Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

মৌলভীবাজারে বন্যা দুর্গত লাখো মানুষ, ৫ জনের মৃত্যু

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ১৭ জুন ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

মৌলভীবাজারে বন্যা দুর্গত লাখো মানুষ, ৫ জনের মৃত্যু

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার : গত চারদিনের ভয়াবহ বন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, রাজনগর ও সর্বশেষ জেলা সদরে পানিবন্দি মানুষের চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি তিন লক্ষাধিক মানুষ ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কমলগঞ্জে বন্যার পানিতে শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার সকালে নতুন করে মনু নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করায় সিলেটের সঙ্গে মৌলভীবাজারের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে বন্যায় আটকা পড়া লোকদের উদ্ধার অভিযানে প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ি করছেন স্থানীয়রা। সর্বশেষ কয়েকটি স্থানে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনী।

সরেজমিন ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মনু ও ধলাই নদীর ২৩টি স্থান দিয়ে ভাঙন দেখা দেয়ায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। মনু ও ধলাই নদীর ভাঙ্গনে কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলায় প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। পানিবন্দি লোকদের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কিছুটা শুকনো খাবার বিতরণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয় এবং পানি থাকায় সবক’টি স্থানে খাবার পৌঁছানো যায়নি বলে পানিবন্দি লোকদের অভিযোগ রয়েছে।

উদ্ধার অভিযানেও প্রশাসনকে তারা ব্যর্থ দায়ী করছেন। ঘরের মধ্যেই কোমরপানি, হাঁটু পানি সহ গবাদি পশু নিয়ে অনেকেই দু’তিন দিন ধরে পানিবন্দি থাকলেও বেরিয়ে আসতে পারেননি। পানিবন্দি প্রায় তিন লাখ মানুষ ঈদের কোন ছোঁয়া পাননি। কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ার শরীফপুরে সহ কয়েকটি স্থানে প্রায় তিন শতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।

চারদিনের বন্যার প্রবল স্রোতে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুরে ছত্তার মিয়া ও তার ছোট ছেলে, আলীনগরে সেলিম মিয়া নামে এক পরিবহন শ্রমিক, শমশেরনগরে রমজান আলী নামে এক ব্যক্তি ও রহিমপুর ইউনিয়নে দেড় বছরের এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। বন্যায় শরীফপুর-শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতের কৈলাশহরে যাতায়াতের একমাত্র সড়কের কালভার্ট ধ্বসে পড়ায় ধেবে যাওয়ায় শরীফপুর ইউনিয়নের ১২ গ্রাম ও কৈলাশহরে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সড়কে পানি থাকায় শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে।

আউশক্ষেত, মৎস্য খামার তলিয়ে সবক’টি খামারের মাছ ভেসে গেছে। কমলগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ আশ্রয় কেন্দ্র সমুহে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যক্তি উদ্যোগ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে রান্না করে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চিরা, গুড়, চিনি, ম্যাচ, মোমবাতি সহ শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। তবে পানিবন্দি লোকদের চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

এদিকে চারদিনের বন্যায় বিভিন্ন বাড়িঘরে আটকা পড়ায় তাদের উদ্ধার করতে না পারায় শনিবার থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনী সদস্যরা। স্পিডবোর্ড নিয়ে বাড়িঘরে আটকা পড়া লোকদের উদ্ধার করতে দেখা যায়।

রোববার ভোরে মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট এলাকায় মনু নদীর ভাঙনে মৌলভীবাজার-সিলেট সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। শহর ও শহরতলীর রাস্তাঘাট বাসাবাড়িতে তিন থেকে চার ফুট পানি গড়াচ্ছে। ফলে নতুন করে আরও অর্ধশতাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এর আগে শনিবার রাজনগর এলাকার কদমহাটা এলাকায় মনুনদীর ভাঙনে মৌলভীবাজার-রাজনগর-সিলেট রোডে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে রোববার সকাল থেকে কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, পানিতে ডুবে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। পানিবন্দি লোকদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে এবং সেনাবাহিনী দ্বারা উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বক্ষনিক কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম জানান, বন্যায় আটকা পড়া লোকদের উদ্ধারে জেলার তিনটি উপজেলায় সেনাবাহিনী কাজ করছে। বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সবধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। শহরের বাহির থেকে নৌকা এনে শহরে পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারে কাজ চলছে। খোলা হয়েছে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র। উপজেলা সমুহেও ত্রাণ ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer