Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ঝালমুড়ি বিক্রিতা হাসিনা

তুহিন আহামেদ, গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:২১, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ঝালমুড়ি বিক্রিতা হাসিনা

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

গাজীপুর : প্রিন্টের পুরনো জীর্ণশীর্ণ জামা, পায়ে ছেড়া স্যান্ডেল। মাথায় ঝাঁকা আর হাতে একটি টোল। তবুও মুখে মিষ্টি হাসি। বয়স বিঁশ কি পচিশ। দেখলেই বোঝা যায় মনে অনেক কষ্ট কিন্তু আছে অনেক স্বপ্ন। অভাবের তাড়নায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন পথে পথে ঘুরে। সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে রাত, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে ঝালমুড়ি বিক্রি করে চলে তার সংসার।

নাম তার হাসিনা বেগম। গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায়। পিতার নাম মৃত ফজিন মিয়া। বর্তমানে থাকেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চান্দরা পল্লীবিদ্যুৎ জোড়াপাম্প এলাকায় নজরুল ইসলামের বাড়িতে। একমাত্র মেয়ে বিউটিকে নিয়েই তার সংসার। রাতে বেশীর ভাগ সময়ই মেয়েকে সাথে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করে থাকেন তিনি। আর এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার।

রোববার রাত সোয়া ৭টার দিকে উপজেলার চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় কথা হয় হাসিনা বেগমের সাথে। তিনি জানান, তারা তিন ভাই বোন। এর মধ্যে হাসিনা বেগম তিন নাম্বার। গত ২০০৯ সালে মানিকগঞ্জের আনিছ মিয়ার সাথে পরিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের ঘরে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। নাম তার বিউটি। বিউটি এখন তার মায়ের সাথে থাকে এবং রাতের বেলায় ঝালমুড়ি বিক্রি করে থাকে।

বিয়ের ৫ বছরের মাথায় স্বামী আনিছ মিয়া কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখোঁজি করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখনো সে নিরুদ্দেশ। বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে সেটাও কেউ জানে না। তবুও আসায় পথ চেয়ে বসে থাকি, যদি কোনদিন ফিরে আসে।

হাসিনা বেগম আরো জানান, জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ নিতে যেয়েও কাজ নিতে পারেনি। কারণ তিনি লেখাপড়া জানেনা। একপর্যায়ে নিরুপায় হয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি শুরু করেন তিনি। একজন নারী হয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করা প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হতো। কিন্তু অনেক দিনতো হলো এখন আর সমস্যা হয়না।

বাসায় আত্মীয় স্বজন কেউ না থাকায় রাতের বেলায় মেয়ে বিউটি আক্তারকে সাথে নিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে হয়। ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই মা-মেয়ের সংসার চলে যায়। মাঝে মধ্যে বিক্রি কম থাকার কারণে সমস্যা হয়। অনেক সময় কষ্ট করে দিনাতিপাত করতে হয়। তবে এখন মোটামোটি চলে যায়।

বর্তমান সরকার নারীদের যে সুযোগ সুবিধা দিয়েছে তার কোনটিই তিনি পাননি বলে আবেগ আপ্লুত কন্ঠে জানান তিনি। ঝালমুড়ি বিক্রি করে প্রতিদিন তার ২শ থেকে ৩শ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে ঘর ভাড়া, নিজের ও মেয়ের খরচ চলে যায়। ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা আয় হয় তা নিজের সংসারই ঠিক মত চলে না বিধায় একমাত্র মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারছে না।

হাসিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আর্থিক অস্বচ্ছলতা আর নিরক্ষরতা আমাকে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে বাধ্য করেছে। এছাড়া মেয়েও বড় হচ্ছে। কিন্তু আর্থিক অনটনের অভাবে মেয়েকে কোন স্কুলে ভর্তি করাতে পারছিনা। লেখাপড়া কিছুটাও যদি জানতাম তাহলে হয়তো আজ অন্তত ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতে হতো না। তবুও মেয়ের জন্যই বেঁচে আছি।’

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer