Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাছে বাড়ে বুদ্ধি

ফয়জুন্নেসা মণি

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

মাছে বাড়ে বুদ্ধি

ঢাকা : কথায় আছে, ‘ভাতে মাছে বাঙালী’। বাংলায়- মাছ, সংস্কৃতে- মৎস, ইংরেজিতে- ফিস  নামে এ অতি পরিচিত জলজ মেরুদন্ডী প্রাণীটির উৎপত্তি প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে। বিজ্ঞানীদের মতে মাছই প্রথম জলজ মেররুদন্ডী প্রাণী।

প্রাণীজ আমিষের প্রধান উৎস এ মৎস সম্পদ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় ও পুষ্টিকরণে আমিষের বিকল্প নেই। আমিষের প্রধানতম উৎস হলো মাছ। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রাণীজ আমিষের মধ্যে মাছ থেকে পাওয়া যায় ৬৩ ভাগ। আমাদের দৈনিক মাথাপিছু কমপক্ষে ৩৫ গ্রাম মাছের প্রয়োজন। কিন্তুু সরবরাহের পরিমাণ দৈনিক মাথাপছু ২৮ গ্রাম যা চাহিদার তুলনায় কম।

মাছ শিশুদের বুদ্ধি বাড়ে : পেনসিলভেনিয়ার একটি গবেষণা দল চীনের ৫০০ শিশুর ওপর এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণায় অংশ নেওয়া শিশুদের বয়স ছিল ৯ থেকে এগারো বছর। তাদের প্রত্যেককে প্রশ্ন করা হয়েছিল তারা মাছ খায় কীনা, খেলেও কতদিন পর পর খায়।

এরপর তাদের আইকিউ টেস্ট নেওয়া হয়। ফলাফলে দেখা যায়, যেসব শিশু নিয়মিত মাছ খায় (সপ্তাহে অন্তত একবার) তারা আইকিউ টেস্টে অন্যদের থেকে গড়ে ৪.৮ পয়েন্ট বেশি পেয়েছে। তবে তারা ঠিক কী ধরনের মাছ খায় সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি। পাশাপাশি ঐসব শিশুর বাবা-মায়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল-তাদের সন্তানদের ঘুম কেমন হয়? তাদের উত্তর থেকে গবেষকরা দেখতে পান, যেসব শিশু নিয়মিত মাছ খায় তাদের ঘুমও ভালো হয়। গবেষকরা বলেন, মাছে শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি এসিড ওমেগা থ্রি এস থাকে। স্যামন, সার্ডিন, টুনা জাতীয় মাছে এই ধরনের ফ্যাটি এসিড থাকে। এ কারণে যেসব শিশু নিয়মিত মাছ খায় তাদের বুদ্ধির বিকাশ ভালো হয়, ঘুমও ভালো হয়। তারপরও সত্যি হলো-শিশুরা মাংস খেতে পছন্দ করে। তারা সহজে মাছ খেতে চায় না। সায়েন্টিফিক রিপোর্টের এক জার্নালের বলা হয়েছে, যেসব শিশু সপ্তাহে অন্তত একদিন মাছ খায় তাদের ঘুম ভালো হয়, আইকিউ টেস্টেও ভালো করে।

জানলে অবাক হবেন- পৃথিবীতে প্রায় ২১ হাজার ৭ শত প্রজাতির মাছ আছে। এর মধ্যে লোনাপানির মাছ ১৩ হাজার ৩ শত এবং মিঠাপানির মাছ ৮ হাজার ৮ শত। বাংলাদেশে বহুপ্রজাতির মাছ এখন বিপন্ন হতে চলেছে। এদের মধ্যে- মহাশোল, নান্দিনা, চেওয়া, বাটা, সরপুঁটি, কৈ, মাগুর, পাবদা, খলিশা, মাইড়, শিং, বানি, গনিয়া, ভাঙ্গনা, গুলশা প্রভৃতি। বর্তমানে আভ্যন্তরীণ মৎস উৎপাদনে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার পরপরই সপ্তম অবস্থানে বাংলাদেশ ।

দেশে মোট বদ্ধ জলাশয়ের পরিমাণ ১২ হাজার ৩৪১ হেক্টর। তার মধ্যে ২৬ হাজার ৫৫০ হেক্টর পুকুর, জলাশয়, ১৮৮ হেক্টর বাঁওড় এবং ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৩৫৩ হেক্টর চিংড়ি খামার। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০০ টি নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়। দেশে মৎস উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১৩-১৬ ভাগ। দেশের রপ্তানি আয়ে মৎস সম্পদের অবদান প্রায় ৫.৭১ শতাংশ।

বাংলাদেশের ইলিশের প্রধান প্রজননক্ষেত্র মেঘনা নদীর তলচর, মনপুরাদ্বীপ, মৌলভীরচর ও কালিরচর। মৎস্য খাতে প্রায় ২০ লাখ লোকের পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ লক্ষ লোক মাছ চাষে, বিপণন, প্যাকিং ও প্রক্রিয়াজাতকরণে।

মৎস বিষয়ক আইন : * বাংলাদেশের মৎস আইনে ২৩ সেন্টিমিটারের নিচে (৯ ইঞ্চি) রুই বা কার্প জাতীয় মাছ ধরা নিষেধ। * মৎস আইনে ইলিশের জাটকা (২৩ সে.মি.)-এর নিচে ধরা, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। * ৪.৫ সে.মি.-এর কম ফাঁস বিশিষ্ট কারেন্টজাল, মশারি দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। * জাটকা ধরা, ক্রয়-বিক্রয় ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরার জন্য প্রথমভাবে আইন ভঙ্গকারী ৬ মাস জেল বা ৫০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হতে পারে। দ্বিতীয়বার আইন ভঙ্গকারী একবছর জেল অথবা ১০০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।

মৎস সম্পদ বিপুল সম্ভাবনার একটি খাত। আমিষ, পুষ্টি-র যোগান, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি মৎস সম্পদ ভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নে রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। দেশের সচেতন মানুষ, মৎসজীবি খামার, মালিক, উদ্যোক্তা, বেকার যুবক-যুব মহিলা, প্রান্তিক ও দরিদ্র মৎস চাষি, পোনা আহরণকারী এবং জেলেসহ সবার মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মৎস সম্পদকে রক্ষা ও ব্যপ্তিবৃদ্ধি, জীবন-জীবিকা এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক আয় নিশ্চিত করা সম্ভব।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer