Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

যশোর থেকে রপ্তানি হচ্ছে নারীদের চুল

গোলাম মোস্তফা মুন্না, যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:২৮, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

যশোর থেকে রপ্তানি হচ্ছে নারীদের চুল

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

যশোর : নারীদের মাথা থেকে ঝরে পড়া চুল দিয়ে চুলের ক্যাপ, খোপাসহ তৈরী হচ্ছে হরেক রকমের জিনিস। যার বাজার মূল্য খুব বেশি। ফলে মহিলাদের মাথার চুল এখন আর ফেলে দেওয়ার জিনিস নয়। প্রতি কেজি চুল বিক্রি হচ্ছে চার হাজার টাকা।

এ সব চুল প্রক্রিয়াজাত করে চীন ও কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। যশোর থেকে চুল কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হয। পরে তা যায় বিদেশে। গ্রাম থেকে ফেরি করে চুল কেনাসহ প্রক্রিয়াজাত করণে কর্মসংস্থান হয়েয়ে যশোরে কয়েক শত মানুষের।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়ায় গড়ে উঠেছে এমনই একটি চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। সেখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে শতাধিক নারী-পুরুষের। ম্যাশিন দিয়ে শাট বা সাইজ করে পাঠানো হচ্ছে চীন কোরিয়াসহ বিশ্বের নানা দেশে। এ প্রতিষ্ঠানের যৌথভাবে মালিক চুয়াডাঙ্গার আবু বক্কার ও স্থানীয় নারিকেলবাড়িয়ার শওকত আলী। দীর্ঘ আট বছর ধরে তারা হকারদের কাছ থেকে চুল কিনে পাঠাচ্ছেন বাইরের দেশে।

এক সময় নারীরা তাদের মাথার চুল আঁচরিয়ে ফেলে দিত। কিন্তু তখন কি তারা ভেবেছে এই ফেলে দেয়া চুল এক সময় বিদেশে রপ্তাানি হবে, মূল্যবান হবে তাদের ফেলে দেয়া চুল! এ ফেলে দেয়া চুলকে ঘিরেই যশোরের গড়ে উঠেছে চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান। গ্রাম থেকে চুল কিনে নিয়ে যার ফেরিওয়ালা। তারা এ চুল বিক্রি করে প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানে।

হকার হাসিবুল জাানান, তারা বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করে নগদ টাকা ও খাবারসহ বিভিন্ন রকম জিনিস দিয়ে গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে চুল সংগ্রাহ করি। তখন এ সব চুর থাকে অগোছালে। এ চুর এ চুর প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রে বিক্রি করি।

হকার সরু মিয়া বলেন, গ্রামের মহিলারা এক সময় এ সব চুর ফেলে দিত। প্রথম দিকে এ চুল কম দামে ক্রয় করতাম। কিন্তু এখন চুল আর কেউ ফেলে না। গ্রাম থেকে এ চুল কিনতে হচ্ছে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দিয়ে। আর তা বিক্রি করি তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা। আগে চেয়ে চুলে এখন লাভ কম।

নারিকেলবাড়িয়ার ঋষি পাড়ার গৃহবধু কনিকা (২৩) দু’বছর ধরে চুল বাছাইয়ের কাজ করে আসছেন।বাড়ির কাজের ফাঁেক তিনি প্রতি দিন প্রায় এক মত টাকা আয় করেন।

একই কথা বলেন কনিকার প্রতিবেশী গৃহবধু সিমলা রানী (২৭),ববিতা রানী (২৫) ও হাসি বালা। আবু বক্কার ও শওকত আলী জানান, হকাররা বিভিন্ন এলাকা থেকে চুল সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করেন। এর মধ্যে নারীদের মাথার কালো চুল তারা কেনেন প্রকারভেদে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা কেজি দরে। আর সাদা চুল কেনেন ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকায় (প্রতি কেজি)। এরপর অগোছালো চুল ম্যাশিন দিয়ে শাট বা সাইজকরা হয়। বাছাই কাজে সাধারণত নারীদের নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম চুল বাছাইয়ের জন্য তাদের দেয়া হয় ২৫ টাকা করে। স্থানীয় অর্ধ শতাধিক নারী এ কাজ করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন বলে জানা যায়।

প্রতিষ্ঠানটির নারীরা জানান, চুল বাছাইয়ের পর ম্যাশিন দিয়ে তা শাট বা সাইজ করা হয়। এর পর চুলের গোছা করে বিক্রি উপযোগি করে কুরিয়ার যোগে ঢাকার উত্তরায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে বায়াররা চায়না ও কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশের বায়াররাতা কিনে নিয়ে যায় । এ চুল দিয়ে বিদেশীরা চুলের ক্যাপ মাথার খোপাসহ হরেক রকমের জিনিস তৈরী করেন।

তারা জানান, নাইরকেলবাড়িয়া চুল প্রক্রিয়াজাতকরন কেন্দ্রে নিয়মিত আট জন শ্রমিক রয়েছে। তাদের বেতন ২০০০ থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসা ভালই চলছে বলে জানান তারা।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer