ঢাকা : মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে আনা এটিএম আজহারুল ইসলাম ও সৈয়দ মো. কায়সারের আপিল শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১০ অক্টোবর।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেয়। এ বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি মো. সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
এছাড়াও আদেশে বলা হয়, মামলার পক্ষগুলোকে ২৪ অগাস্টের মধ্যে আপিলের সার সংক্ষেপ জমা দিতে হবে। ধার্য তারিখ ১০ অক্টোবর থেকে বিরতিহীনভাবে শুনানি চলবে।
রোববার রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে আজহারের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র এডভোকেট জয়নুল আবেদীন এবং কায়সারের এডভোকেট এস এম শাহজাহান।
সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় আজ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চের শুনানির কার্যতালিকার ২ ও ৩ নং ক্রমিকে মামলা দুটি ছিল।
২ নং ক্রমিকে ছিল জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম ও ৩ নং ক্রমিকে জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সারের আপিল মামলা। সে অনুয়ায়ি মামলা দুটি আদালতে উত্থাপিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণা করেছিল ট্রাইব্যুনাল। এটি ট্রাইব্যুনালের ১৫ তম রায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটি ষষ্ঠ রায়।
রায়ে বলা হয়, আসামি আজহারের বিরুদ্ধে আনীত ৬টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে তাকে ২৫ বছরের কারাদন্ড ও ৬ নং অভিযোগে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। এক নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে ওই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (খালাস) দেয়া হয়। এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে রাজধানীর মগবাজারস্থ নিজ বাসা থেকে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট আজহারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। এটি ট্রাইব্যুনালের ১৪ তম রায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটি ৫ম রায়। কায়সারকে ২০১৩ সালের ২১ মে গ্রেফতার করা হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিচার চলাকালে পুরো সময় তিনি শর্তসাপেক্ষে জামিনে ছিলেন।
এ দুই আসামীই ট্রাইব্যুনালের দন্ডের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন।মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালে এর পর্যন্ত ২৮ মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়। একটি মামলা রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল ও আপিল রায়ের রিভিউতে সাতটি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি রায়ের পর জামায়াতের প্রাক্তন আমীর মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, প্রাক্তন দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের প্রাক্তন নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপিল ও আপিল রায়ের রিভিউতেও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এর আগে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দিয়েছিল।