Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

যক্ষ্মর ঝুঁকিতে সিলেটের চা শিল্প শ্রমিকরা

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৪ মার্চ ২০১৮

আপডেট: ০৪:০৬, ২৪ মার্চ ২০১৮

প্রিন্ট:

যক্ষ্মর ঝুঁকিতে সিলেটের চা শিল্প শ্রমিকরা

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার : ‘নেতৃত্ব চাই যক্ষ্ম নির্মুলে, ইতিহাস গড়ি সবাই মিলে’ এই  প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শনিবার বিশ্ব যক্ষ্ম দিবস পালিত হলেও যক্ষ্ম রোগে অধিক ঝুঁকির মুখে রয়েছে সিলেট বিভাগ। বিশেষ করে এই রোগের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে চা শিল্প শ্রমিকরা।

দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লক্ষ্যের অধিক লোক যক্ষ্মরোগে আক্রান্ত হয় এবং এই রোগের কারণে প্রতি বছর বাংলদেশে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার লোকের মৃত্যু হয় বলে দাবি করছে যক্ষ্ম ও কুষ্ঠ চিকিৎসা নিয়ে কর্মরত সংস্থা। চিকিৎসকদের মতে বস্তির তুলনায় সরকারী চিকিৎসা সুবিধা বঞ্ছিত চা শ্রমিকদের নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে বন্দি থেকে ঘনবসতি ও নোংরা পরিবেশে বসবাস, দারিদ্রতা, পুষ্টিহীনতা এবং অসচেতনতার কারণে তুলনামূলক অধিক পরিমাণে যক্ষ্মসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে অন্যান্য বিভাগের তোলনায় সিলেট বিভাগ যক্ষ্ম রোগের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এর একটি অন্যতম কারন এ অঞ্চল চা বাগান দ্বারা বেষ্টিত। চা বগান গুলিতে টিবি রোগী সনাক্ত করণের রেটও অনেক বেশি। বিগত বছরে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারে ৪,৬৮৮ জন, হবিগঞ্জে ৪,৭৭৬ জন এবং সিলেট জেলায় ৫,২৩৯ জনসহ তিন জেলায় সব ধরণের য²ারোগী ১৪,৭০৩ জন। হিড বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ টিবি প্রকল্প চা বাগানে মাঠ কর্মীর মাধ্যমে রোগী খুঁজে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চা বাগানে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেকে অসচেতন যারা উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। চা বাগানের নির্দিষ্ট গন্ডির ভেতর থেকে এখনও অনেকেই বাইরে বের হতে পারছে না। ঘনবসতি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস, মাদকাসক্ত, পরিমিত খাবারের সমস্যা, কোন কোন ক্ষেত্রে গবাধি পশুর সাথে একই ঘরে বসবাস সবমিলিয়ে বস্তির তুলনায় চা শিল্পে কর্মরত নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মধ্যে যক্ষ্ম ও কুষ্ঠ রোগের প্রবণতা অনেক বেশি। তবে বস্তি এলাকায় এসব কিছু রোগী পাওয়া গেলেও চা বাগান এলাকায় ঘনবসতি ও স্যাৎ সেতে ঘরে বসবাস করার জন্য যক্ষ্ম ও কুষ্ঠ রোগের সংক্রামক বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

চ্যালেঞ্জ টিবি বাংলাদেশ (সিটিবি) প্রজেক্ট সূত্র জানায়, বিশ্বের যে ২২টি দেশের মধ্যে য²া রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক তার মধ্যে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ। প্রতি বছর দেশে প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার মানুষ য²া রোগে আক্রান্ত হন এবং এর মধ্যে প্রায় ৬৪ হাজার মানুষ মৃত্যু বরন করেন। জাতীয় য²া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর মতে সারাদেশে প্রতি লাখে যক্ষ্ম রোগে আক্রান্ত ২২৫ জন রোগী পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র সিলেটে এই হার তিনশ’ও এর বেশি।

চ্যালেঞ্জ টিবি বাংলাদেশ (সিটিবি) প্রজেক্টের মৌলভীবাজার জেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তাপস বাড়ৈ জানান, এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাসে সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের ১৬টি উপজেলায় ৫৯৪ জন য²া রোগী পাওয়া যায়। এই সময়ে ৪১টি চা বাগান, ৭টি পুঞ্জি এবং ১৩টি রাবার বাগানের ৩৫ হাজার ১৩৭টি পরিবারের ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩ জন রোগী চ্যালেঞ্জ টিবি কার্যক্রমের মাধ্যমে উপকার পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, যক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণে চা বাগানের কম্পাউন্ডার, ড্রেসার, মা, ম্যানেজমেন্ট, গ্রাম্য চিকিৎসকদের নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

শমশেরনগর চা বাগানের ইউপি সদস্য সীতারাম বীন বলেন, চা বাগানে মদের পাট্রায় গিয়ে মদ পান, স্থান সংকুলানের অভাবে গাদাগাদি আর নোংরা পরিবেশ বসবাস ও সচেতনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ফলে এসব রোগে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে চা শ্রমিকরা। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইয়াহিয়া এবং কমলগঞ্জে হিড বাংলাদেশের যক্ষ্ম, কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের কুষ্ঠ প্রকল্প ইনচার্জ পরেশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, বাড়ি ঘরের অবস্থা ও অসচেতনতা, স্বাস্থ্য সম্মত খাবারের অভাব, নোংরা পরিবেশ ও কলোনী সমূহে ঘনবসতি বেশী থাকায় চা বাগানগুলোতে য²া ও কুষ্ঠ রোগের প্রাদুর্ভাব তোলনামূলক বেশী। তারা আরও বলেন, চা বাগানের নির্দিষ্ট একটি গন্ডি ও প্রশাসনের বাইরে গিয়ে শ্রমিকরা চিকিৎসা সুবিধা নিতে গড়িমসি করছে। ফলে চা শ্রমিকদের মধ্যে রোগব্যাধী অধিকতর বেশী।

কমলগঞ্জের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. মোঃ ইয়াহিয়া বলেন, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চা বাগান সমুহে এসব রোগ সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে এবং সরকারি হাসপাতালে এসে রোগীরা চিকিৎসা গ্রহণ করছে বলে তিনি দাবি করেন।

চা বাগানসহ স্থানীয় চিকিৎসক ও সচেতন মহলের মতে অবহেলিত চা শ্রমিকদের এসব রোগব্যাধী নিয়ন্ত্রণে শুধু এনজিও’ দিয়েই সম্ভব নয়। সরকারি উদ্যোগেও দেশের নাগরিক হিসাবে চা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত এবং শিক্ষায় সচেতন হয়ে উঠলে রোগব্যাধি থেকে আরও মুক্ত হওয়া সম্ভব।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer