআর আকতার মুকুল, সংসদ সদস্য ফণীভূষণ মজুমদার, অ্যাডভোকেট রওশন আলী, তবিবর রহমান সরদার প্রমুখ। ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer